হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় রঘুনন্দন রেঞ্জের শাহপুর বিটে বন বিভাগের উদ্যোগে সামাজিক বনায়ন হিসেবে বাঁশবাগান করা হয়। ওই বাগানের বাঁশ ইজারার মাধ্যমে বিক্রি করার নিয়ম। কিন্তু ইজারাদার গিয়ে বাগানে কোনো বাঁশ পান নি।
সামাজিক বনায়ন কমিটির নেতৃস্থানীয়রা এবং স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা মিলে ইজারা ছাড়াই অধিকাংশ বাঁশ কেটে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া কিছু বাঁশ কেটে বন বিভাগ বিভিন্ন কাজে লাগিয়েছে। বাগান দেখাশোনায় নিয়োজিত উপকারভোগীরাও তাদের ভাগের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রঘুনন্দন রেঞ্জের শাহপুর বিটে ১৯৭৮-৮৮ ও ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ একর জায়গায় বাঁশবাগান করা হয়। বাগানে ৬ হাজার বাঁশের চারা রোপণ করা হয়েছিল। প্রতিটি ১৬ টাকা করে ৬ হাজার চারার রোপণে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা।
সামাজিক বনায়নের নিয়ম অনুযায়ী বাঁশ বিক্রির টাকার ৫০ শতাংশ সরকার ও ৪০ শতাংশ উপকারভোগীদের পাওয়ার কথা। আর বাকি ১০ শতাংশ দ্বিতীয় দফায় চারা লাগানো বাবদ ব্যয় হওয়ার কথা। এছাড়া বনায়নের নির্ধারিত স্থানের জঙ্গল পরিষ্কার ও চারা কেনার জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি চারায় সাধারণত একটি বাঁশঝাড় হয়। গড়ে প্রতি ঝাড়ে ১০টি করে বাঁশ হলে এতদিনে ৬০ হাজার বাঁশ হওয়ার কথা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বরে সিলেট বিভাগীয় বন বিভাগ থেকে দুটি প্রকল্পের বাঁশ ইজারার মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। সেখানে মাত্র ৪০০ বাঁশ ৪৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মো. এমরুল নামে একজন ইজারাদার এ বাঁশ কিনে নেন।
কিন্তু বিপত্তি বাধে বাঁশ কাটতে এলে। ইজারাদার এমরুল রঘুনন্দন রেঞ্জ অফিসে এসে জানতে পারেন ইজারাকৃত জায়গায় কোনো বাঁশ নেই।
সরজমিনে দেখা যায়, বাগানে কেটে নেওয়ার পর কিছু বাঁশের গোড়া রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে বনজ গাছ লাগানো হয়েছে।
ইজারাদার এমরুল বলেন, ইজারা পেয়ে স্থানীয় রঘুরন্দন রেঞ্জ অফিসে টাকা জমা দেই। পরে শাহপুর বিটে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখি কোনো বাঁশ নেই। অফিসে জানালে তারা বলে, না থাকলে আমরা কোথা থেকে বাঁশ দেব। বাঁশ কোথায় গেল জানতে চাইলে বলেন, চুরি হয়ে গেছে। এরপর গত এক বছর ধরে ঘোরাঘুরি করেও কোনো সুরাহা পাইনি।’
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের একজন উসমান মিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় অনেক বাঁশ ছিল। বন বিভাগ বিভিন্ন কাজে সেগুলো কেটে ব্যবহার করেছে। প্রকল্পের জায়গায় অন্যায়ভাবে এলাকার কিছু প্রভাবশালী বনজ গাছের বাগান করেছে। তাদেরকে এখন পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র দিতে পারছে না বন বিভাগ। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী ৪০ শতায় লভ্যাংশ পাওয়ার কথা ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা কোনো লভ্যাংশ পাইনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ভিলেজার (বন অফিসের কাজের লোক) বলেন, চারা রোপণের পর বাগানের বাঁশের উৎপাদন ভালোই হয়েছিল। প্রকল্প এলাকায় লাখের ওপর বাঁশ ছিল। সেগুলো সামাজিক বনায়ন কমিটির নেতৃস্থানীয়রা এবং স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা মিলে ইজারা ছাড়াই কেটে বিক্রি করেছে। বাঁশের মূল্য কোটি টাকারও বেশি হবে।
রঘুনন্দন রেঞ্জ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, প্রকল্পের জায়গায় আসলেই কোনো বাঁশবাগান নেই। আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। বাঁশবাগানের ইজারা আগেই দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বনায়ন উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আহ্সান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন