মুজিবুর রহমান রঞ্জু,কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজারঃ সামাজিক সাংগঠনিক কাজে সফল তরুণ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের চা শ্রমিক সন্তান লিটন গঞ্জু। মাত্র ২৩ বছর বয়সে সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে সে। ইতিমধ্যে নিজ দক্ষতায় সে প্রতিষ্ঠিতা ও পরিচালক পাবলিক লাইব্রেরী পাত্রখোলা, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ট্রেইলার প্রশিক্ষণ সেন্টার পাত্রখোলাএর দায়িত্ব পালন করছে। এমনকি প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গঞ্জু সমাজ সেবক ফোরামের দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ গেজেটে অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলো ও চা শ্রমিক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের তরুণ ‘লিটন গঞ্জু’।
লিটন জানায়, ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি চা শ্রমিক পরিবারে জন্ম হয় লিটন গঞ্জুর। কিন্তু অভাবের সংসার স্বপ্ন দেখা যায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে, তার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করবে। কিন্তু পরিবারে ভাই বোনরা সবাই ছিলো ছোট্ট, একমাত্র রোজগারি ছিলেন শুধু চা শ্রমিক মা ও বাবা। সে সময় চা বাগানে টানা ৮ ঘন্টা কাজ শেষে মাত্র ২৮ টাকা পেতেন, যা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চালানো যেতো না। ফলে পড়াশোনা কোথায় থেকে করাবেন মা বাবারা। সেই স্বপ্নটা ভেংগে যায় তার।
ধীরে ধীরে লিটন গঞ্জু বুঝতে পারে পরিবারের পক্ষে তাদের পড়াশোনা চালানো সম্ভব না। আর তখন চা বাগানগুলোত তেমন কোন সুযোগ সুবিধা ছিলো না। ভেঙে যায় ২০০৯ সালে পুলিশের চাকুরির স্বপ্ন। ভেঙে গেলো তাতে কি হলো ! তারপরও তার ইচ্ছে ছিল এমন কিছু কাজ করার যে কাজে অসহায় বঞ্চিত মানুষের কাজে লাগে, সে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোঠাতে পারে, সে পড়াশোনা ছেড়ে বেকার হয়ে পড়ে ছিল। সে সময় তার তেমন বয়স ছিলো না যে, সে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করবে।
বেকার থাকায় তার মনে কষ্ট জাগতো যে, আসলে গরিবের ঘরে জন্ম নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখা ভুল, তারপরেও সে ভেঙে পড়েনি, কিচ্ছু দিন পরে সে সিলেট একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরি সুযোগ পেল। ২০১৩ সালে যোগ দেয় চাকুরিতে সে। সেখানে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে জড়িত হয়, বিভিন্ন যায়গায় গিয়ে সামাজিক কাজ করতো, আর অবসর সময়ে বই পড়তো আর লিখতো মনের ইচ্ছা গুলো। অবশেষে তার স্বপ্ন পূর্ণ করার জন্য ২০১৬ সালে চাকুরি ছেড়ে চলে আসে তার বাড়ি পাত্রখোলা চা বাগানে। কারণ, চাকু
রিতে থেকে সাংগঠনিক কাজ করতে সমস্যা হতো সময় দিতে পারতো না তাই চা বাগানে গিয়ে চা শ্রমিকের কাজ নেয় সে। চা বাগানে থেকেই সহজ হতো সামাজিক সাংগঠনিক কাজ করার তারপরেও তার স্বপ্নের প্রথম কাজ শুরু করে। নিজে একটি সংগঠন তৈরি করে যে টার নাম রাখে “বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গঞ্জু সমাজ সেবক ফোরাম”। প্রথমে কাজ শুরু করে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা বাগান গুলোতে। জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গঞ্জু সম্প্রদায়কে নিয়ে জেলা কমিটি গঠন করে সে। উপজেলা কমিটি তারপরে শাখা কমিটি গঠন করেন, পরর্বতীতে সিলেট জেলা ও হবিগঞ্জ জেলাকে নিয়ে কাজ করেন। এখন বর্তমানে শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গঞ্জু সম্প্রদায় না সকল সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করছে।
তিনটি জেলাতে বাল্যবিবাহ বন্ধ করণ, মাদক মুক্ত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক শিক্ষা নিয়ে পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য দরজির প্রশিক্ষণ সেন্টার করা, শিক্ষার মাণ বাড়ানোর ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপন করা। তা ছাড়া সামাজিক কর্মকা- সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন সেমিনার করে। দেশের গুনি লোকেদের আমন্ত্রণ জানায় এসব সেমিনারে। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, এমন কি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল-কে প্রধান অতিথি করে আমন্ত্রণ করে সম্মান জানায় লিটন গঞ্জু।
বর্তমানে লিটন গঞ্জু তার জন্মস্থান পাত্রখোলা চা বাগানে বেকার অসহায় বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য দরজির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে। নারীদের দরজির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপন করেছেন, তার ইচ্ছে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করার ও একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জন্য সাংস্কৃতিক একাডেমি নির্মাণ করার। সাংগঠনিক কাজ করার একটি অফিস নির্মাণ করা। কিন্তু, ২০১৯ সালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও সরকারের কাছে থেকে কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ার কারণে তার সংগঠন “বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গঞ্জু সমাজ সেবক ফোরাম” এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন