সিলেট প্রতিনিধিঃ গার্মেন্টস পণ্য চোর চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম। টানা দুইদিনের অভিযানে ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে তাদের আটক করা হয়। আজ ২০ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাজধানীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ।
জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২ পিস তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। ওই ঘটনায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা এবং কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সাঈদ, রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০৫ পিস তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতার সিলেটি সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪ টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে তিনি ৬ টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। চোর চক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ হাজার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।
আরো পড়ুনঃ সিলেটের মেয়ে তোশিবা এখন বিখ্যাত
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, সিলেটি সাঈদের স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে বসবাস করেন। তার মালিকানাধীন বিশাল অট্টালিকা রয়েছে মৌলভীবাজারে। তার রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্টস পণ্য শিপমেন্টের কাজে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে যুক্ত। নিজের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করে ও এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন সাঈদ।
চোরাই গার্মেন্টস পণ্য কোথায় বিক্রি ও কারা ক্রয় করছে জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তদন্তের স্বার্থে বলছি না। দেশের ছোট ছোট কিছু বাইং হাউজে যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য। আর ওই সব পণ্য ছোট বাইং হাউজগুলো বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য।
এত মামলা নিয়ে কীভাবে সিলেটি সাঈদ গার্মেন্ট পণ্য চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন। সর্বশেষ একটি মামলায় তিনি ৮ মাস কারাভোগ করেন। তবে বেরিয়েই আবার জড়িয়ে পড়েন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই কারবারে।
সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রটি। বিশ্বে লিডিং রফতানিকারক বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে চোর চক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও দুটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার এবং গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ কে এম হাফিজ আক্তার ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, গত ১১ মে জয়ন্তি নিট ওয়্যার লিমিটেড তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এজন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়।
ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে ইমরান মোবারক ও ইব্রাহিম নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক ১৪৩১ কার্টুনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস বিদেশে রফতানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনাকালে ৫০০০ পিস মাল কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরের উত্তরা এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ আল-আমিন ও দুলালকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে পুরো চক্রের মূলহোতা মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদকে গ্রেফতার করা হয়।
মন্তব্য করুন