মোনায়েম খান, ইংল্যান্ড প্রবাসী লেখকঃ
ফেইস দ্যা পিপলের সাথে দেওয়া মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর একটি সাক্ষাত্কার নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । বলাবাহুল্য , তিনি কুয়াকাঁটার হুজুর বা হেলিকপ্টার হুজুর নামে বাংলাদেশে সমধিক প্রসিদ্ধ । সম্প্রতি বহুল আলোচিত এহসান গ্রুপের প্রতারণার সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা নিয়ে গুন্জনের পরিপ্রক্ষিতেই মুলত তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন । সাক্ষাত্কারের একপর্যায়ে হুজুর নিজকে নিস্পাপ হিসেবে দাবী করেন । তিনি বলেন তাঁর কোন দোষ নেই ।যদিও প্রমান রয়েছে তিনি এহসান গ্রুপের পক্ষে ওয়াজ মাহফিলে নিরবচ্ছিন্ন প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছেন । এবং নিজেকে এহসান গ্রুপের একজন সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন । শুধু কি তাই , তিনি এহসান গ্রুপ আয়োজিত এক ওয়াজ মাহফিলে ঐ গ্রুপকে গোটা দুনিয়ায় জন্য রহমত স্বরূপ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ।
সবার জানা, হেলিকপ্টার হুজুরের অগনিত ভক্ত রয়েছে দেশজুড়ে । তিনি এ প্রজন্মের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী ইসলামী বক্তা । তাই তিনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচারকার্যে অংশ গ্রহন করেন অথবা সেই সংগঠনকে দৃঢ়তার সাথে সততা বা রহমতের সার্টিফিকেট দেন , সঙ্গত কারনেই তাঁর অন্ধভক্তকুল রহমতের ছায়াতলে একটু জায়গা করে নেওয়ার জন্য কোমড় বেঁধে প্রতিযোগিতায় নেমে আসবেন ইহাই স্বাভাবিক । এবং হয়েছিলও তাই । হুজুরের প্রভাবে বা অনুগত্য প্রকাশ করতে অনেক দ্বীনদার লোক সুদবিহীন বেশী মুনাফার আশায় লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন এই এহসান গ্রুপে । বিভিন্ন খবরে প্রকাশ গ্রপের চেয়ারম্যান রাগিব আহসান ও তাঁর সহযোগিরা মিলে চোখ ধাঁধানো সতের হাজার কোটি টাকার লুটপাট বা প্রতারণা করেছে । সর্বশান্ত করেছে হাজারও সরল বিশ্বাসী লোকদের । নিঃসন্দেহে ধর্মের লেবাসে এত বড় প্রতারণার উদাহরণ দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।
কুয়াকাঁটা হুজুরের ভাষ্য মতে এ সংগঠনকে সমর্থন করে দেশের অনেক বরেণ্য আলীমে দ্বীন কথা বলেছেন । এবং তিনি তাঁদের কুকর্ম আগে জানেননি বিধায় ভাল মন্তব্য করেছেন বলেও উল্লেখ করেছেন । তর্ক না করে হুজুরের কথা না হয় বিশ্বাস করে নিলাম । কিন্তু এহসান গ্রুপের স্মরণকালের সেরা প্রতারণার নিন্দিত কর্মকান্ড দুনিয়ায় সামনে উম্মোচিত হওয়ার পরও তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি মুখ খুলেননি যেমন , ঠিক তেমনি তাঁর নিজের সুস্পষ্ট অবস্হান ব্যাখ্যা করতেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন । অধিকিন্তু গা ঢাকা দেওয়ার প্রচেষ্টা করছেন । এ জন্য তিনি মুখে যা বলছেন তা কোনভাবে সঠিক বলে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না । সবকিছু ধুম্রচ্ছন্ন মনে হচ্ছে । দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র ।
হুজুর বলছেন তিনি নিস্পাপ । এ শব্দটি খুবই জটিল , স্পর্শকাতরও বটে । কারন , পাপ পুণ্য নিরূপন করেন একমাত্র মহান আল্লাহ । খাঁটি মুসলমান হিসেবে এ আমাদের বিশ্বাস । কাজেই , কোন মানুষ হলপ বলতে পারে না যে সে নিস্পাপ । জেনে শুনে একজন হুজুর এমন দৃঢ়তার সাথে নিজকে নিস্পাপ বলতে পারেন না , উচিতও নয় । বরং “ নির্দোষ “শব্দটি গ্রহনযোগ্য হতে পারে । এবং তিনি যদি নির্দোষ হয়ে থাকেন তবে তা প্রমান করার জন্য স্বত:প্রনোদিত তাঁকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে । সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেকোন তদন্ত কাজে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও হুজুরকে দিতে হবে । তেমন কিছু হলে হয়তো হেলিকপ্টার হুজুরের আন্তরিকতা নিয়ে কোন সন্দিগ্ধ প্রশ্ন উঠবেনা বলে আমার বিশ্বাস । তাছাড়া , অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য তিনি অবশ্যই দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে । যা দেশবাসী অপরিহার্যভাবে আশা করে ।
খবরে প্রকাশ , এহসান গ্রুপের পৃষ্টপোষকতায় দেশে ক’টি মসজিদ মাদ্রাসা বির্নিমান বা পরিচালিত হচ্ছে । প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত টাকার দ্বারা এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চালিয়ে যাওয়া কতটুকু নীতি নৈতিকতা বা বৈধতা রয়েছে ,সে ব্যাপারে অবশ্যই মাওলানা হাফিজুর রহমান গংদের দলিল সাপেক্ষ ব্যাখ্যা প্রদান করা অতিব জরুরী । ধর্মের নামে যাঁরা ভিক্ষাবৃত্তি পেশা হিসেবে গ্রহন করছে বা ধর্মে আড়ালে লাভজনক ব্যবসা খুলে বসেছে তাঁদের প্রতিহত করতে হলে পরিপূর্ন ইসলামী শিক্ষা শুধু চর্চা করাই অপরিহার্য নয় , বরং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করা জরুরী । আর এই কাজটি প্রকৃত আলীম ওলামাদেরকেই করতে হবে ।
মন্তব্য করুন