ডেস্ক রিপোর্ট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, গবেষণা ছাড়া আসলে উৎকর্ষ সাধন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের গবেষণা এখনো আমাদের অপ্রতুল। গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না।’
শেখ হাসিনা বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নবনির্মিত ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল ভবনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা, গবেষণা কার্যক্রমের গুণগত মানোন্নয়নের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপনারা এখন যেটুকু করছেন সে জন্য ধন্যবাদ জানাই, তবে গবেষণার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের গবেষণা এখনো আমাদের অপ্রতুল।
তিনি বলেন, আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন তাদের শুধুমাত্র চিকিৎসা দিলেই চলবে না। সাথে সাথে তাদের কিন্তু গবেষণা করাও জরুরী। কাজেই এই বিষয়ে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো যাতে আপনারা বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে নজর দেন।
সরকার প্রধান এ সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রফেসর এমিরেটাস নিয়োগ দেওয়ায় বিএসএমএমইউ’র কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনাদের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবেন আপনাদের কাছে সেই আহবানই জানাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল এবং বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জেং কিউন। বিএসএমএমইইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং বিএসএমএমইউ’র সার্বিক কর্মকান্ড বিষয়ে পৃথক দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রায় ৪ একর জমির ওপর মোট ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এরমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল এক হাজার কোটি কোটি টাকা প্রদান করেছে। সরকার বরাদ্দ করেছে ৩৩০ কোটি টাকা এবং বিএসএমএমইউ ১৭০ কোটি টাকা দিয়েছে।
অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ, হাসপাতালটি যে কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসক দ্বারা রেফার করা সমস্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করবে। প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার রোগী হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা পাবেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে ৭৫০ শয্যা থাকবে। এছাড়াও ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, একটি ১শ’ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, একটি ১শ’ শয্যার জরুরি ইউনিট, ছয়টি ভিভিআইপি এবং ২২টি ভিআইপি কেবিন এবং ২৫টি ডিলাক্স কেবিন থাকবে।
বিশেষায়িত পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন, জিন থেরাপি এবং রোবোটিক সার্জারি৷
১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালিন পিজি হাসপাতালের রক্ত সংরক্ষণাগার এবং নতুন মহিলা ওয়ার্ডের উদ্বোধনকালে জাতির পিতার বক্তব্যেও একটি অংশের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ধর্ম-বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সকল রোগীর প্রতি সমান দরদে চিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহবান জানান।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আপনারা ডাক্তার আপনাদের মন হতে হবে অনেক উদার, আপনাদের মন হতে হবে সেবার। আপনাদের কাছে কোন বড় ছোট থাকবে না, আপনাদের কাছে থাকবে রোগ, কারো রোগ বেশী কারো কম। তাহলেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। আপনারা মানুষের সহযোগিতা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডাক্তারদের শহরকেন্দ্রিক না থেকে উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য সেবাকে তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওযারও আহবান জানান। পাশাপাশি অনলাইনে চিকিৎসা সেবাও জোরদার করার পরামর্শ দেন।
তিনি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেবার মানট যাতে বাড়ে সে জন্যও ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্তব্য করুন