নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে।।
অবৈধ ভাবে ইটভাটা নির্মাণের ছড়াছড়ি, ছড়িয়ে পড়েছে হবিগঞ্জ জেলায়। কোন ধরণের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রযত্র গড়ে উঠছে এসব ইটভাটা। ফসলি জমি, নদীর পাড় ও স্কুল কলেজ ঘেষে প্রতিনিয়ত এসব ভাটা গড়ে উঠায় হুমকি পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। শুধু তাই নয় এসব ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোয়ায় বাড়ছে শ্বাস কষ্টসহ বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই। এছাড়াও ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নেয়ার ফরে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। ভাটার বিষাক্ত বর্জে ব্যাঘাত ঘটছে কৃষি কাজে। অনেকের মাঝে আবার দেখা দিয়েছে নানা রোগ। জেলা দীর্ঘদিন যাবত প্রকাশ্যে এমন কার্মকান্ড চলে আসলেও প্রশাসন যেন নির্বিকার। যদিও প্রশাসন বলছে, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে তৎপর রয়েছেন তারা। প্রতিনিয়তই চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলায় প্রায় ১২০টির অধিক ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিভাগ ভাটারই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। আবার কোন কোন ভাটার নেই লাইসেন্সও। যদিও কোন কোন ভাটার লাইসেন্স আছে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে মেয়াদ। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় মোট ভাটার সংখ্যা ৯৯টি। এর মধ্যে জেলার বাহুবল চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলায়ই শুধু রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ফসলি জমি, নদীর পাড়, স্কুল কলেজ ও লোকালয়ের আশপাশে গড়ে ওঠা এসব ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। ভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহারের কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। তাই এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী স্থানীয়দের।
জানা গেছে, সরকারি নীতিমালায় সবগুলো ইটভাটাকে পরিবেশসম্মত জিগজাগ চুল্লিকরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিচালিত হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতিকারক এসব ইটভাটা। এতে করে সরকার প্রতি বছর এসব ভাটা থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পরিবেশবাদীদের নদীরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা গেলেও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়কারী এসব ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না পরিবেশবান্ধব সংগঠনগলোও। এতে ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষের মাঝে ক্রমেই বাড়ছে অসন্তেুাষ। অনুমোদন ছাড়াও নবায়নবিহীন এসব ইটভাটার প্রশাসনের চোখের সামনে কীভাবে চলছে এ প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের।
এদিকে, অবৈধ ও নিয়মনীতি না মেনে পরিচালিত ইটভাটার তালিকা তৈরী করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হবিগঞ্জ পরিবেশ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পবন চন্দ্র বর্মণ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরকে এ নির্দেশনা দেন। নির্দেশনায় বলা হয়, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা ইটভাটার কার্যক্রম তদন্ত ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করবেন। জেলায় কতটি ইটভাটা আছে, সেগুলোর মধ্যে কয়টির অনুমোদন আছে, পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কি না, নিয়মনীতি অনুসরণ করছে কি না এবং কয়টি ভাটার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা আছে, তা তদন্ত করে আগামী ২ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ভাটা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত কালো ধোয়া জলবায়ুতে বিশাল প্রভাব ফেলছে। যার কারণে হুমকি রয়েছে এলাকার পরিবেশসহ জীববৈচিত্র। ভাটা মালিকরা নিজেদের সুবিধার্থে এসব কর্মকান্ড চালাতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ইটভাটা সম্পর্কে আমরা আদালত থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, যারা অবৈধ ভাবে ভাটা পরিচালনা করছেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সামান্যতম সমস্যা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নবীগঞ্জ উপজলো সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ জানান, বুধবারও বেশ কয়েকটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। করা হয়েছে জরিমানাও। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কঠোর রয়েছে। যে কোন ধরণের অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আইনের উর্ধ্বে কেউ নেয়, প্রতিটি ভাটা পরিদর্শন করে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন