মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
“শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের দূর্বল প্রতিরক্ষা পয়েন্ট।”-ইমরান খান
“চীন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে শিলিগুড়ি করিডোর যা চিকেন নেক হিসেবে পরিচিত, সেই চিকেন নেক (ঘাড়) মটকে দিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় ভারতের সাতটি রাজ্যকে শীঘ্রই বিচ্ছিন্ন করতে চলেছে।”-ভারতীয় মিডিয়া।
“আওয়ামীলীগ সরকার ভারতকে অনেক দিয়েছে। ভারত তা আজীবন মনে রাখবে।” -শেখ হাসিনা। কিন্তু এখন ভারতের ঘুম হারাম করে দেওয়া হচ্ছে না তো? সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, সবচেয়ে জঘন্য শত্রুতে পরিণত হয়ে যায়-যখন সেই প্রিয় মানুষটি দেখতে পায় যে, তার প্রিয় মানুষটি সবচেয়ে জঘন্য কাজটি করে বসে। তখন অনেকে নিজের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলে হলেও প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। এরকম হলে ভারত প্রতিশোধ নিবেই। যুদ্ধ তথা আক্রমণ শুরু হয়ে যাবে। ভারতের জায়গায় আমি কিংবা আপনি হলে আমরাও কি তাই করতাম না?
ভারত বাংলাদেশের প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন, সীমান্ত হত্যাসহ বাংলাদেশকে তাদের করদ রাজ্য মনে করে।”- অধিকাংশ জনগণ, বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে অতীত থেকে এই পর্যন্ত যতো সরকারই এসেছে দেশে জনসমর্থন কমতে থাকাসহ বিরোধী দল আন্দোলন করতে থাকলে দূর্বল হওয়ার প্রেক্ষিতে টিকে থাকার জন্য ও বিদেশের কূটনৈতিক সমর্থন পেতে ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভারত বৃহৎ রাষ্ট্র হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভারতকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইন্ধিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়ে অতীত থেকে এই পর্যন্ত সবসময় যদি সত্যিকার জনগণের সরকার বাংলাদেশে থাকতো-তাহলে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোন সরকারই নতজানু পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করতো না।
ভারতের মানুষ ও বিএসএফ এর মধ্যে ভালো যেমন রয়েছে -খারাপও তেমন রয়েছে -খারাপ গুলোর হিংসাত্মক ও বিধ্বংসী আচরণের কোন প্রতিবাদ না করে বরং ভারতকে পক্ষে রাখার জন্য আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ভারতের হিংসাত্মক আচরণ এর সাফাই গাওয়াসহ দূর্বল সরকারগুলো নতজানু পররাষ্ট্রনীতির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। জনগণের সরকার হলে তা কক্ষনো করতো না।
পরিবারের মধ্যে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া বাধলে এবং কোন ভাই বাইরের কাউকে ডেকে আনলে-বাইরের সেই ব্যক্তি কোন সুবিধা নিয়ে থাকলে-কে বেশী দায়ী? ঝগড়ারত পরিবারের ভাইয়েরা নাকি বাইরের সেই লোকটি?
তদ্রূপ আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরষ্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে-তাতে ভারতকে সম্পৃক্ত করার প্রেক্ষিতে ভারত তারই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে সুবিধা আদায় করতে থাকলে তারজন্য ভারতের চেয়ে আমরা বাংলাদেশীরাই বেশী দায়ী নয় কি?
চীনের দিকে আর বাড়তি ঝুঁকা আওয়ামীলীগ সরকারের মোটেও উচিত হবে না। সেটা হলে ভারতের সেভেন সিস্টার খুবই সহজে স্বাধীন হয়ে ভারতের অখন্ডতা থাকবে না। এতে স্বাভাবিকভাবে ভারত চরম ভাবে বাংলাদেশের উপর ক্ষেপে যাবে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা চরমভাবে নষ্ট হবে। ইতোমধ্যে ক্ষেপা আমেরিকা আরো মারাত্মকভাবে ক্ষেপে যাবে- কারণ চীন আমেরিকার একক পরাশক্তিকে চ্যালেন্জ করার জন্য জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার সাথে ন্যাটো, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া (চীন ব্লকের কিছু দেশ ছাড়া) বলতে গেলে তামাম পৃথিবী আমেরিকার পক্ষে। বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি প্রবাসী আমেরিকার বলয়ের দেশগুলোতেই কর্মরত। ব্যবসা বাণিজ্য, উচ্চ শিক্ষা বলতে গেলে বাংলাদেশের প্রায় সবকিছুই আমেরিকা ও তার বলয়ের দেশগুলোর সাথে। চীনের দিকে বাংলাদেশ আর বাড়তি আগ্রহ দেখালে জাতিসংঘের মাধ্যমে আমেরিকা নিশ্চিত অবরোধ দিবেই দিবে। পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে ছিটকে পড়বে।
জাহাজ ডুবে যাওয়ার সময় ডুবন্ত মানুষ যেমন জাহাজ রক্ষার পরিবর্তে খড়কুটো ধরে হলেও নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করে তদ্রূপ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের পরিবর্তে নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে যাবে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার কারণে – অকারণে, সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনভাবে যেসব দলের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে-নির্বাচন ফেয়ার করলে সেসব দলই ক্ষমতায় আসবে এবং তারা পাল্টা প্রতিশোধ নিশ্চিত নিবে-এটা বুঝতে পেরে দেশের পরিবর্তে নিজের সেফটি ফার্স্ট হিসেবে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে বলে মনে হচ্ছে। তখন আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ চীন, আমেরিকা ও ভারতের battle field এ পরিণত হয়ে আফগানিস্তান এর মতো ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে। সেরকম হলে পুরো দেশবাসী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ উক্ত তিন রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখুক কিন্তু তিন রাষ্ট্রের কোন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার হুমকি হয়ে যাতে কোন অবস্থাতেই না দাঁড়ায় সেটা নিশ্চিত করাটাই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের সকল জনগণের জন্য চ্যালেন্জ।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
সদস্য, কেন্দ্রীয় ফোরাম
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি
মন্তব্য করুন