নজরুল ইসলাম
ভালো কাজে ব্যক্তি উদ্যোগে এগিয়ে এসে মানবিক কাজ করেন এমন সব লোকদের আমাদের উৎসাহিত করতে হবে। প্রশংসা করতে হবে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে।ভালো কাজের প্রচার-প্রসার নগণ্য, আমাদের করতে হবে। একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ করতে হলে হিংসাত্মক মনোবৃত্তি পরিহার করতে হবে।
আজ একজন সম্ভাবনাময়ী উদীয়মান সমাজ সেবককে নিয়ে আলোচনা করতে চাই। মানবসেবা সমাজকর্মে এবং তার চিন্তা ভাবনা আমার দৃষ্টি কেড়েছে। তাই দায়িত্ববোধ থেকে উদীয়মান এই সমাজ সেবকের দেশপ্রেম মানবপ্রেম নিয়ে একটু কথা বলার প্রয়াস। বিশ্বাস যা তাকে মানবসেবায় উৎসাহ যোগাবে, উদ্বুদ্ধ করবে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী মৌলভীবাজার জেলা কৃতি সন্তান শেখ শাহ্ বাবলু হোসেনের কথা বলছিলাম। যদিও বাবলু হোসেন এবং সমাজসেবা অনেকটা একাকার হয়ে গেছে ইতিমধ্যে, এর পরেও বাবলু হোসেনকে নিয়ে আলোচনা। তাই পূর্বে সমাজসেবা কি- তা নিয়ে একটু ধারণা নিয়ে নিলে বাবলু হোসেনের সমাজকর্ম আমাদের চোখে ফুটে উঠবে।
সমাজসেবা হল সামাজিক উন্নয়ন এবং নীতির সাথে সম্পৃক্ত একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যয়। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি কল্যাণ রাষ্ট্রই সমাজসেবার প্রতি সর্বোত্তম গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। কেননা সমাজসেবা ছাড়া কোন সমাজের সার্বিক কল্যাণ কখনও নিশ্চিত করা যায় না। শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগে সমাজের কল্যাণসাধনের জন্য সমাজসেবাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হতো। তখনকার সমাজে আর্তমানবতার সেবায় পরিচালিত যে কোন প্রকারের কর্মকাণ্ডকে সমাজসেবা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বর্তমান যুগেও সাধারণ জনগণ সমাজসেবা বলতে বুঝে থাকে দুস্থ ও অসহায় মানুষের সেবায় গৃহীত কর্মকাণ্ডকে। আর এজন্যই আধুনিক সমাজকল্যাণে সমাজসেবাকে এত বেশি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়।
শেখ শাহ্ বাবলু হোসেন মন খুলে দান খয়রাত করছেন। তাই তাকে নিয়ে কৃতজ্ঞতা এবং উৎসাহ ব্যঞ্জক আলোচনা শুরু করার পূর্বে জানতে চাই ইসলামে দান খয়রাত নিয়ে কি বলেছে।
মুসলমানদের অনুসরণীয় আদর্শ মূলনীতি আল-কুরআন। শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর দেখানো পথ ও মত । রাসূলে আকরাম সা: মানুষের বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবতে নিজেই এগিয়ে এসেছেন। নিজে সাদকা করেছেন। অন্যরাও যাতে দান-সাদকা করে, এজন্য উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা দান-সাদকা করো। এতে আল্লাহ খুব খুশি হন এবং দানকারীর সম্পদ বাড়িয়ে দেন।
দান-সাদকা করা অত্যন্ত মহৎ কাজ। দানশীলতার ফজিলতও অনেক। দাতার মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হলো একটি শস্যবীজ যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে রয়েছে একশ’ শস্যকণা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়।’ (সূরা বাকারা, ২ :২৬১)
মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় দাতা হলেন আল্লাহ তায়ালা। মানবকুলের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা:-এর দানের তুলনা নজিরবিহীন। তাঁর দানের সাথে কারো দানের তুলনা হয় না। তিনি এমনই এক ব্যক্তি যাঁর সারাটা জীবনের মধ্যে কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে, অথচ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন এমনটি কখনো হয়নি। তাই তো হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: ছিলেন মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠদাতা।’ ( বুখারি শরিফ)
যখন মানুষ বিপদে পড়ে তখন অন্য মানুষের কর্তব্য বিপদগ্রস্ত মানুষটির পাশে দাঁড়ানো। সাধ্যমতো তাকে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা ।
কিন্তু সেই মানুষটি যদি অভাবগ্রস্ত কিংবা সমাজের পিছিয়ে পড়া কোনো মানুষ হয় তখন আমাদের কর্তব্য আরো বেড়ে যায়। তখন তার প্রতি আমাদের মানবিক হয়ে ওঠা কেবল সামাজিক দায়িত্বই নয়, বরং এটি ঈমানি দায়িত্বও বটে।
কোটি কোটি মানুষের বসবাস আমাদের এই দেশে। এদের মধ্যে কম করে হলেও কয়েক লাখ মানুষ রয়েছেন যাদের অর্থ-প্রাচুর্য কোনো কিছুরই অভাব নেই। আবার কিছু মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। যারা খেয়ে-পরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তাদেরও মানুষকে সহযোগিতা করার সক্ষমতা রয়েছে। তারা যদি সম্মিলিতভাবে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বা অভাবী মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ান, তাহলে তাদের সামান্য দানের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টাও বিশাল একটি দানে পরিণত হতে পারে। যদি আমরা এ মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসি, তাহলে জাতিগতভাবে আমরা উপকারপরায়ণ জাতিতে পরিণত হবো, তেমনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আমাদের এই দান দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারবে। বাবলু হোসেন আমাদের কমিউনিটিতে একটি উদাহরণস্বরূপ আবির্ভূত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ বাবলু হোসেন সপ্ন দেখেন আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের। তার সার্বিক অর্থায়নে সহযোগিতায় ও পরিকল্পনায় এ যাবৎ অনেক মানবিক কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে আমার দৃষ্টিকটু হয়েছে।
ব্যক্তি উদ্যোগে রাস্তার পাশে বিরতি নেওয়ার জন্য করে পথচারীদের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা, করে দিয়েছেন। ইহা মানব সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। মসজিদ মাদ্রাসা ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান, এতিম বিধবা অসুস্থদের চিকিৎসা, যাত্রী ছাউনী, রাস্তায় পাশে লাইটিং, পুকুরে মাছের পোনা, মসজিদের ইমাম ও ময়াজ্জিনদের জায়নামাজ আতর ও টুপি দান, তাদের সম্মানী ভাতা কিভাবে বাড়ানো যায় এই নিয়ে ভাবা, “শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো তাদের শীত বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া, পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তায় অন্ধকারস্থলে স্ট্রীট লাইট এর ব্যবস্থা করে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, অসহায় দরিদ্রদের খুঁজে নিয়ে এসে সাহায্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের হাতে ধরে বাজারে নিয়ে গিয়ে সদাই করে দেওয়া, এতিম ছোট্ট মেয়েকে সোনার চেইন উপহার দেওয়া, তাদের খোঁজ খবর রাখা, খেলাধুলায় যুব সমাজদেরকে উৎসাহিত করা, স্পোর্টস সামগ্রী দেওয়া, একটি সুষম সমাজ ব্যবস্থা তৈরিতে পজেটিভ চিন্তাভাবনায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা -এমন সব উৎসাহমূলক এবং মানবিক কাজকর্ম করে ইতিমধ্যে শাহ্ বাবলু হোসেন সকলের দৃষ্টি কাটতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্যক্তির উদ্যোগে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বাবলু হোসেনের সমাজকর্ম অব্যাহত থাকুকসেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।
মন্তব্য করুন