প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলে রবিরবাজারে কাচা বাজারের রাস্তা


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১০:৫৭ অপরাহ্ন /
প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলে রবিরবাজারে কাচা বাজারের রাস্তা

কুলাউড়া প্রতিনিধি

কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ছয় ইউনিয়নের প্রাণকেদ্র হচ্ছে রবিরবাজার। সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার এখানে সরকারি হাট বসে। সরকারি বাজার হিসেবে হাটবার ছাড়াও প্রতিদিন কোটি টাকার পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয় বাজারে। সরকার এ বাজার থেকে প্রতি বছর কোটি টাকার উপর রাজস্ব আয় করে। বাজারটি ক্রেতা-বিক্রেতার ভীড়ে সবসময় ব্যস্ত থাকে। দীর্ঘদিন থেকে নানা সংকটে ভোগছেন সরকারি এই হাট বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কিছু প্রভাবশালীদের দখলে বাজারের রাস্তা ও একাধিক দোকান কোঠা থাকার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা ক্রয় বিক্রয় করতে পারছেন না। এমনকি স্থান সংকুলান না হওয়ায় কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বসে বিক্রি করতে পারছেন না।

তাছাড়া কাচা বাজারের রাস্তা ও শেডঘর এলোমলো থাকায় অবৈধভাবে দোকান ও গুদামজাত করণে হ.য.ব.র.ল সৃষ্টি হয়েছে লামা বাজারে। সুষ্ঠ তদারকির অভাবে সিন্ডিকেট কর্তৃক রাস্তা দখল করে দোকান বসানোতে কাচা বাজারের ভিতর দিয়ে যানবাহনসহ ক্রেতাসাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আশপাশ ছয় ইউনিয়নের ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম প্রতিদিন ঘটলেও কাঙ্খিত উনয়ন, অব্যবস্থাপনা ও দখল বানিজ্যসহ নানা সংকটে ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটি। এ যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিন রবিরবাজার কাচা বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাজারের প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরনের দোকান শেডঘর ছাড়াও রাস্তায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অনেক দোকানি সরকারি নীতিমালা না মেনে পণ্য মজুদ করে ব্যবসা পরিচালনার কারণে সাধারণ গ্রামগঞ্জের কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বসে বিক্রি করতে পারছেন না। এছাড়া একাধিক ব্যবসায়ীর দখলে অধিক সংখ্যক দোকান ভিটা রয়েছে।

প্রতিটি শেডঘরে ছয় ফুট বিশিষ্ট স্থানে তোহা বাজার নীতিতে ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না প্রভাবশালী অনেকে। এতে কৃষকরা বাধ্য হয়ে সল্পমূল্যে রবিরবাজারে প্রধান সড়কের উপরে অবস্থান করে পাইকার ও মধ্যস্থকারির নিকট পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যার দরুন কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এদিকে মূল সড়কের উপরে ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় রবিরবাজার জামে মসজিদের সামনে। এছাড়াও কাচা বাজারের মধ্যস্থানে অবস্থিত ৩১ শতকের সরকারি পুকুরটি ফের কাচা বাজারের ময়লা আর্বজনা ফেলে ডাস্টবিনে পরিণত করা হচ্ছে। মাস তিনেক পূর্বে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুকুরটি পরিষ্কার করা হলেও পুনরায় ময়লা আর্বজনার কারণে অস্থিত্ব সংকটে পড়ছে পুকুরটি।

বাজারে আগত কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, ফসল উৎপাদন করে বাজারে এসে বসার স্থান পাই না। বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও পাইকাররা জোর করে পণ্য নিয়ে যান বিশ টাকার পণ্য পাঁচ টাকা মূল্য দিয়ে। পরে তাদের দখলীয় শেডের ভিটায় দুই তিনগুণ বেশি মুনাফায় বিক্রয় করেন। স্থায়ী কৃষি শেডঘর নির্মাণের মাধ্যমে আমরা সাধারণ কৃষকরা এর প্রতিকার চাই। তারা আরো বলনে, দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান তার তৈরিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে বাজারজাত করছে অথচ কৃষকরা তাঁর উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করাতো দূরের কথা হাটে বসে বিক্রির সুযোগটাও পাচ্ছেন না। কৃষকদের বঞ্চিত করে লাভবান হচ্ছেন ফরিয়া ও মধ্যস্থকারীরা।

বাজার ইজারাদার দিপক দে বলেন, ১৪৩২ বাংলা সনে ভ্যাটসহ বাজার ইজারায় খরচ হয় প্রায় ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা। বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল ও দখল বানিজ্য করে ভিটা ক্রয়-বিক্রয়, একাধিক ভিটায় ব্যবসা পরিচালনাসহ রাস্তা দখল করে দোকান বসানোতে লিপ্ত রয়েছেন। মহালদারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেট করে বাজারের মুটি (টাকা) প্রদান বন্ধ করে দেন। বার বার নিষেধ করার পরও বাজারের ময়লা আর্বজনা পুকুরে ফেলছেন কতিপয় ব্যবসায়ীরা। পশ্চিম ও দক্ষিণের পুরাতন শেডঘরগুলো ভেঙ্গে নতুন করে দ্বিতল শেডঘর নির্মাণ করনে প্রশাসনের দৃষ্টি প্রত্যাশা করেন তারা। দখলদারের কারণে কৃষকরা তাঁদের পণ্য বসে বিক্রি করতে পারে না আমরাও এর প্রতিকার চাই। বাজার ইজারার অদ্যাবদি প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হলেও মূলধনের তিন ভাগের এক ভাগও (টাকা) মুটি আদায় হয়নি।

পৃথিমপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার জামাল উদ্দিন জানান, রবিরাবাজারে প্রতি রবিবার ও বৃহষ্পতিবার সপ্তাহিক হাট ছাড়াও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম ঘটে বিভিন্ন এলাকা থেকে। বাজারটি ভাসান বাজার হিসেবে ইজারাকৃত। এখানে কোন পণ্য মজুদ করে রাখার নিয়ম নেই। এ বিষয়ে বার বার সর্তক করা হয়েছে মজুদারদের। যেসব দোকানে স্থায়ী অবকাঠামো আসবাবপত্র রয়েছে সেগুলো সরাতে ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিদিন মালামাল নিয়ে এসে ব্যবসা পরিচালনা শেষে পন্য নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেডঘরের দোকান ভিটার দখল বিক্রয়কারীদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, তদন্তক্রমে সরকারি বাজারের শেডঘর, রাস্তায় অবৈধ দখলদার ও পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রতিটি সরকারি হাট বাজারে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করণে কৃষি কর্ণার স্থাপনের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।