ডেস্ক রিপোর্টঃ
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোয় গণপরিবহনেও ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটি বলছে, এ বর্ধিত ভাড়া সিএনজিচালিত গণপরিবহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যদিও মাঠ পর্যায়ে তা কার্যকর হচ্ছে না। গত দুদিন ডিজেলচালিত গণপরিবহনের পাশাপাশি সিএনজিচালিত গণপরিবহনেও যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের।
গত রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে ডিজেলচালিত গণপরিবহনে ভাড়া সমন্বয়ের পর এ বিষয়ে এক প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, সিএনজিচালিত গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে কি না, এ বিষয়টি বিআরটিএ মনিটরিং করবে।
তবে বিআরটিএর অন্য এক সূত্র বলছে, সিএনজিচালিত গাড়িরও খরচ বেড়েছে। তাদের শুধু সিএনজির দাম বাড়েনি, বাকি সব খরচই বেড়েছে। এছাড়া বর্তমানে সিএনজিচালিত গাড়ির সংখ্যা বড়জোর ১ থেকে ২ শতাংশ হতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, সড়কে এখন মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ গাড়ি সিএনজিচালিত। বেশিরভাগ গাড়িই এখন তেলে কনভার্ট হচ্ছে। তবে কত সংখ্যক গাড়ি তেলে আর কতগুলো গ্যাসে চলে, এর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণার পর বস্তুত সড়কে সব গাড়িই যাত্রীদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। এমনকি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে গত দুদিন বিআরটিএ তদারকি করছে বলে দাবি করলেও প্রয়োজনের তুলনায় সে মনিটরিং অনেক কম। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া সমন্বয়ের ঘোষণার পরই বাসগুলো যাচ্ছেতাই স্টাইলে পকেট কাটছে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সারওয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের মনিটরিং টিম গতকাল (৮ নভেম্বর) থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কাজ করছে। এর বাইরে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনও তদারকি করছে।
এদিন বিআরটিএ ১৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২২০টি গাড়ি মনিটরিং করেছে। এর মধ্যে ৫৯টি সিএনজিচালিত পরিবহন ছিল। ডিজেলচালিত ৩৮টি গাড়ি ও ২৯টি সিএনজিচালিত গাড়িকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। ওইদিন মোট আদায় করা জরিমানার পরিমাণ এক লাখ ৫৪ হাজার ১০০ টাকা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএর একজন পদস্থ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আসলে শুধু ডিজেলের দাম বাড়ানোর জন্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তা নয়। ডিজেল বড় একটা কারণ। গত ৬-৭ বছরে পরিবহনে বানাবিধ ব্যয় বাড়লেও ভাড়া বাড়ানো হয়নি। সড়ক পরিবহন মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সব বিষয় বিশ্লেষণ করেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে খরচ কিন্তু সিএনজিচালিত গাড়িরও বেড়েছে। তাদের শুধু সিএনজির দাম বাড়েনি, বাকি সব খরচই বেড়েছে।
রোববার (৭ নভেম্বর) ভাড়া সমন্বয়ের ঘোষণার পর এরই মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন মালিকসহ সবাই নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি চালাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপরও অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও নির্দেশ দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।
এনিয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রোববার দুপুরে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর বিকেলেই গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। একইসঙ্গে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চিত্র দেখা যায় সর্বত্র।
মন্তব্য করুন