ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।।
ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ও মৃতদের স্বজনদের আহাজারিতে সুগন্ধা নদীপাড়ের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তার সঠিক হিসেব এখনও কেউ দিতে পারছেন না।
দুর্ঘটনার পর থেকে সুগন্ধা তীরের দিয়াকুল গ্রামে, ঝালকাঠী সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে আসতে থাকেন নিখোঁজদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয় সুগন্ধা তীর এবং হাসপাতালের পরিবেশ। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বলেন, নিখোঁজ যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা এখনও বলতে পারছি না। ফায়ার সার্ভিস এবং কোস্টগার্ডের একাধিক টিম সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধানে রয়েছে। এছাড়া বরগুনায় কন্ট্রোল রুম খুলে শহরে মাইকিং করা হয়েছে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের জন্য। প্র্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণপন চেষ্টা চালানো হচ্ছে নিখোঁজদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে।ঝালকাঠী জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীও দুর্ঘটনা কবলিত নিখোঁজ যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানাতে পারেননি। তিনিও বলেছেন, নিখোঁজদের নাম-পরিচয় সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বরিশাল ও ঝালকাঠীর একাধিক দল সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধান চালাচ্ছে।বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী গ্রামের বাবুল (৫০) বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে খুঁজতে এসেছিলেন তার মা রেখা বেগম (৭০) ও দুই বছরের নাতি জুনায়েদকে। বার বার আহতদের শয্যার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বাবুল। খুঁজে পাননি মা ও নাতিকে। বাবুল জানান, তার ভাইঝি সোনিয়া (২৫), সোনিয়ার দুই ছেলে জুবায়ের (৬) ও জুনায়েদ (২) এবং তার মা রেখা বেগম দুর্ঘটনা কবলিত অভিযান-১০ লঞ্চে করে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগি গ্রামে যাচ্ছিলেন। লঞ্চে আগুন লাগার পরপরই সোনিয়া তার ছয় বছরের শিশু জুবায়েরকে নিয়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও দুই বছরের জুনায়েদ ও রেখা বেগমকে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বাবুল বলেন, ‘মোর মা আর নাতিডারে পাই না। ওগো কোমমে পামু হ্যাও মুই জানিনা। ও আল্লাহ মোর মায়েরে আর নাতিডারে ফিরাইয়া দ্যাও।’বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের উত্তম হালদার (৩৫) বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে খুঁজছিলেন ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণ হালদারকে (১৪)। নিখোঁজ কৃষ্ণ ঢাকার উত্তরার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। কৃষ্ণ হালদার মা গীতা রানি ও ছোটভাই প্রত্যয়কে নিয়ে বামনার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল।উত্তম হালদার বলেন, দুর্ঘটনার পর গীতা রানি প্রত্যয়কে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তারা তীরে উঠতে সক্ষম হলেও কৃষ্ণ নিখোঁজ। মোবাইল ফোনে শুক্রবার রাত ৮টায় উত্তম হালদার জানান, তার ভাইয়ের ছেলে কৃঞ্চ হালদারের সন্ধান তারা এখনও পাননি।পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের বাসিন্দা মো. রনি (১৫) শুক্রবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালে খুঁজছিল মা রীনা বেগম ও বোন লিমাকে। বার বার আহতদের শয্যার কাছে গিয়ে মা আর বোনকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে রনি। রনি নিজেও এ ঘটনায় আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ঝালকাঠীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে। লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে বরগুনা যাচ্ছিল। আগুন লাগার পর যাত্রীরা নেভানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে চলে যান। কেউ কেউ নদীতে লাফ দেন।এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দগ্ধ আছেন শতাধিক। এর মধ্যে চার জনের লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। বাকি ৩৭ জনের লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। লাশগুলো নিয়ে বরগুনায় পৌঁছেছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন