আব্দুল কুদ্দুস, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে:
কুলাউড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর-বাহির রাঙিয়ে তোলা হয়েছে রং তুলির আঁচড়ে। ভবনের ভেতরে-বাইরে, প্রবেশ মুখ, সীমানা প্রাচীর সবখানে শিল্পী তার রঙ তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলেছে জাতীয় ফলমূল, পশুপাখি, দেশ-প্রকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলা-ইংরেজি বর্ণ, মিনা কার্টুন ও মনীষীদের বিবিধ ছবি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্টরা সরকারি স্লিপফান্ডের বরাদ্দের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সহযোগিতায় এমন ভিন্নধর্মী কাজ করেছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, রঙের ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও খুব উৎফুল্ল রঙ্গিন বিদ্যালয় পেয়ে। কুলাউড়ায় এভাবে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীবান্ধব করে গড়ে তুলতে প্রমোশন অব হিউম্যান রাইটস অব পারসনস উইথ ডিজএ্যাবিলিটিজ ইন বাংলাদেশ (পিএইচআরপিবিডি) প্রকল্পের আওতায় কাজ করছে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রচেষ্টা। এসবের তত্ত্ববধানে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কুলাউড়া। সহযোগিতায় রয়েছেন- সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী, এসএমসির সদস্যবৃন্দ, প্রবাসী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সংস্থাটি প্রতিবন্ধীবান্ধব এবং শিশুদের স্কুলমুখি করতে এমনকি তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়মিত ইশারা প্রশিক্ষণ, ব্রেইন ও পেডাগজিসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। তাছড়া শেণীকক্ষ তাদের মত করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকমের জিনিস দিয়ে। যা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য অনেকটা শিক্ষনীয় বিষয়- এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্টরা। দেখা গেছে, বাউন্ডারি গেইট থেকে হুইল চেয়ারের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই শিশুরা নিজেদের মত করে টয়লেটে যাওয়া থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ঘুরানোর ব্যবস্থাও আছে। কুলাউড়ার এসব প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করেন কমলগঞ্জের ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ। তারা উন্নয়ন সংস্থা প্রচেষ্টার ‘আলোয় আলো’ প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের পাঁচপীর প্রতাবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রতাবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। প্রচেষ্টার প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর মুক্তা রানী দেব এর নেতৃত্বে পরিদর্শনকারী দলের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকমন্ডলী ও এসএমসির সদস্যবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন। এখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারাও স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখি করতে এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরিদর্শন দলে অন্যান্যদের মাঝে ছিলেন- প্রধান শিক্ষক প্রদীপ পাল, ইন্দ্রজিৎ নানিয়া, সহশিক্ষক শিরিন বেগম, চামেলী রানী দাস, প্রিন্সেস চিছিম, নাজমীন নাহার, জয়া বারই, মো. আব্দুল হক, প্রচেষ্টার শাহজান আলী প্রমুখ।
পাঁচপীর প্রতাবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, উন্নয়ন সংস্থা প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমরা নিজেদের উদ্যোগে, প্রবাসীদের সহযোগিতা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা এবং তহবিল হতে এগুলো সাজিয়েছি। এখানে প্রচেষ্টাসহ এলাকার মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন