নূরুজ্জামান ফারুকী, হবিগঞ্জ থেকে॥
দেবর-ভাবীকে অনৈতিক কাজের অভিযোগে শিকলে বেঁধে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগে আসামি ভিংরাজ মিয়া (৩০) কে গ্রেফতার করেছে চুনারুঘাট থানা পুলিশ।
১৩ অক্টোবর রাতে চুনারুঘাট থানার ওসি মোঃ আলী আশরাফ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে উপজেলার কোনাগাও গ্রাম থেকে কৌশলে গ্রেফতার করেন। নির্যাতনের শিকার শারমিন আক্তার মারিয়ার দায়ের করা অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ভিংরাজ উপজেলার কোণাগাও গ্রামের ছমদ মিয়ার পুত্র। এ জাহারের অন্যান্য আসামীরা পলাতক রয়েছে। গত ১১ অক্টোবর রাত দশটায় মারিয়ার নিজ গৃহে মারিয়ার দেবর (ভিংরাজের চাচাতো ভাই) শাকিল মিয়া (১৮) এর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে শাকিল মিয়া ও মারিয়াকে প্রথমে রশি দিয়ে ও পরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাতভর মারধর করা হয়। পরদিন বেলা আড়াইটায় শাকিল ও মারিয়াকে একই শিকলে বেঁধে প্রায় তিন কিলোমিটার হাঁটিয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ূন কবির খান বিষয়টি পরে দেখবেন বলে শাকিল ও মারিয়াকে নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনের কাছে দিয়ে দেন। আহত মারিয়া ও শাকিল চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
মারিয়া ও শাকিলকে শিকলে বেঁধে নেওয়ার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি সহ প্রচার হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে। মারিয়া জানান, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর চাপে মারিয়ার প্রবাসী মায়ের কাছ থেকে প্রায়ই টাকা পয়সা এনে দিতে হতো। গত তিন বছর আগে মারিয়ার মা মারিয়ার স্বামীকে একটি টমটম কিনে দেন। বছর না যেতেই সেটা বিক্রি করে টাকা পয়সা নষ্ট করে ফেলে তার মাদকাসক্ত স্বামী। এরপর থেকে রাগ করে মারিয়ার মা তাদেরকে টাকা পয়সা দেওয়া বন্ধ করে দেন। সেই থেকেই শুরু হয় মারিয়ার উপর তার স্বামীর নানান নির্যাতন।
আরো পড়ুনঃ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের নানান অনিয়ম
ইতিমধ্যে একবার মারিয়াকে বেঁধে মারধর করেছে তার স্বামী ভিংরাজ। বিষয়ে মামলামকদ্দমা হয়েছে। যা সালিশে নিষ্পত্তি হয়েছিল। তারপরও ভিংরাজের আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঘটনার রাতে ভিংরাজের চাচাতো ভাই শাকিল ফোন নিয়ে এসে মেডিকেল করতে ঢাকাতে থাকা মারিয়ার স্বামী ভিংরাজের সাথে কথা বলতে বলে। কথা বলাকালীন সময়ে তার ভাসুর দুপরাজ মিয়া ও জড়িত অন্যান্যরা শাকিলকে জড়িয়ে মারিয়াকে অপবাদ দিয়ে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে মারধর করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রশি খুলে তাদেরকে শিকল দিয়ে বাঁধা হয়। রাতভর বেঁধে রেখে মারধর করার পর সকাল সাড়ে নয়টায় তার স্বামী ঢাকা থেকে বাড়ি এসে মারিয়াকে গালীগালাজ করে হুমকি ধামকি ও অপবাদ দিতে থাকে। পরে তাদেরকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় গ্রাম্য রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে নিয়ে বাঁধন খুলে দেয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির খান বিস্তারিত শুনে মারিয়াকে তার নানা সুলতান মিয়া ও শাকিলকে তার বাবা আবুল কালামের জিম্মায় দেন। বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি (তদন্ত) চম্পক দাম বলেন, এধরনের কাজ সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশর সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে খুবই নিন্দনীয়। ঘটনাটি জানার পরপরই পুলিশ দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ওসি মোঃ আলী আশরাফ বলেন, আসামী ভিংরাজকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকীদেরও খুব দ্রুতই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন