মুজিবুর রহমান রঞ্জু,কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজারঃ চারিদিকে গাঢ় সবুজ টিলা, ওপরে সুনীল আকাশ। নিচে বিশাল জলাধারের (লেক) পানির ওপর মেঘযুক্ত নীল আকামেল প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। চা বাগানের ভেতর মনোরম এদৃশ্যে যে কেউ মনের গহিনে হারিয়ে যাবে আপন মনে। চারদিকে উঁচু টিলার মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের স্বচ্ছ জল, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে এই পরিবেশ।
প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ‘মাধবপুর লেক’ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত এই লেক। চা বাগানের শ্রমিকরা এটিকে ‘ড্যাম’ বলে অভিহিত করেন।
লেকের সাথেই তিন দিকে উঁচু চায়ের টিলা। সামনে সমতল চা বাগানে গাছের সারি। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে অঙ্কিত মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য। চারদিকে সৃজিত চা গাছসহ টিলার মাঝখানে লেকটি খুবই চমৎকার। প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক আসছেন মাধবপুর লেকে। শত শত বিনোদন প্রিয় পর্যটকদের পদভারে পুরো বছরই মুখরিত থাকে এই লেক।
আাঁকাবাকা হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে মাধবপুর লেকের আয়তন ৫০ একর। দূর্লভ বেগুনি-শাপলা, রঙ-বেরঙের জলজ ফুল শোভা বাড়িয়েছে এই লেকের। মাধবপুর লেকে অসংখ্য বেগুনি-শাপলার সমারোহের জন্য ‘লেক অব দ্য লোটাস’ বা পদ্মফুলের লেক বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। শীতে অতিথি পাখির কোলাহল আর বছরজুড়ে সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি, বালিহাঁসসহ নানা জাতের জলজ পাখি লেকে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। এখানকার ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, বেগুনি শাপলার উপস্থিতি হৃদয়ে বাড়তি আনন্দের মাত্রা জানান দেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই লেকে শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ও শিক্ষার্থীসহ ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামতে শুরু করে।
লেকের মধ্যে ৩-৪ মণ ওজনের বড় বড় কচ্ছপ আর মাছ দেখলে বাড়তি আনন্দের মাত্রা যুক্ত হয়। সুদীর্ঘকাল ধরে এ লেকের নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছে অগণিত মানুষ।
লেকে প্রবেশপথটি শুধু পর্যটকদের জন্য পাকাকরণ ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। লেকটিকে পর্যটকদের হেঁটে দেখার নচে লেকের পাশে রয়েছে মেঠেঅপথ। সৃজিত চায়ের টিলার ওপর ওঠতে সিঁড়ি করে তার ওপর ‘ওয়াকওয়ে’ করা হয়েছে। ওপর থেকে নিচের লেকের ম্য অবলোকন আরও উপভোগ্য। লেকে প্রবেশের আগেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, গেট ও পর্যটকদের বসার জন্য ছাউনি রয়েছে।
দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজে আসা যায় কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকে। যাতায়াত ব্যবস্থার ভালো সুবিধা রয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা থেকে লেকটির দূরত্ব প্রায় ৬ কি.মি। বাস, ট্রেন কিংবা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন এই লেকে। ট্রেনে আসলে নামতে হবে ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন নতুবা শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে। বাস কিংবা নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করলে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার হয়ে আসতে হবে। লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে ইচ্ছেমতো সময় পার করে গন্তব্যে ফেরেন পর্যটকরা। যে কোনো ধরনের যানবাহন পাওয়া যায় লেকে যেতে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে লেক এলাকা পরিচর্যা। মাধবপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন,’আমরা পর্যটনে আকর্ষণ করার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া দূর-দূড়ান্ত থেকে আসা পর্যটকরা এই লেকটি ঘুরে দেখার জন্য গাইডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়’।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, মাধবপুর চা বাগানের নিয়ন্ত্রণে হলে এ লেকের প্রতি উপজেলা প্রশাসনের তদারকি রয়েছে। লেকটিকে আরও আকৃষ্ট করে উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর চিন্তা ভাবনাও রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :