কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনাঞ্চল দিয়ে পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইন চলে গেছে। সড়ক ও রেল পথের মত বিদ্যুৎ লাইনও এ বনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি। প্রতি বছরও বিদ্যুতায়িত হয়ে অনকে বন্যপ্রাণী আহত ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন)-এর সভাপতিত্ত্বে গত ২ আগষ্টের সভার সিদ্ধান্তে লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের ভেতরের ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন ও তৎসংলগ্ন কিছু এলাকায় তারের ওপর আবরণ বা তাপ অপরিবাহী কভার লাগানোর জন্য মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারকে পত্র দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এ পত্রটি দিয়েছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। লিখিত পত্রে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী উল্লেখ্য করেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্য প্রজাতির প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (২৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ),২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য প্রজাতির বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রানীর আবাসস্থল ও প্রজজন ক্ষেত্র এ লাউয়াছড়া বনাঞ্চল।লাউয়াছড়া উদ্যানের অভ্যন্তরসহ আশ-পাশের বিদ্যুতায়িত এলাকায় ৩৩ হাজার কেভি হাই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ লাইনে কোন আবরণ না থাকায় প্রায় প্রতি মাসে ২/১ টি অতি মূল্যবান স্তন্যপ্রায়ী বন্যপ্রাণী যেমন বিরল ও বিপন্ন উল্লুক, মুখপোড়ো হনুমান, চশমাপরা হনুমান, লজ্জাবতী বানর ইত্যাদিও বনাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিচরণকালে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে।
ডিএফ মো. রেজাউল করিমের বর্নণায় সাম্প্রতিককালে গত ৯ এপ্রিল ২০২১ ইং গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট এলাকায় ১টি লজ্জাবতী বানর, ১৮ জুন ২০২১ মুসলিম পাড়া রামনগর এলাকায় ১টি চশমাপরা হনুমান, ১৬ জুলাই ২০২১ কালাছড়া
বনবিট অফিসের সামনে ১টি মুখপোড়া হনমান, ২৪ জুলাই ভিক্টোরিয়া স্কুলের সামনে ১টি এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং ১টি বানর বিদ্যমাণ বৈদ্যতিক লাইনে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত বিরণ ও বিপন্ন বন্যপ্রাণী সমূহের মৃত্যু হতে থাকলে এক সময় এসব বিরল ও বিপন্ন প্রাণী এ বনাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তাতে বনের জীব-বৈচিত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও আর জানান, উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসবাসরত লোকালয়ে বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকালে অত্র বন বিভাগ থেকে বাদা দেওয়া হয় এবয় পরবর্তীতে বন আইন ১৯২৭ (সংশোধিত ২০০০ইং) অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন বিভাগের অনুমতি ব্যতিরেকে বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপন, লাইন টানা ও বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই মর্মেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এ পত্রের অনুলিপি প্রধান বন সংরক্ষক ঢাকা, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলগঞ্জও শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন সংশিষ্ট কার্যালয়ে প্রেরণ করাও হয়।
লাউয়াছড়া বনের ভেতর মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে দেওয়া বৈদ্যুতিক লাইনে তারে রাবারের আবরণ দেওয়া আছে। বাকি লোকালয়ে তারে নিরাপত্তা আবরণ দেওয়া হয়নি। লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি ও বনের ভেতরের ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন এ বনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্য হুমকির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবিলম্বে এ লাইনের তারে নিরাপত্তা আবরণ দেওয়া উচিত। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিয়াউর রহমান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পত্র সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন