মাহবুবুল আলম
ক্লাস টেন এ ওঠতেই হিমেল টের পেয়েছিল তার শরীরে বসন্ত এসে পা রেখেছে। তার শরীরে শুরু হয় ব্যাপক পরিবর্তন, ভেতরে ভেতর চলে ভাঙচুর। সারা শরীর জুড়ে কেমন একটা মোহনীয় মিষ্টি ঘ্রাণ জড়িয়ে থাকে, চোখের তারায় হাজার হাজার রঙিন প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ। মনের জানালায় বসে যখন তখন ডেকে ওঠে বিরহী কোকিল ।
গলার স্বরে পুরুষালী আওয়াজ, নাকের নিচে ঈদের চাঁদের মতো সুরু লালচে গোঁফ গজাতে শুরু করেছে। বিশেষ বিশেষ অঙ্গেও সদ্যগজানো তৃণের মতো লোম গজাচ্ছে। সারা মুখমন্ডলে ব্রণে ভরে গেছে। রাতে বাজে স্বপ্নে ট্রাউজার ভিজে যাচ্ছে।
ভীষণ অস্বস্তির মধ্যে মাঝরাতে মাঝেমধ্যেই ঘুম ভেঙে যায়।
আয়নায় নিজের গোঁফ দেখে নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে হিমেল। চঞ্চল প্রাণবন্ত ছেলেটা কেমন শান্ত আর লাজুক হয়ে ওঠে সহসাই। মেয়েদের দেখলেই তার মনে অন্যরকমের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মনে হয় কেমন এক অজানা ঝড়ে যেন তার মনোজগত লন্ডবন্ড হয়ে যাচ্ছে।
হিমেল যে স্কুলে পড়তো সেটা ছিল একটা কো- এডুকেশন স্কুল। এলাকার মধ্যে নামকরা স্কুল রসুলপুর গৌড়চন্দ্র আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। গ্রাম এলাকার স্কুল হিসেবে শহরের অনেক স্কুলের কাছে ঈর্ষনীয় ছিল এই স্কুলের নাম। বিশেষ করে এসএসসির ফলাফলের জন্য। এই স্কুলটি প্রতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে আসছে।
হিমেলের ক্লাসমেটদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল তার থেকে বয়সে বেশ বড়। এর মধ্য ওহাব, আমির হোসেন, নজরুল ছিল বিবাহিত। স্কুলের টিফিনের সময় অনেকেই বিভিন্ন চায়ের স্টলে এটা সেটা খেত কেউ কেউ বিড়ি সিগারেটও খেত। ক্লাসের ক্যাপ্টেন হিসেবে সবাই হিমেলকে সমীহ-খাতির, যত্ন করতো।
টিফিন আওয়ারে ওহাব, নজরুল ও আমির হোসেন হিমেলকে সাথে নিয়ে একসাথে বেরুত। ওদের সাথে যেতে ভাল লাগত না, কেননা, তারা তার সামনে বউদের সাথে রাতে কী হয়েছে না হয়েছে সেসমস্ত রগরগে কথাবার্তা বলতো, তাদের কথা শুনলে হিমেলের সারা শরীরে কেমন যেন শিহরণ জাগতো, শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠতো। কে যেন এসে হাত ধরে নিয়ে যতো কোনো এক অচেনা জগতে।
কিছুদিন আগেও হিমেলের গোঁফ ওঠছেনা বলে ছেলেরা আড়ালে আবডালে হিজড়া বলেও ডাকতো হাসাহাসি করতো। কারণ তার ক্লাসের বেশির ভাগ ছাত্রই তখন নিয়মিত সেভ করতো। হিমেলের গোঁফ এবং গলার স্বর পাল্টে যাওয়া নিয়ে
ক্লাসের বন্ধুরা ইয়ার্কি মারা শুরু করে-একদিন ওহাব সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে-
: হিমেইল্লা তুইতো পুরুষ হয়ে গেছিস, চল খিতিশ বাবুর দোকানে আজ মিষ্টি খাওয়াতে হবে।৷ ওহাবের
মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে আমির হোসেন বলে-
: ভাল কথা মনে করেছিস, চল হিমেল আজ তোকে
কিছুতেই ছাড়ছি না!
নজরুলও দুইজনকে সমর্থন করে বলে-
: ঠিক ঠিক! আজ তোকে ছাড়া হবে না, আজ আর পিছলে যেতে পারবিনা।
ওদেরকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হিমেল
বলেছিল-
: আমার কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই আজ তোমরা খাওয়াও আমি অন্যদিন খাওয়াবো।
সেই সময় ক্লাসমেট হাসি, আফরোজা ও আয়েশাকে ভীষণ ভাললাগতে শুরু করে। মনে হতো যদি তাদেরকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারতো তা হলে হয়তো মনের হাহাকার কিছুটা হলেও লাগব হতো। আফরোজার আড়চোখে তাকানো স্মিত হাসি
হিমেলের আপাদমস্তক নাড়িয়ে দিত। স্কুলের এক অনুষ্ঠানে গাওয়া “সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হওয়া এনে” গানটা প্রায়ই মনে অনুরণিত হতো। মনে হতো আফরোজা বোঝি তাকে উদ্দেশ্য করেই গানটা গেয়েছিল। এটা মনে করার
সংগত কারণও ছিল। কেননা, আফরোজা গান গওয়ার সময় বার বার আড়চোখে হিমেলের দিকে তাকাচ্ছিল। হিমেলের সম্পাদনায় গত বছর সোপান নামের যে ম্যাগাজিনটি বেরিয়েছিল তাতে আফরোজার একটি গল্প ছাপা হয়েছিল।
যেহেতু হিমেল ক্লাস ক্যাপ্টেন তাই তার জন্য বরাদ্দ থাকতো প্রথম সারির প্রথম সিটটি। তাদের ক্লাসের ছেলেরা যাতে মেয়েদেরকে টিজ করতে না পারে, সেজন্য মেয়েরা কমনরুমে থাকতো। সংশ্লিষ্ট টিচার ক্লাসে আসার সময় মেয়েদেরকে কমনরুম থেকে নিয়ে আসতেন, এবং ক্লাস শেষে ওদেরকে কমনরুমে নিয়ে যেতেন।
স্যারদের সাথে মেয়েরা যখন ক্লাসে ঢুকতো, তাদের শরীরের ঘ্রাণ এসে আছড়ে পড়তো হিমেলের নাকে-মুখে। এই ঘ্রাণ দারুণ উপভোগ করতো হিমেল। মনে হতো এভাবে যদি ওদের শরীরের ঘ্রাণে ডুবে থাকতে পারতো তা হলে জীবনটা অন্যরকম
হয়ে যেতো। খেলার সাথিদের কাছে পেতে খুবই ইচ্ছে করতো তার।
এমনই একটা ঘোরের মধ্যেই চলে আসে এস.এস.সি পরীক্ষা। পড়তে বসলেও মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কিছুই ভাল লাগে না তার। আফরোজা নামের মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়ায় হাতে তার একগুচ্ছ গোলাপ। কখনো চোখে ভাসে
হাসি, আবার কখনো আয়েশা নামের শ্যামঙ্গিনীর ছবি।
নিজের এমন টালমাটাল অবস্থার মধ্যে হিমেল নিজের মধ্যে ফিরে আসার চেষ্টা করে। ভাবে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। এসময় এমন ভাবনা ঠিক নয়। কিন্তু সে বুঝতে পারে না এ মনোঃজগত তার নিয়ন্ত্রণে নেই। তার শরীর নিয়ে
খেলায় মেতে ওঠে যৌবনের কারিগর হরমোন।
স্কুলের স্যারেরা আশা করছে, হিমেল ভাল রেজাল্ট করবে। কম করে হলেও সাত আটটা বিষয়ে লেটার মার্কস পেতে পারে। এমন কী মেধা তালিকায় নাম থাকতে পারে। এমন অবস্থার মধ্যেও হিমেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকে। হেড মাস্টারের নির্দেশে বিজ্ঞান গ্রুপের স্যারেরা এবং ইংরেজির স্যার এসে মাঝে মাঝে হিমেলের লেখাপড়ার তদারকি করছে । কেননা, হিমেল তাদের স্কুলের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।
এস.এস.সির পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর হিমেলকে নিয়ে সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। স্যারেরা যা আশা করেছিল তার থেকেও ভাল ফলাফল করেছে হিমেল। আট বিষয়ে লেটার মার্কসসহ বোর্ডের মধ্যে দশম স্থান অধিকার করেছে হিমেল স্কুলের ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী ফাস্ট ডিভিশন পেয়েছে।
স্কুলের সব ক্লাসের পক্ষ থেকে হিমেলকে শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয়েছে। সবাই শুভেচ্ছা জানাতে আসলেও হিমেলের চোখ একজনকে খোঁজে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কোথাও তাকে দেখা যাচ্ছে না সে বিকেলে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
হিমেল অবশ্য পরে জানতে পারে পরীক্ষার পর আফরোজার বিয়ে হয়ে গেছে। সেও ফাস্টডিভশন পেয়েছে। ছাত্রবস্থায় গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। আফরোজার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না হয়তো। অথচ ছাত্রি হিসেবে খুব মেধাবী ছিল। আফরোজাকে হিমেল মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলেছিল। তার অপ্রকাশিত প্রেম অপ্রকাশিতই থেকে গেল।
মেধা তালিকায় স্থান পওয়ায় পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে হিমেল জেলা শহরের সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছে। তার ইচ্ছা সে একজন ডাক্তার হয়ে গ্রামের অবহেলিত মানুষের চিকিৎসায় নিজকে নিয়োজিত করবে।
একাদশ শ্রেণির ইংরেজির প্রভাষক মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকতেই ছাত্ররা একসাথে ওঠে দাঁড়ায়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ক্লাসেই ইংরেজির প্রভাষক মঞ্জুশ্রী ম্যাডামকে দেখে কেমন ঘোরের মধ্যে পড়ে যায়। মানুষ কীভাবে এত সুন্দরী হতে পারে। আল্লাহ যেন নিজহাতে তাকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন দেখতে সুন্দরী তেমনই তার শরীরের গঠন। কলেজ জীবনে প্রথম ক্লাসটাকে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস হিসেবেই ধরা হয়। ক্লাসের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হওয়া ও বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক বিষয়ে অংশগ্রহণসহ আরো অনেক ইভেন্টের সাথে যুক্ত থাকে।
: সিট ডাউন সিট ডাউন। বলতেই সবাই একসাথে
বসে পড়ে।
মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম দাঁড়িয়ে থেকেই বলেন-
: প্রথম দিনই ইংরেজিতে লেকচার দিয়ে ঘাবড়ে দিতে
চাই না। আমরা ধীরে ধীরে ভোকাবুলারি আয়ত্বের মাধ্যমে স্পিকিং স্কিলটাকে বাড়িয়ে যতটুকু সম্ভব ইংরেজিতেই কনভারসেশন করার চেষ্টা করবো
তবে আজ আমরা নিজেদের মাতৃভাষার মাধ্যমেই পরিচিত হবো।
প্রথম দিনেই আগে আগে ক্লাসে এসে প্রথম সারির ডান পাশে বসেছে হিমেল।
ক্লাসে একটা মৃদু গুঞ্জন ওঠে। মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম এটেনশন প্লিজ! বলতেই গুঞ্জনটি থেমে যায়।
মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম বলেন-
: চলো এখন আমাদের পরিচয় পর্বটি সেরে নিই।
আমাকে দিয়েই শুরু করছি। আমার নাম মঞ্জুশ্রী রায়
প্রভাষক ইংরেজী বিভাগ। আমি তোমাদের ইংরেজি
পড়াবো। আমি আমার পরিচয় দিলাম। এখন তোমাদের পালা। তোমরা তোমাদের নাম, কোন স্কুল থেকে কোন বিভাগে পাশ করেছো, এসএসসিতে কার কী রেজাল্ট, ভবিষ্যতে কে কী হতে চাও, মানে হবি। আমি আমার বা-দিক থেকেই শুরু করছি।
প্রথমেই হিমেলকে ইশারা করে বলেন-
: তুমিই শুরু কর। হিমেল ওঠে দাঁড়ায়। এবং বলে-
: ম্যাডাম আমার নাম নাজমুল হাসান হিমেল। আমি
রসুলপুর গোবিন্দ চন্দ্র আদর্শ হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় আট বিষয়ে লেটার মার্কসসহ দশমস্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি ডাক্তার হতে চাই।
: ও! তুমিই নাজমুল হাসান হিমেল? তোমার নাম তো পত্রিকায় দেখেছি। তাছাড়া প্রিন্সিপাল স্যার তোমার কথা আমাকে বলেছেন। তোমাকে আমাদের কলেজে পেয়ে আমরা গর্বিত। আশা করি তুমি আমাদের কলেজের নাম আরো উজ্জ্বল করবে।
খুবই উচ্ছ্বসিত ভাবে কথাগুলো বলেন। এবার তুমি বস।
ক্লাসে উপস্থিত সকল ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টি তখন হিমেলের দিকে। মঞ্জশ্রী ম্যাডাম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন-
: ইতিমধ্যে তোমরা শুনেছো, হিমেলের মত একজন মেধাবী ছাত্রকে আমরা আমাদের কলেজে পেয়েছি। আমি আশা করবো তোমরা সবাই হিমেলকে অনুস্মরণ করে চলবে। সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষে মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম বলেন- তোমাদের একমাত্র কাজ হবে পড়া, পড়া এবং শুধু পড়া। মনে রেখো বিদ্যাপিঠ খুবই পবিত্র স্থান। এমন কোনো কাজ করবে না যাতে
বিদ্যাপীঠের অসন্মান হয়। আর একটা কথা বলি তোমরা এখন বয়োঃসন্ধীকালে। এসময়টা খুব আবেগের। আবেগের বশবতী হয়ে এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের শিক্ষা জীবনটাই ধ্বংস হয়ে যায়। এ বয়সের পদস্খলন পুরো জীবনটাকে গ্লানিময় করে তুলতে পারে। তবে আজ এপর্যন্তই। বাই।
বলেই মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান।
হিমেল একদৃষ্টে ম্যাডামে চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ম্যাডামের পারফিউমের ঘ্রাণে বিভোর হয় হারিয়ে যায় নিজের মধ্যে। মঞ্জুশ্রী ম্যাডামের অপরূপ সৌন্দর্য ও দেহবল্লরী হিমেলের মনোজগতে উত্তাল ঝড় তোলে। মনে মনে ম্যাডামকে ভালোবেসে ফেলে সে। এ কেমন প্রেম, এ কেমন দহন কিছুই বুঝতে পারছে না সে। নিজকে নিজে প্রশ্ন করে
আমি কি পাগল হয়ে গেলাম। নাকি পাগল হয়ে যাবো?
হোস্টেলে এসেও অজানিত এক ধরনের অস্থিরতা হিমেলকে ঘিরে রাখে। রাতেও ঘুমাতে পারে না সে।
মঞ্জুরী ম্যাডাম চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়, তার হাঁটার আওয়াজ যেন লাবডিব লাবডিব করে বুকের
ভেতরে বাজতে থাকে।
এরপর থেকে মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকলেই হিমেলের মনে একই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। ম্যাডামের শরীরের মোহনীয় ঘ্রাণের মাদকতায় ডুবে থাকে। ম্যাডাম কী পড়াচ্ছে না পড়াচ্ছে তা আত্মস্থ করতে পারছে না। কিন্তু ক্লাসের বান্ধবী
কারো প্রতি সে তেমন আকর্ষণ অনুভব করে না। তার ধ্যানে-জ্ঞানে শুধুই মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম।
একদিন ক্লাসে মঞ্জুশ্রী ম্যাডাম হিমেলকে বলে-
: শোন হিমেল তোমার যদি কোনো গ্রামাটিক বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হয় তা হলে নির্দ্বিধায আমাকে বলবে।আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ইংরেজি বিষয়ে তোমাকে সাহায্য করবো।
এরপর থেকে হিমেল ভাবতে থাকে কী করলে ম্যাডামের আরো কাছে যাওয়া যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। তাকে প্রাইভেট পড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে একদিন বিকেলে সে হোস্টেল থেকে হাঁটতে হাঁটতে মঞ্জুশ্রী ম্যাডামের বাসা গিয়ে হাজির। বাসার কলিংবেল টিপতেই এক ভদ্রলোক দরজা খুলে ভারিক্কি গলায় জিজ্ঞেস করে-
: কী চাই?
দানবের মতো লম্বা, বেঢক লোকটাকে দেখে আমতা আমতা করে হিমেল বলে-
: আমি ম্যাডামের ছাত্র।
: ছাত্র ভাল কথা। এখানে কী চাই।
: না নাহ! ম্যাডাম বলেছিলেন আসার জন্য, তাই…
: ঠিকাছে ঠিকাছে দাঁড়াও আমি ম্যাডামকে ঢেকে দিচ্ছি। লোকটি মঞ্জু! মঞ্জু ডাকতে ডাকতে ভেতরে
চলে গেল।
এখানে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছিল না হিমেলের, সে চলে আসার জন্য পা বাড়াতে গেলে মঞ্জুশ্রী ম্যাডামের গলা শুনে থমকে দাঁড়ায়।
: আরে হিমেল তুমি হঠাৎ করে? এসো এসো ভেতরে এসে বসো।
হিমেলকে নিয়ে ম্যাডাম ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে। হিমেল কাচুমাচু হয়ে একটা সোফায় বসে। ড্রয়িং রুমটা ম্যাডামের মত পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। সারা ঘরেই কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে আছে। হিমেল কী বলবে না বলবে তা নিজে
নিজে গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু সে যেন কিছুই গোছাতে পারছে না। ম্যাডামের ডাকে তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায়। অনেকটা অপ্রস্তুতের মতই বলে-
: ম্যাডাম! আপনি কী টিউশনি করান।
: না না হিমেল আমি টিউশনি করাই না। কেন বল তো?
না! না! তাহলে থাক।
থাকবে কেন? বল। নির্দ্বিধায় বল।
আবারও অপ্রস্তুতভাবেই বলে-
ভাবছিলাম আপনি যদি টিউশন করাতেন তা হলে আমার পড়ার ইচ্ছা ছিল।
: না হিমেল। তবে তুমি চাইলে কলেজটাইমে আমার অফপ্রিরিয়ডে মাঝে মাঝে আমার সাহায্য নিতে পারবে।
: ঠিক আছে ম্যাডাম। তাহলে এখন আমি আসি।
: যাবে কেন, তোমাকে চা দিচ্ছি। চা খেয়ে যাও।
: না ম্যাডাম আমি চা খাই না।
কথার মধ্যেই লোকটি বাজারের থলে নিয়ে বলতে বলতে ঘরে ঢুকে।
: মঞ্জু আমি তাহলে গেলাম। বাবুকে খেয়ালে রেখো।
লিস্টের বাইরে কি আর কিছু আনতে হবে?
: না। আর কিছু লাগবে না। ম্যাডাম বলে।
লোকটি বেরিয়ে যায়। সাথে সাথে হিমেল ও ওঠে দাঁড়ায়। বিনয়ের সঙ্গে হিমেল বলে-
: ম্যাডাম আমি তাহলে আসি।
: যাবে? ওকে। তাহলে যাও।
হিমেল হতাশায় ডুবে হোস্টেলে ফিরে আসে। সন্ধ্যার পর যথারীতি পড়তে বসে। কিন্তু হিমেল কিছুতেই পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না। ভাবনার ফাঁকফোকর পেরিয়ে ভেসে ওঠছে ম্যাডামের বাসার লোকটির ছবি। বাসায় থাকতেই হিমেল বুঝে গিয়েছিল লোকটি ম্যাডামের বর। ড্রয়িংরুমে সাটানো ম্যাডামের বিয়ের ছবি দেখেই হিমেল নিশ্চিত হয়েছিল ওনিই ম্যাডামের বর।
হিমেল কিছুতেই বুঝতে পারছে না, এমন একজন সুন্দরী বিসিএস ক্যাডারের মহিলার স্বামী এমন বেডক হয় কী করে। হিমেল নিজের মন থেকে মঞ্জুশ্রী ম্যাডামের নামটি মুছে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। হোস্টেল বয় কালামের ডাকে হিমেল নিজের মধ্যে ফিরে আসে-
: হিমেল ভাই, ডাইনিং রেডি। সবাই গিয়ে আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।
হিমেল ওঠে দাঁড়ায় এবং হিমেল রোবটিক পায়ে
কালামের সাথে ডাইনিংয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
মন্তব্য করুন