নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে।
কুমিল্লার পূজা মন্ডপে কোরআন অবমাননার ঘটনায় সারাদেশের ন্যায় হবিগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। জেলার বিভিন্নস্থানে হয়েছে হামলা, ভাংচুর, অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। মন্ডপে মন্ডপে টহল দিচ্ছে পুলিশ। মাঠে রয়েছে র্যাব-বিজিবির বিশেষ টিম।
জানা যায়, বুধবার সকালে কুমিল্লা জেলার নানুয়া দীঘির পাড় পূজা মন্ডপে কোরআন অবমাননার ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও জনতার মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জের বিভিন্নস্থানেও হামলা-ভাংচুর ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার চন্দ জানান, সন্ধ্যায় উপজেলার ৫ টি মন্ডপে হামলা, ভাংচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো হল, লোকড়া ইউনিয়নের মহা মায়া সংঘ, একই এলাকার দশভূজা সংঘ (বিশ্বম্ভর রায়ের বাড়ি), যুগল রায়ের বাড়ি মন্দির, ধল নাজিরপুর সংঘ ও নিজামপুর ইউনিয়নের এবদারপুর ত্রিনয়নী সংঘ পূজা মন্ডপ। তিনি জানান, হামলায় মন্ডপের গেইট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে প্রশাসন তৎপর থাকায় বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে উত্তাল নবীগঞ্জ শহর। বুধবার বাদএশা শহরের থানা পয়েন্ট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নবীগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সকল সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। আমরা কোনো সংঘাতে বিশ্বাসী নই। বিশ্ব মানবমুক্তির সনদ পবিত্র আল-কোরআনকে যেভাবে অবমাননা করা হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। আমরা বিশ্বাস করি খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রাকিবুল ইসলাম খান জানান, সন্ধ্যায় পুটিজুরি বাজারে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, গতকাল রাত পর্যন্ত গোটা উপজেলার পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক জানান, কিছু উছশৃঙ্খল প্রকৃতির লোক কয়েকটি মন্ডপে সামনে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এছাড়া পুরো উপজেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ সার্বক্ষনিক টহল দিচ্ছে। তিনি অহেতুক গুজব না ছড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহŸান জানান।
র্যাব-৯ সিপিসি-১ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, র্যাবের দুটি বিশেষ টিম মন্ডপে মন্ডপে টহল দিচ্ছে। এছাড়াও মাঠে রয়েছে সাদা পোষাকধারী র্যাব। তবে দু/একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পুরো জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানায়, অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে জেলায় বিজিবিও মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ছুটে যান হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট মো. আবু জাহির। তিনি তখন মন্ডপের পূজারীদের শান্তনা দেন এবং সাহস যোগান। পাশাপাশি যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সচেতন মহলসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি কুমিল্লায় সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার তদন্ত পূর্বক প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহŸান জানান।
মন্তব্য করুন