-মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
সাবেক শিক্ষক, নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়।
শতাব্দী পেরিয়ে আরো বিশ বছর, ১২০ বছর পূর্বে বাবু মোক্ষদা রঞ্জন রায় কর্তৃক ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়- যা চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় অবস্থিত।
স্কুলটিতে আমি এক যুগেরও বেশী সময় ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করেছি। এই স্কুলটি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যাচেলর অব এডুকেশন ডিগ্রি, মাস্টার্স অব এডুকেশন এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী পাশ করি। তাছাড়া কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইংরেজি বিষয়ের উপর ৩০ দিনের প্রশিক্ষণ, পরবর্তীতে ২০০২ সালে ঢাকার নিউ ইস্কাটনে অবস্থিত বিয়ামে ৪২ দিন ব্যাপী English Spoken Course ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। প্রশিক্ষণ শেষে যে সনদ ও নম্বর পত্র দেওয়া হয় -তাতে Outstanding লিখা দেখি। Outstanding শব্দটির সাথে আমার তখন প্রথম পরিচয়। ৯০ এর উপর নম্বর পাওয়াকে নম্বরপত্রে outstanding হিসেবে বুঝানো হয়েছে। কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে তখনকার শিক্ষা সচিব শহিদুল আলমের উপস্থিতিতে ইংলিশ স্পোকেন কোর্সেও আমি প্রথম হওয়াই আমাকে ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে বলা হলে আমি বক্তব্য রাখি। ইংরেজি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স না থাকা সত্ত্বেও ইংরেজিতে আমার বক্তব্যের তিনি প্রশংসা করার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে থাকা সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তাকে আমার দিকে ইশারা করে বলেন, “সামনে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষক প্রেরণ করার সময়ে তার মতোদের যেনো বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।”
উভয় কোর্সে (ইংরেজি ও কম্পিউটার) আমি ১ম হওয়াই পরবর্তীতে টাটা ইনফোটেক এর সৌজন্যে নিউ দিল্লিতে ৪২ দিন ব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ পাই। (আমি রেজাল্টের ভিত্তিতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাওয়াই মনে করেছিলাম আমার মতো সবাই বিভিন্ন কোর্সে ১ম, ২য় ও ৩য় হওয়ারা বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পায়। পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়) আমাদের সময়ে একই সাথে মোট ৬৫ জন সুযোগ পায়। ইন্ডিয়ার নিউদিল্লীর প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে ৬৫ জনকে চার ব্যাচে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ যেহেতু আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি সেহেতু বাংলায় কথা বলতে পারা পশ্চিম বঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের দুই জন শিক্ষকও সেখানে ছিলেন। একজনের পিতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে ইন্ডিয়ার ঝাড়খণ্ডে গিয়ে সেটল হন। আমি চট্টগ্রামের সেটা জেনে তিনি তাঁর পিতৃভুমির প্রতি তার যে অগাধ ভালোবাসা তা প্রকাশ করায় তা দেখে ও শুনে আমিও আপসোস করি। “যে, যে ধর্মেরই হোক না কেনো রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় কারণে কেউ তার মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত যেনো না হয়।”- এই কামনা ও চেষ্টা পৃথিবীর সকল প্রকৃত মানুষের করা উচিত।
আমরা প্রশিক্ষণার্থী ৬৫ জনকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে মোট আট জন শিক্ষক দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভারতে বিভিন্ন ভাষার লোক থাকায় ৮ জনের দুইজন বাঙ্গালী ব্যতীত বাকীরা অন্যান্য ভাষার হলেও ইংরেজিতে লেকচার দিতেন।
আমাদের গ্রুপে থাকা ৬৫ জনের সবাই বাংলাদেশে ইংরেজি ও কম্পিউটারে প্রাথমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত -এরকম হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কোর্সে ১ম, ২য় কিংবা ৩য় স্থান পাওয়ারা (সচিব শহিদুল আলম এর নির্দেশনা মতো) হওয়ার কথা থাকলেও ৫/৬ জন ব্যতীত বাকীরা কেউ বাংলাদেশে ইংরেজি কিংবা কম্পিউটারে কোনো ধরনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেননি। দুই জন শিক্ষক ব্যতীত বাকী ৬ জন শিক্ষকের ইংরেজি লেকচার তারা বুঝছিলো না। আমি ও ঢাকা তিতুমীর কলেজের ইংরেজি প্রভাষক- আমরা দুই জন ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যাচে ছিলাম। আমার ব্যাচে বাঙ্গালী দুই জন স্যার ব্যতীত বাকী ৬ জন স্যার ইংরেজি লেকচার দিতেন কিন্তু আমার ব্যাচের প্রায় সবাই বুঝতেন না। স্যার ঘনঘন বলতেন,
“Have you got the point?”
“Have you understood?”
“Clear?”
এভাবে বারবার প্রশ্ন করে কোনো উত্তর না পেলে আমাকে বলতেন, ” “You, Abdur Rahim! Please come to the dais & make them understand in Bangla.” তখন আমি আমার ব্যাচের সবাইকে স্যারের ইংরেজিতে বলা বিষয়গুলো বাংলায় বুঝাতাম।
উল্লেখ্য যে প্রশিক্ষণটা ছিলো ইংরেজি ও কম্পিউটার জানাদের জন্য advance course.কিন্তু দুর্নীতি ও আঞ্চলিকতার টানে কম্পিউটার বিষয়ে সম্পূর্ণ আনাড়িদের প্রেরণ করায় তারা (টাটা ইনফোটেক) advance course না শিখিয়ে একদম শুরু থেকে শিখানো শুরু করায় সেই প্রশিক্ষণ থেকে আমার কোনো কিছু শিখার সুযোগ হয়নি।৬৫ জনের মধ্যে ৪০ জনকেই
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী তার সংসদীয় আসন থেকে পাঠান। উক্ত ৪০ জনের মধ্যে অনেকেই এমপিওভুক্তও ছিলেন না। খন্ডকালীন শিক্ষক। চরম অনিয়ম। স্যার বিজয় জুনেযা এরকম প্রশিক্ষণার্থী বাংলাদেশ থেকে প্রেরণ করায় এবং সঠিকভাবে কোর্স সম্পন্ন করতে না পারায় আক্ষেপও করেছিলেন।
কক্সবাজার থেকে সরকারী স্কুলের একজন, চট্টগ্রাম থেকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলের আমি একজন, এরকম হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত বাকী সবাই লবিং করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণে যায়। আর তাই প্রশিক্ষণটি সফল হয়নি। বিএনপির আমলে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়েও দুর্নীতি অন্যদিকে বর্তমান আওয়ামীলীগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতিবাদের শেষ নেই। বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগ বর্তমানে অনেক বেশী দুর্নীতি করছে-এটা ঠিক। আওয়ামীলীগ দীর্ঘ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে আর তাই তারা বেশী করছে। বিএনপি আওয়ামীলীগের মতো দীর্ঘ বছর থাকলে তারাও তাই করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলও এরকম মন্তব্য করেছিলেন (আওয়ামীলীগ-বিএনপি একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ)।
বাংলাদেশে সব সেক্টরে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। মাকড়সার বাচ্চারা যেরকম মায়ের জীবনের অবসান ঘটিয়ে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হয় তদ্রূপ দুর্নীতিবাজরা বাংলাদেশ নামক মাকে শেষ করে দিচ্ছে। দুর্নীতি করে বিগত ৫২ বছরে যা পাচার হয়েছে, দেশে শীঘ্রই বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলার আলোকে সর্বজনীন পরিবেশ সৃষ্টি করা না হলে তার কয়েকগুণ বেশী ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে পাচার হয়ে দেশ তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়ে যাবে।
টাকা পাচার ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ শীঘ্রই দেওলিয়া হয়ে গেলে তখন বেসরকারি শিক্ষকরা চাকরি জাতীয়করণের দাবী নিয়ে যে আন্দোলন বর্তমানে করছেন-সে আন্দোলন ত্যাগ করে বর্তমানে যে বেতন পাচ্ছেন-সে বেতন বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয়করণ আন্দোলন বাদ দিয়ে সে বেতন পাওয়ার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আন্দোলন করলেও দেশ দেওলিয়া হেতু বর্তমানে পাওয়া বেতনটাও বন্ধ থেকে চালু করা সম্ভব না হয়ে সাড়ে ৫ লক্ষ শিক্ষক মানবেতর জীবনের কোলে ঢলে পড়বেন।
ইতোমধ্যে ৯ টি ব্যাংক খুবই দুর্বল হয়ে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। বলতে গেলে ব্যাংক শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নতুন নোট ছাপিয়ে অন্যান্য ব্যাংককে সরবরাহ করে টাকা তুলতে যাওয়া গ্রাহকদের টাকা দিয়ে বুঝ দিলেও মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ে দেশে শীঘ্রই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যাবে। আর তাই শেখ হাসিনাও দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন।আওয়ামীলীগ-বিএনপি একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।
আওয়ামীলীগ প্রতিশোধের রাজনীতি করে যাচ্ছে অন্যদিকে বিএনপিও প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর তাই বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও দেশকে তারা দেওলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবে না। আওয়ামীলীগ-বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল ও দোষারোপ করার পাশাপাশি লুটপাটে ব্যস্ত থাকা ছাড়া ক্ষমতায় গিয়ে তারা দেশের জন্য তেমন কিছু করে না।
দেশ দেওলিয়া হলে রাজস্ব খাত থেকে পাওয়া বেতনধারীদের আগে উন্নয়ন খাত থেকে পাওয়া বেতনধারীরা দেওলিয়ার চরম কুফল ভোগ করবে। তাদের বেতন ভাতা সবার আগে বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাই উন্নয়ন খাত থেকে বেতন পাওয়াএমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের এখনই, এই মুহূর্ত থেকে দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসা জরুরি অন্যথা সবার আগে শিক্ষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
দেশকে উদ্ধারে আমি একটি সর্বজনীন ফর্মূলা গ্রহণ করেছি। এই ফর্মূলায় শিক্ষক সমাজ এগিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হলে ফর্মূলাটি দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনাসহ পুরো দেশবাসীও মেনে নিবে। এই বছরের মধ্যে (২০২৪) আমার ফর্মূলাটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকের বেতন বন্ধ হওয়া তো দুরের কথা উল্টো ২০২৪ এর জানুয়ারি থেকে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ হিসেবে ধরে নিয়ে এরিয়ারসহ এমপিওভুক্ত সবাইকে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সমান বেতন দেওয়া হবে। অন্যদিকে যেদিন আমার ফর্মূলা বাস্তাবায়ন হবে সেদিন থেকে বাংলাদেশের সকল কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি প্রাইমারী, নুরানী ও ইবতেদায়ী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও জাতীয়করণ করা হবে। উক্ত সিদ্ধান্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিলো এবং এই সিদ্ধান্তে আমরা এই বছর তথা ২০২৪ সাল পর্যন্ত অটল থাকবো। এই সময়ের মধ্যে আমার সর্বজনীন ফর্মূলার আলোকে কোনো দল ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করলে এবং পাচারকারীরা দেশ থেকে আর টাকা পাচার না করে থাকলে জাতীয়করণের উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়ন করা সম্ভব হবে। তবে ২০২৪ সালের মধ্য আমার ফর্মূলা বাস্তবায়ন না হলে জাতীয়করণের উক্ত ঘোষণা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আর তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তাদের স্ব স্ব সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে কিংবা নতুন কারো নেতৃত্বে আমার ফর্মূলার আলোকে এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নাই। এটা বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকরা নিজেরা বাঁচার পাশাপাশি দেশকেও বাঁচিয়ে দিয়ে দল-মত ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষক সমাজ ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।
টাটা ইনফোটেক এর সৌজন্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে আমার নতুন দিল্লিতে যাওয়ারসালটি ছিলো ২০০৪। বিমানে ঢাকা টু কলকাতা ৩৫ মিনিট লেগেছিল পরবর্তীতে কলকাতা টু নিউদিল্লী বিমানে করে প্রায় ২ ঘন্টা লেগেছিল। তাছাড়া আজমীর শরীফ, তাজমহল, লোটাস টেম্পল, রাজা রামমোহন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম্য মন্দির, রাজীব গান্ধীর সমাধি, তুঘলাকাবাদ, স্বর্ণমন্দির, হুমায়ুনস টম্বসহ বিভিন্ন স্থান টাটা ইনফোটেক এর সৌজন্যে আমাদেরকে ভ্রমণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ একদিন অন্তর অন্তর চলতো। ৪২ দিনের মধ্যে ২১ দিন প্রশিক্ষণ হয়েছিল।
চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষণার্থী পরিষদ নির্বাচনে মিলনায়তন সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়ে আমি মিলনায়তন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম।
প্রশিক্ষণার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে ৬ জন সম্পাদক এবং সদস্যসহ মোট ৩০ জন নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নির্বাচন হওয়ার পর অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। ভোটের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে নির্বাচিতপ্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পায়। পুরুষদের মধ্যে ১২ জন বক্তব্য দেওয়ার জন্য আগ্রহী হলে টিচাররা একজনকে সিলেক্ট করার জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেই প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেরে অধ্যক্ষ সবুক্তগীন মাহমুদও ছিলেন। বক্তব্য প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপে অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের বাদ দিতে দিতে সর্বশেষ আমরা দুই জন টিকে থাকি। অধ্যক্ষসহ স্যারেরা একবার আমাকে বক্তব্য দিতে বলে আরেকবার অন্যজনকে দিতে বলে। (উল্লেখ্য যে তখন আমি শুধুমাত্র ডিগ্রী পাশ ছিলাম অন্যদিকে আমার সেই প্রতিপক্ষ অনার্স মাস্টার্স পাশ ছিলো।) আমরা দুইজনকে বারবার বক্তব্য
দিতে বলে অপেক্ষাকৃত ভালো একজনকে সিলেক্ট করতে দ্বিধায় পড়ে গেলে (উল্লেখ্য যে আমরা দুইজনই প্রায় সমানে সমানে বক্তব্য দিচ্ছিলাম) অধ্যক্ষ আবার আমরা দুই জনকে বক্তব্য দিতে বলে অন্যান্য বিচারক স্যারদের তা মনদিয়ে শোনার জন্য বলেন। দুই জনের বক্তব্য শেষ হলে অধ্যক্ষ কারটা ভালো হয়েছে জিজ্ঞেস করলে উপস্থিত অধ্যাপকেরা কোনো জবাব না দেওয়ায় অধ্যক্ষ বললেন আসলে দুইজনই সমান। “দুইজন সমান হলেও কার বক্তব্য উচ্চকিত কণ্ঠে?” -অধ্যক্ষ এরকম প্রশ্ন করলে তখন স্যারেরা বলেন আবদুর রহীম এর। তখন ছেলেদের মধ্যে একমাত্র বক্তা হিসেবে আমাকে সিলেক্ট করা হয়। তেমন ভালো বক্তা আমি না হলেও খুবই স্পষ্ট ও বড় করে বক্তব্য দেওয়াই সেদিন আমি একমাত্র বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হই। এই স্মৃতি আজীবন আমার মনে থাকবে।
স্কুলের শিক্ষকতা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমার পাওয়ার বিপরীতে আমি স্কুলটিকে তেমন কিছু দিতে পেরেছি বলে আমার মনে হয় না। তবে স্কুলটিকে খুবই ভালো বাসতাম, স্কুলের পাশেই বাসা নিয়ে থাকতাম, স্কুলের পশ্চিম গেইটের একটা চাবি আমার কাছে থাকতো, রাত-বিরাত, বন্ধ যখনই মন চাইতো স্কুলে চলে যেতাম। স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতাম। বল ট্যাকল করতে গিয়ে ছাত্র সত্যজিৎ এর গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে মাঠিতে পড়ে হাতও ভেঙ্গেছিলো আমার। আমাকে চিকিৎসার জন্য ছাত্র আশিক, জাহেদ এর জেঠাতো ভাইসহ কয়েকজনে নিয়ে যায়। স্কুল, শিক্ষার্থীদের এতোই ভালো লাগতো যে, শুক্রবারের বন্ধটাও আমার ভালো লাগতো না। সব সময় স্কুল খোলা থাকুক-তাই চাইতাম। নোয়াপাড়া থেকে চট্টগ্রামের চকবাজার কিশলয় ক্লাবে আসতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। সেই ক্লাবে বিয়ে হচ্ছিল আমার আপন বড় মামার। স্কুল থেকে পুরোদিনের ছুটি নিতে পারতাম, ৪র্থ ঘন্টার পর হলেও বিয়েতে আসতে পারতাম। ৫ম ঘন্টার আমার ক্লাসটি অন্য কাউকে দিয়ে হলেও বিয়েতে আসতে পারতাম কিন্তু আমি আমার একটা ক্লাস আপন মামার বিয়ের জন্য মিস করিনি। সেভাবেই স্কুলটিকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি-বিনিময়ে এসবের চেয়ে আমি হাজারগুণ বেশী স্কুলটি থেকে পেয়েছি বলে মনে করি। ২০০৮ সালে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে কমিটির সভাপতি ও এক সদস্য প্রভাব খাটিয়ে চাকরিচ্যূত করলে স্কুলের সকল শিক্ষার্থী ও এলাকার দলমত নির্বিশেষে সবাই আমার পক্ষে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। আমার পক্ষে মিছিল মিটিং হয়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনসহ ১৩ দিন স্কুল বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড এর আপিল ও আরবিট্রেশন কমিটিতে আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৩ টি অভিযোগের সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমি পূনরায় স্কুলটিতে যোগদান করে আরো সাড়ে তিন বছর শিক্ষকতা করার পর সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন নিয়ে হাটহাজারীর মাদার্শা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করি। নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পূনরায় যোগদান করে আরো সাড়ে তিন বছর শিক্ষকতা করা মানেই আমার পক্ষে আন্দোলনকারী সকল শিক্ষার্থীসহ নোয়াপাড়া এলাকার ধর্ম-বর্ণ ও দল নির্বিশেষে সকলের বিজয় (যেহেতু তাঁরা সকলে আমার পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন)। আমি উক্ত এলাকার স্থানীয় না হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি এতো আন্তরিকতা দেখানোর জন্য আমি সবার নিকট কৃতজ্ঞ।
বাবু মোক্ষদা রঞ্জন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি দেশে সুনামের সহিত দীর্ঘ ১২০ বছর ধরে জ্ঞান বিস্তার করে আসছে। যতোদিন স্কুলটির সাথে কোনো না কোনো সময়ে সম্পৃক্ত (শিক্ষার্থী – শিক্ষক-অভিভাবক) জীবিত থাকবেন ততো দিন স্কুলটি ও বাবু মোক্ষদা রঞ্জন রায়কে স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত আমিসহ সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
সাবেক শিক্ষক, নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, রাউজান, চট্টগ্রাম ও দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
মন্তব্য করুন