।।মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী।।
“আওয়ামীলীগের এই জয়ে (১২ জুন ১৯৯৬) গলার মালা গোলাম আজমেরই প্রাপ্য।”-জনৈক প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, কালুরঘাট, বিএডিসি।
বেসরকারি খাতে সেচ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সহায়ক প্রকল্পের (বেকৃযাপ্র) অধীনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে মাসব্যাপী আয়োজিত প্রশিক্ষণে (১৯৯৬) আমিও অংশ নিয়েছিলাম। আমার সাথে ফটিকছড়ি হেঁয়াকো এলাকার মতিন, আহসান উল্লাহ ও নুরুল ইসলামও ছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬ আসন পেয়ে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়। নির্বাচনের পরের দিন বৃহস্পতিবার আমাদের প্রশিক্ষণ খোলা ছিলো। সেদিন আমাদের উক্ত প্রশিক্ষক নিজ থেকে পূর্বদিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের কথা তোলেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের জয়ে গলার মালা গোলাম আজমকেই দেওয়া উচিত। গলার মালা তাঁরই প্রাপ্য। স্যারের কাছে গলার মালা কীজন্য প্রাপ্য -আমি জানতে চাইলাম। স্যার বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করে আমরা প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে নির্বাচনের দিনের আমাদের দেখা বিভিন্ন বিষয় জেনে নিলেন। তিনজনে (ফটিকছড়ি ব্যতীত অন্য উপজেলার) তাঁদের স্ব স্ব আসনে দুপুরের পর বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দাঁড়িপাল্লার পরিবর্তে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জামায়াতের প্রার্থীকে বলতে শুনেছেন। আর আমি ফটিকছড়ির জামায়াতের প্রার্থীকে তাঁকে ভোট না দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার কথা বলতে শুনেছি। একটি জিপ গাড়ি করে আমাদের কেন্দ্রে এসে গাড়ি থেকে না নেমে ১ মিনিটেরও বেশি সময় ব্যয় না করে দ্রুত প্রস্থান করেন জামায়াতের ওই প্রার্থী। পরে জানতে পারি তিনি নাকি এরকম অনেক কেন্দ্রে গিয়েছিলেন।
এসব শুনার পর উক্ত প্রশিক্ষক
অনেকক্ষণ ধরে ১৯৯১ থেকে শুরু করে ১২ জুন ১৯৯৬ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করলেন। তাঁর সব বর্ণনার লক্ষ্য ছিলো যে, জামায়াতের সমর্থন না পেলে আওয়ামীলীগ ৯৬ এ কোন অবস্থাতেই ক্ষমতায় আসতো না এবং তিনি এও বলেছেন ২১ বছর, এবার আসতে না পারলে ২৬ বছর! দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিলীন হয়ে যেতো-সেটা প্রমাণ করা। সেদিন তিনি কোন ক্লাস না করে পুরো সময় নির্বাচনের কথাই বলেছিলেন। তাঁর সব কথা পরিষ্কারভাবে মনে না থাকলেও তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম মনে আছে আর তাই স্যারের বক্তব্যের সাথে নিজের জানা আরো কিছু বিষয় উল্লেখ করে এই আর্টিকেল।
১৯৯৬ সালে দুইটি নির্বাচন হয়। একটি ১৫ ফেব্রুয়ারি অন্যটি ১২ জুন। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামীলীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দল বর্জন করলেও বিএনপি একতরফা নির্বাচন সেড়ে ফেলে। পরবর্তীতে বিএনপি কেয়ার টেকার সরকারের দাবি মেনে নিলে ১২ জুন আবার ইলেকশন এর আয়োজন করা হয়- সেই ইলেকশনে আওয়ামীলীগ ১৪৬ আসন পায়-বিএনপি ১১৬।
১৯৯৬ সালে বিএনপির ১১৬ আসন পাওয়াটা বিশাল অর্জন এজন্যই যে, যেখানে ১৯৯১ সালে জামায়াত মাত্র ৩৫ আসনে প্রার্থী (বাকী ২৬৫ আসনে জামায়াতের ভোট ধানের শীষে পড়েছিল) দিলেও বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য ১৯৯৬ সালে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া, নির্বাচনের দিন দুপুরের পর দাঁড়িপাল্লার পরিবর্তে নৌকায় ভোট দিতে বলা-এরকম প্রচন্ড বিরোধিতা সত্ত্বেও বিএনপির এতোগুলো আসন!
যে কারণে জামায়াতের প্রচন্ড বিরোধিতাঃ
পিছনে ফেরা যাক-১৯৯১ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিলো ১৪০ আসন (৩০.৮%), আওয়ামীলীগ পেয়েছিলো ৮৮ আসন (৩০.১%), জামায়াত পেয়েছিল ১৮ আসন (১২.১%) এবং জাতীয় পার্টি পেয়েছিলো ৩৫ আসন (১১.৯%)।
সেই নির্বাচনে ভোট ভোটের ১২.১% ভোট পেয়ে জামায়াত তৃতীয় হয়। জামায়াত ২৬৫ আসনে কোন প্রার্থীও দেয়নি। সেসব আসনে জামায়াত বিএনপির ধানের শীষের পক্ষে কাজ করেছিলো-যদি জামায়াত ২৬৫ আসনে প্রার্থী দিতো তাহলে জামায়াতের পার্সেন্টেজ আরো অনেক বেড়ে যেতো।
আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি সরকার গঠনের জন্য ন্যূনতম ১৫১ আসন না পাওয়ায় কেউ সরকার গঠনের পর্যায়ে ছিলো না। জাতীয় পার্টি (৩৫), আওয়ামীলীগ(৮৮), বাকশাল ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(১০), ন্যাপ-মোজাফ্ফর(১) মিলে ৩৫+৮৮+১০+১=১৩৪। এদের সাথে জামায়াতের ১৮ আসন যোগ হলে ১৯৯১ সালে মোট ১৫২ আসন নিয়ে আওয়ামীলীগই সরকার গঠন করতো।
নির্বাচনের পর সরকার গঠনে জামায়াতই নিয়ামকের ভূমিকায় আর তাই স্বভাবতই তখন প্রধান দুই দলই জামায়াতের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। জামায়াত যদি বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ সংরক্ষিত সব মহিলা আসন জামায়াতকে দিতে হবে-এরকম শর্ত দুই দলের যে কাউকে দিলেই-তারা মেনে নিতো। পরবর্তী ৫ বছর জামায়াতের সাথে উল্টাপাল্টা করলে জামায়াত সরকার থেকে সমর্থন উঠিয়ে নিলেই-সরকারের পতন আর তাই জামায়াতের সাথে জামায়াতের স্বার্থের বিপক্ষে গুরুতর কিছু জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা দলটি করতো না। কিন্তু জামায়াত কোন ধরনের শর্তছাড়া বিএনপিকে সমর্থন দেয়। বিএনপি সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর সংরক্ষিত মহিলা এমপিদের দিয়ে বিএনপির একক নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়ে যায়। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের পর সংরক্ষিত মহিলা এমপিরা এড হওয়ার পর জামায়াতের সমর্থন থাকা আর না থাকা-তাতে বিএনপির কিছুই যায় আসে না। মন্ত্রীত্ব না নিয়ে অন্তত বিএনপি কোন সংরক্ষিত মহিলা এমপি যাতে না নেয়-এরকম শর্তেও যদি জামায়াত সমর্থন দিতো-তখন সংসদে ন্যূনতম ১৫১ আসন বিএনপির থাকতো না আর তাই জামায়াতের সাথে উল্টাপাল্টাও করতো না। (জামায়াত সমর্থন প্রত্যাহার করলেই পতন)।
চরমোনাই এর পীর তাঁর দৃষ্টিতে জামায়াতের ঐতিহাসিক কতোগুলো ভুলের কথা একটি বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন। সেখানে তিনি উপরোক্ত সিদ্ধান্তকে ২য় বিরাট ভুল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সরকারের গঠনের পরপর ১৯৯১ সালেই মতিউর রহমান নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা ইচ্ছে মতো পেটায়। অনেকদিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয়। তাঁকে দেখতে শেখ সেলিমও হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত গোলাম আজম নাগরিকত্ববিহীন বাংলাদেশে থাকতে পারলেও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা বিএনপি হঠাৎ করে নাগরিকত্বহীন বাংলাদেশে থাকার কারণে গোলাম আজমকে গ্রেফতার করে। শর্তদিয়ে এবং তা আদায় করে সমর্থন দিলে মতিউর রহমান নিজামীকে মার খেতে হতো না এবং গোলাম আজমও গ্রেফতার হতেন না।
গোলাম আজম ১৬ মাস জেল খেটে ১৯৯৩ সালে মুক্ত হোন। অন্যদিকে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ জনতার আদালত করে জেলে থাকা গোলাম আজমের বিচার হয়। তার পূর্বদিন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বলেন, ” জনতার রুদ্ররোষ থেকে বাঁচতে সরকার গোলাম আজমকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে।” (আজকের কাগজ ২৬ মার্চ, ১৯৯২)।
বিএনপি জেলে ঢুকালো অন্যদিকে আওয়ামীলীগ ব্যাকড জনতার আদালত কর্তৃক একের পর পর কর্মসূচী। জামায়াতের কাছে জামায়াতের মতে নিমক হারাম বিএনপির চেয়ে আওয়ামীলীগই ভালো। জেল থেকে বের হয়ে ১৯৯৩ সালে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফর্মূলা দেন অধ্যাপক গোলাম আজম। উক্ত ফর্মূলা আওয়ামীলীগসহ প্রায় সব বিরোধী দল লুপে নেয়। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে আওয়ামীলীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি যৌথভাবে আন্দোলন করে। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় আয়োজিত জনসভার একই মঞ্চে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত পাশাপাশি বসতো। কেয়ার টেকার সরকারের দাবীতে আওয়ামী লীগ জামায়াত যৌথভাবে প্রায় ১৯৩ দিন হরতালও করে। ১৯৯৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ঢাকায় মোহাম্মদ হানিফ সাহেব ও মির্জা আব্বাস সাহেব এবং চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরী সাহেব ও মীর নাছির সাহেব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দল ক্ষমতায়, জিতাটা নিশ্চিত সেটা মনে করে এবং আওয়ামী লীগকে খোঁচা দেওয়ার জন্য মীর্জা আব্বাস ভোটের নির্বাচনী সভায় বলতেন, ” আমি রাজাকার ও স্বৈরাচারের ভোট চাই না।” অন্যদিকে হানিফ সাহেব নির্বাচনী জনসভায় বলতেন, ” আমি জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবার ভোট চাই।” তাঁর এরকম বক্তব্য তখনকার পত্রিকায় অনেক পাওয়া যাবে। মহিউদ্দিন চৌধুরীও এরকম বক্তব্য দিতেন-অন্যদিকে মীর নাছিরও মির্জা আব্বাস এর সুরে বক্তব্য দিতেন। ফলাফলঃ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও মীর নাছির পরাজিত হয়। বিএনপি ক্ষমতায় কিন্তু রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগেরই মেয়র।
এরপর কেয়ারটেকার সরকার আন্দোলন আরো গতি পায়। গোলাম আজমের উদ্ভাবিত কেয়ার টেকার সরকারের ফর্মূলা আওয়ামীলীগসহ প্রায় সব বিরোধী দল মেনে নেওয়ায় গোলাম আজমকে কটাক্ষ করে খালেদা জিয়া বলেন, ” দেশে প্রফেসর শুধুমাত্র একজন।” তাঁর উক্ত মন্তব্য তখনকার পত্রিকার ১ম পাতায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৯১ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দল-রাজাকার কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলো-এই অজুহাতে মতিউর রহমান নিজামীকে প্রচন্ড মারধর করা থেকে শুরু করে ১২ জুন ১৯৯৬ পর্যন্ত বৃহত্তর বিরোধী দল আওয়ামীলীগের পরিবর্তে জামায়াতই যেন বিএনপির প্রতিপক্ষ -সেরকম মনে করে বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে বলে জামায়াত মনে করতো। আর তাই বিএনপির পতন জামায়াতের কাম্য ছিলো।
বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতসহ সম্মলিত বিরোধী দলের এতো আন্দোলন সত্ত্বেও বিএনপির জনপ্রিয়তা তেমন কমানো যায়নি। ১২ জুন ইলেকশনের দিন সকালে বুথ ফেরত জরিপে বিএনপি আবারো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে -এরকম তথ্য পাওয়ার পর এবং বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসলে বিগত ৫ বছরের ন্যায় পরবর্তী ৫ বছরেও সাইজ করবে-আর তাই দুপুরের পর থেকে দাঁড়ি পাল্লার পরিবর্তে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জামায়াতের নেতাদের পক্ষ থেকে ভোটারদের বলা হয়। “বিএনপি ঠেকাও-দাঁড়িপাল্লার পরিবর্তে নৌকায় ভোট দাও”- এরকম রব তোলার পরও বিএনপি ১১৬ আসন পায়। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াত সর্বোতভাবে চেষ্টা না চালালে বিএনপি ১৯৯৬ এর নির্বাচনে আবারো ক্ষমতায় আসতো-আওয়ামীলীগ জিততে পারতো না।
৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামীলীগ শাসনের সময় জামায়াত বিএনপি বিভিন্ন কারণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। আর তাই ২০০১ সালের ইলেকশনে বিএনপি এককভাবে ১৯৩ আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জামায়াত ১৭ আসন পায়। আর আওয়ামীলীগ পায় ৬২ আসন। ঐক্য না থাকায় ১৯৯৬ সালের ইলেকশনে হারার স্মৃতি এবং ভবিষ্যতে ঐক্য অটুট রাখার জন্য বিএনপি জামায়াতের দুইজনকে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব দেয়। অন্যদিকে ১৯৯১ এ সমূহ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার ভাগ না নিয়ে পরবর্তীতে চরম বেকায়দায় পড়ার স্মৃতি রোমন্থন করে জামায়াত বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করে।
১ এপ্রিল ২০০৪, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এর জেটিতে ধরা পড়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র। যা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার কাছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মিডিয়াতে তা নিয়ে তখন তোলপাড় হয়েছিলো। ভারত সেই বিষয়টি নিয়ে তাদের অখন্ডতার স্বার্থে স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
তখনকার বিএনপি সরকার ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের বিচারটা যদি শেষ করে যেতো-তাহলে বিএনপির প্রতি ভারতের ক্ষোভ থাকতো না। ভারত ধরে নিয়েছে-বিএনপি ও জামায়াত ভারতের চরম শত্রু।
পরবর্তীতে অনেক ঘটনা প্রবাহ! বিএনপিসহ বিভিন্ন দল আওয়ামীলীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতকে দায়ী করে আসছে। ভারতের অস্তিত্ব বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্স বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসলে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে পারে-আর তাই ভবিষ্যতে কোনদিন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসুক-তা ভারত চাইবে না। ভারতের জায়গায় আমি কিংবা আপনি হলে তা-ই কি করতাম না?
২০০৮ এর নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা যা করা হয় – তার কোনটি আওয়ামী লীগ বাদ দেয়নি। বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে বিএনপির ১০% ভোট নৌকার পক্ষে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। আর তাই আওয়ামীলীগের নিরংকুশ বিজয়। অন্যদিকে বিএনপি ৩০, জামায়াত ২। ভোটে জিতে সরকার গঠন করে ১০ট্রাক অস্ত্রের মামলাটিতে তখনকার শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককে আসামি করে আদালতের মাধ্যমে তাঁদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। উক্ত দুইমন্ত্রীসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। বিএনপি – জামায়াত ভারতের প্রকাশ্য শত্রু-আওয়ামীলীগ তা প্রমাণ করে ছাড়ে আর এতে করে আওয়ামীলীগ ভারতের আরো বেশি আস্থালাভ করে। অন্যদিকে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রচুর ঋণ নিয়ে অন্যতম পরাশক্তি চীনের সাথেও দীর্ঘ বছর ধরে সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী করে তোলে আওয়ামীলীগ। দুই রাষ্ট্রকেই আওয়ামীলীগ তার পরম মিত্র বানিয়ে ফেলেছে।
আওয়ামীলীগ-বিএনপি কারো তেমন অপছন্দের নয় এবং পাশ্ববর্তী দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকিও যাতে না হয়-সেরকম একটি রাজনৈতিক দল ও সে দলের আদর্শ দেশে জনপ্রিয় করা খুবই জরুরি – সেরকম দল দেশে প্রতিষ্ঠা করা না গেলে আওয়ামী জোট বনাম বিএনপি জোট এর চলমান সংঘাত দিন দিন বাড়তে থাকবে। উভয় পক্ষ বেশ আর কম ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে-একপর্যায়ে মহা বিপর্যয়ের অবস্থা সৃষ্টি হয়ে কোন একটি দল নিশ্চিহ্নও হয়ে যেতে পারে। তার আগে দেশ রসাতলে যাবে। বিএনপি জোট পাল্টা প্রতিশোধ এর হুমকি দীর্ঘ বছর ধরে বারেবারে দিয়ে আসছে। আর তাই বিএনপি জোট/আওয়ামীলীগকে হুমকি দাতারা ব্যতীত আওয়ামীলীগের জন্য নিরাপদ কোন দল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার সমূহ সম্ভাবনা দেখা না দিলে আওয়ামীলীগ কক্ষনো ফেয়ার ইলেকশন দিবে না। বিরোধীরা শত আন্দোলন করলেও দেশের ও দশের শত ক্ষতি হলেও আওয়ামীলীগ সেদিকে নজর না দিয়ে টিকে থাকার সব চেষ্টা করে যাবে। দেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে।
দেশের রাজনীতি বিমুখ ৮৫% জনগণ এগিয়ে এসে নতুন ধারার অহিংস, ক্ষমাশীল ও সহনশীল একটি রাজনৈতিক দলকে পরবর্তী ফেয়ার ইলেকশনে জিতিয়ে আনার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারলে এবং বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আওয়ামীলীগ অবশ্যই ফেয়ার ইলেকশন দিবে। দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচাতে চাইলে রাজনীতি বিমুখ ৮৫% জনগণকে সম্পৃক্ত করে নতুন রাজনৈতিক কোন দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টির অন্য কোন শান্তিপূর্ণ বিকল্প নাই।
লেখক
সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
চট্টগ্রাম মহানগর শাখা
মন্তব্য করুন