ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ৮৩ শতাংশ। মূলধনও খেয়ে ফেলা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। ১২ বছর আগে পুনর্গঠিত ব্যাংকটি আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মৃতপ্রায় এই ব্যাংককে আবারও জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি রুদ্ধদ্বার সমঝোতা সভা হয়েছে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভাসূত্রে জানা যায়, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি দীর্ঘদিন লোকসানের ঘানি টানছে। লোকসান কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ব্যাংকটির মতামত চাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সব সূচকে উন্নতির জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, আর্থিক সূচকে দুর্বল অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে সভা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সভার পর এসব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো কোনোটির সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি এমওইউ সই করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সঙ্গে সভা করেন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংকের সঙ্গে সভা করছে, তার সব ক’টিই ডুবতে থাকা ব্যাংক। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেসব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, সেগুলোকে বিশেষ তদারকিতে রাখা প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্যের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসা অনিয়মগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, পরিদর্শনে অনেক ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ খেলাপিযোগ্য বলে ধরা পড়েছে। এই উদ্যোগের ফলে নতুন করে আরও ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়া বন্ধ হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। এরপর ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, বেসিক ও আরও দুটি ব্যাংকসহ বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি করেছে। এগুলোর কয়েকটিতে ও এর বাইরের কয়েকটিতে পর্যবেক্ষক বসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি ঘটছে না। এই পরিস্থিতিতে আরও ১০ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে।
লুণ্ঠনের শিকার কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ালেও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের চিত্র পুরো উলটো। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও সৌদি আরবের দাল্লাহ আল-বারাকা গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে দেশে কার্যক্রম শুরু করেছিল আল-বারাকা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংক ২০০৩ সালে নাম পরিবর্তন করে দি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেডে রূপান্তর হয়। কিন্তু চরম অব্যবস্থাপনা, জালিয়াতি ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ধসে পড়ে ব্যাংকটি। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ২০০৬ সালের ১ জুন ব্যাংকটির পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ ও পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় দেউলিয়া ব্যাংকটির অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে মালয়েশিয়ার আইসিবি গ্রুপের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংকটি।
মন্তব্য করুন