“সংসদে এমপি’ মিসবার দাবী ফসল না উঠা পর্যন্ত পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব সহ সবাই সুনামগঞ্জে অবস্থান করার দাবি”
দ্যা সিলেট পোস্ট
প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৫, ২০২২, ১১:৫৩ অপরাহ্ন /
০
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ।
সুনামগঞ্জে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হাওরের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গত তিনদিনের উজানের ঢলে (ভারতের মেঘালয়— চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পানিতে) কয়েকটি ছোট হাওর ডুবেছে। হাওরগুলো হচ্ছে, তাহিরপুরের টাঙ্গুয়া, সুনামগঞ্জ সদরের ছোট কানলা এবং ছাতকের গুয়া পাকুয়া, শাল্লার বাঘার হাওর ও কলার হাওর।
যাদুকাটা, সুরমা, বৌলাই, কুশিয়ারা, রক্তি, কালনী নদীর পানি বাড়ছে। সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়েই চলেছে। ফলে শনি হাওর, মাটিয়ান হাওর, পাকনা হাওর, হালির হাওর, সোনামোড়ল, শালদীঘা বোয়ালিয়াসহ অনেক হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারগুলোতে পানির চাপ বাড়ছে। পানি বাড়ার সংগে সংগে বাঁধে দেয়া হচ্ছে মাটিভর্তি বস্তা বাঁশ। প্রায় প্রতিটি হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে স্থানীয় কৃষকরা স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন। বিভিন্ন হাওর ঘুরে এমনচিত্র দেখা যায়।
চৈত্র মাসেই এ যেন বর্ষা কাল হয়ে গেল। দুই দিন পূর্বে যে হাওরে ছিল কাঁচা সবুজ ধান ক্ষেতের সমারোহ, আজ সেখানে শুধু পানি আর পানি। কৃষকরা জানান শনিবার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়া হাওরের নজরখালীর বেড়ি বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩ হাজার একর জমির ফসল ডুবে গেছে। তবে প্রশাসন বলেছে, ২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৮২টি গ্রামের মানুষের ফসল ডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা এতো পানি দেখে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
শাল্লায় উজানের পানি নেমে এসে দাড়াইন নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ৫ শত কেয়ার বোরো ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব, ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস, কৃষি অফিসের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু পানির প্রবল স্রোতের কারণে বাঁধ রক্ষার শেষ চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি। চোখের সামনে তাদের সারা বছরের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে কৃষকরা নির্বাক। এই হাওরে ৮০ ভাগ জমি ছিল দামপুর গ্রামবাসীর বাকী ২০ ভাগ খল্লি গ্রামের।
সোমবার ও দাড়াইন নদীতে প্রায় ৪ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২ /৩ দিন এই হারে পানি বৃদ্ধি হলে উপজেলার ছোট ছোট আরো বেশ কয়েকটি হাওর তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে বর্তমানে বিপদসীমা থেকে ২১ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।
জানা গেছে, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের একমাত্র ফসল বোরো ধান। কারণ এ জেলার ছোট-বড় ৯২টি হাওর বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানির নিচে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এ বছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রতি বছরই আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় হাওরে নির্মাণ করা হয় বাঁধ।

ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। বোর্ড আগে ঠিকাদারী প্রতার মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করতো। তবে ২০১৭ সালের ফসলহানির পর সমালোচনার মুখে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাঁধের জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা পাউবো কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয় আলাদা আলাদা পিআইসি। তবে নির্মাণকাজে পরিবর্তন আনা হলেও বন্ধ হয়নি অনিয়ম আর লুটপাটের অভিযোগ। এ কারণে বাঁধের উপর আস্থা নেই কৃষকদের। অপরদিকে বাধঁ নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই।
পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষে। তাতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রতি ফসলরক্ষা বাঁধ তদারকির অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা সুনামগঞ্জের বোরো ফসলের হাওর নিয়ে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে সোমবার সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ হাওরের ফসল না উঠা পর্যন্ত পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব সহ সবাই সুনামগঞ্জে অবস্থান করার দাবি জানিয়েছেন সংসদে।
সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ হাওর এলাকা এর একমাত্র ফসল হচ্ছে বোর ফসল। ১০-১৫ দিন সময় প্রয়োজন আমাদের বোর ফসলটা ঘরে উঠার। কিন্তু এই মুহুর্তে আমাদের সুনামগঞ্জের বোর ফসল হুমকির মূখে রয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। কখন কি হয় বলা যায় না। এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বাঁধে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা করতে হলে ব্যাপকভাবে নদী খনন করতে হবে। হাওরের চারপাশে প্রবাহিত নদীগুলো নাব্যতা ও পানি ধারন ক্ষমতা নেই। তাই ঢলের পানিতে নদীর দুই কুল উপচে যায়। জরুরি ভাবে নদীগুলো খনন করা দরকার।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহরুল ইসলাম বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি বিভিন্ন নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানির চাপ বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। প্রতিটি বাঁধেই সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন এলাকাবাসী সবাই বাঁধে কাজ করছেন। যে বাঁধে যে রকম সমস্যা হচ্ছে সেখানে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ফসল রক্ষাবাঁধ রক্ষা করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে আর ১০ দিন পরে হাওরে ধান কাটা শুরু হবে। বাঁধের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাশ, বস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :