ডেস্ক রিপোর্টঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যানদের ভরাডুবি ঘটেছে। উপজেলার ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যানদের।
একটি ইউনিয়নে মাত্র ২২ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। একটি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থী হননি। বাকি সবগুলোতেই পরাজয়।
কোনো কোনো ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যানরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসতে পারেননি। তৃতীয় স্থানে হয়েছে তাদের অবস্থান!
জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা, উন্নয়নে অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, এরকম নানাবিধ কারণে বর্তমান চেয়ারম্যানদের এমন ভরাডুবি ঘটেছে বলে মনে করছেন স্ব-স্ব এলাকার সচেতন নাগরিকেরা।
জানা যায়, দোয়ারাবাজার সদরে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপিপন্থী আব্দুল বারী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও প্রায় দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আব্দুল হামিদের কাছে পরাজয় বরণ করেছেন।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আমিরুল হক দুই হাজারেরও বেশি ভোটে জহিরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
বোগলাবাজার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপিপন্থী আরিফুল ইসলাম জুয়েল দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিলন খানের কাছে পরাজয় বরণ করেছেন।
বাংলাবাজার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীপন্থী জসীম উদ্দিন রানা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম আবুল হোসেনের কাছে তিন হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
দোহালিয়া ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামিমুল ইসলাম শামিম। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজি আনোয়ার মিয়া আনু মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। নির্বাচনে তিনি রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। ভোটের ব্যবধান প্রায় আড়াই হাজার।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল ওয়াহিদ। তার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন বিএনপিপন্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ। তিনিও নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। নির্বাচনী ফলাফলে তার স্থান তৃতীয়। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে এসেছেন বিএনপিপন্থী অপর প্রার্থী ওলিউর রহমান। তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেছেন।
আরো দেখুনঃ কমলগঞ্জে মণিপুরী মহারাসলীলা ১৯ নভেম্বর, পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের প্রস্তুতি
মান্নারগাঁও ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপিপন্থী আবু হেনা আজিজ নিজ দলের অপর প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। ওই ইউনিয়নে জয়লাভ করেছেন বিএনপিপন্থী ইজ্জত আলী তালুকদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অসিত কুমার দাশ। এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যানের অবস্থান তৃতীয়।
উপজেলার একটিমাত্র ইউনিয়ন নরসিংপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান ২২ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূর উদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপিপন্থী প্রার্থী সামছুল হক নমুকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নূর উদ্দিন পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামছুল হক নমু চশমা প্রতীকে নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৬১২ ভোট।
আরো খবরঃ সিসিকের ভ্রাম্যামান আদালতের ২৮ মামলা, ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা
সুরমা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের খন্দকার মামুনুর রশিদ এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার ইউনিয়নে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এমএ হালিম বীরপ্রতীক। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ। তিনি ৪০০ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেন।
বর্তমান চেয়ারম্যানদের এমন ভরাডুবি নিয়ে গোটা উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সচেতন নাগরিকদের অভিমত, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এর মূল্য এভাবেই দিতে হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সুনামগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফজলুল করিম সাঈদ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জনসম্পৃক্ততা কমে গেলে এ রকম ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, জনগণের মৌলিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হলে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে ভোটের মাধ্যমে এর সমুচিত জবাব দেন। দোয়ারাবাজারের নির্বাচনী ফলাফলে এমনটাই ঘটেছে। এখান থেকে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন