নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য পলো বাওয়া উৎসব। পুরনো এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হবিগঞ্জ এর নবীগঞ্জ উপজেলার বিজনা নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পলো বাওয়া উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। উৎসবে যোগ দিতে দূর দুরান্ত থেকে আসেন শিকারীরা। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী)দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বিজনা নদীতে পাঁচগ্রামের উদ্যোগে একসঙ্গে পলো নিয়ে নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পলো বাওয়া উৎসব অংশগ্রহণ করেন মাছ শিকারীরা। জানা যায়- প্রাচীনকাল থেকে পৌষ-মাঘ মাসে বিল বা উন্মুক্ত হাওরে দল বেঁধে মাছ শিকার করা হতো। যাকে বলা হয় পলো বাইছ বা পলো উৎসব। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কালের পরিক্রমায় এখন সেই পলো উৎসব হারিয়ে গেছে। গ্রাম বাংলা প্রাচীন সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে গতকাল মঙ্গলবার নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বুড়িনাও, ভরগাঁও, বড়কান্দি, কুড়াগাঁও, পানিউমদা গ্রামবাসীর উদ্যোগে বিজনা নদীতে পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে পানিউমদা ইউনিয়নের বিভিন্ন-গ্রামসহ পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রাম থেকে আগত নানা বয়সের কয়েক শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাদের হৈ-হুল্লোড়ে অন্যরকম আমেজ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দুই-তিন ঘণ্টা মাছ ধরা শেষে একে একে উঠে আসেন তারা। সবার হাতে ছিল নানা ধরনের দেশীয় মাছ। কারো হাতে ছিল বড় বোয়াল, কারো হাতে ছিল কাতলা, শোল, গজার কিংবা রুই মাছ। আর জাল দিয়ে ছোটরা শিকার করেন টেংরা-পুঁটিসহ ছোট মাছ। পানিউমদা ইউনিয়নের পানিউমদা গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন- ছোটবেলায় দেখতাম অনেক বড় করে এই পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো হয় না। তারপরও গ্রাম-বাংলার প্রাচীন এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পলো বাওয়া উৎসবের এমন আয়োজন সত্যি প্রশংসনীয়, এই উদ্যোগ যেন অব্যাহত থাকে। ভরগাঁও গ্রামের শামীম আহমেদ মহসিন জানান- আমাদের শতবছরের পুরনো ঐহিত্য পলো বাওয়া উৎসব। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষ পলো বাওয়াকে উৎসব হিসেবে মনে করে অংশগ্রহণ করে আসছে। প্রত্যেক বছর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম হতে নানা বয়সের মানুষের সঙ্গে আমিও পলো বাওয়ায় অংশগ্রহণ করি।
মহিবুল হাসান মামুন বলেন- দীর্ঘদিন ধরে বিজনা নদীতে পলো বাওয়া উৎসব হয়ে আসছে, এটি আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি, পলো বাওয়া উৎসব যাতে অব্যাহত থাকে সেই প্রত্যাশা রইলো।
পানিউমদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বলেন- একটা সময় শুষ্ক মৌসুমে হাওর ও বিলের পানি শুকিয়ে আসতো, গ্রামের মানুষ তখন দল বেঁধে পলো ও ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠতেন। পুরনো সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পাঁচ গ্রামের উদ্যোগে প্রতিবছর পলো পাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করে।
আপনার মতামত লিখুন :