হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে জনবল সংকট
দ্যা সিলেট পোস্ট
প্রকাশের সময় : মে ১২, ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন /
০
নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস হবিগঞ্জ জেলায়। আর এইসব মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র শেষ আশ্রয়স্থল ২৫০ শয্যা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল। দাঙ্গা প্রবণ এই জেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। এতে হতাহত হয় বহু মানুষ। তবে হতাহতসহ জেলার গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে এসে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিলে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। যে কারণে সিলেট কিংবা ঢাকায় যেতে হয় রোগীদের। এছাড়াও গেল মাসখানেক ধরে হাসপাতালটিতে রয়েছে চরম ঔষধ সংকট। যে কারণে ঔষধ ঔষধ নিতে আসা রোগীদের ফিরতে হচ্ছে খালিহাতে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- এসব সমস্যা সামাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশা তাদের।
সরেজমিনে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়- হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট পরিমান সিটের ছেয়ে অধিক সংখ্যক রোগী ভর্তি রয়েছে। কোন কোন রোগী আবার সিট না পেয়ে হাসপাতালে মেঝেতে পড়েই নিচ্ছেন চিকিৎসা। এরমধে সবছেয়ে করুণ দশা শিশু ওয়ার্ডে। প্রায় সবসময়ই এই ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট পরিমান সিটের ছেয়ে ২ গুণেরও অধিক রোগী থাকে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগের খাতা তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- হাসপাতালটিতে প্রতিদিন অন্তত ৩ থেকে ৪শত রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার ভর্তি হয় প্রায় অর্ধশতাধিকের মতো। এছাড়াও হাসপাতালে আউডডোরো আরো প্রায় ৩ থেকে ৪শ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। তবে এখন হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকায় এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। রোগ নির্ণয় না পারাসহ সামান্য একটু বড় সমস্যা হলেই রোগীদের সিলেট কিংবা ঢাকায় রেফার্ড করে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
২৫০ শয্যা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল থেকে দেয়া তথ্যমতে- হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৫৭টি চিকিৎসক/কর্মকর্তার পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৭ জন। কাগজে কলমে ২৭ জন হলে প্রকৃত সংখ্যা আরো কম। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক ছুটিতে থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন ডাঃ মেহেদী হাসান। এছাড়াও চরম এই চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও মাত্র ৩০ জনের বেশি রোগী দেখেন না হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ। রীতিমতো হাসপাতালের ২১৪ নম্বর কক্ষে ডাঃ অনুজ দাশের চেম্বারের দরজায় “৩০ (ত্রিশ) জনের বেশি রোগী দেখা হয় না” লিখে রাখতে দেখা যায়। এ ঘটনা হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ওই চিকিৎসকের ভাষ্য হাসপাতালে সার্জারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ৪টি পদের বিপরীতে একমাত্র তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। বাকী ৩টি পদ শূণ্য বিধায় রোগীসেবায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে সার্জারী ওয়ার্ড এবং অপারেশন থিয়েটারে একা কাজ করতে হয় ওই চিকিৎসককে। এ অবস্থায় বহির্বিভাগে রোগী দেখার সুযোগ কম তার।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি পদে ১ জন, , সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট ইউরোলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট নেফরোলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট অর্থো সার্জারি ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট শিশু ১ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন পদে ১ জনের পদ খালি রয়েছে। জুনিয়র সিনিয়র কনসালটেন্ট চুক্ষ, রেডিওলজিস্ট, অর্থো সার্জারি, শিশু, প্যাথলজি, মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, মানসিক, গ্যাষ্ট্রোলজি পদে ১টি করে পদ খালি রয়েছে। এ্যানেসথেটিষ্ট পদে ৪টির মধ্যে ১টি খালি রয়েছে, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজিস্ট ২টি, রেজিস্টার ১টি, মেডিকেল অফিসার রক্ত ১টি ও মেডিকেল অফিসার ১৪টির মধ্যে ৫টি পদ খালি রয়েছে।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার বলেন- চিকিৎসক সংকটসহ সকল সংকট সমাধানে আমরা কাজ করছি। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন- আমরা যারাই আছি আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে ঔষধ সংকট সহসাই কাটছে না বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :