কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আপন বড় ভাইয়ের অত্যাচারে নিজ বসতবাড়িতে বসবাস করতে পারছেন না প্রবাসী শাহিন মিয়া (৩১) নামের এক ব্যক্তি। বাড়িতে ঠাঁই না হওয়ায় স্ত্রী ও দুই অবুঝ কন্যা সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাযাবরের মতো দিনযাপন করছেন তিনি। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চান্দগাঁও গ্রামের। বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে হাজীপুর ইউনিয়নের পীরের বাজার এলাকায় বোনের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওমান প্রবাসী শাহিন মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী শাহিন মিয়া বসতবাড়িতে ফেরার কথা জানিয়ে বলেন, আমার পিতা মৃত রুশন আলী। আমাদের ছোট রেখে বাবা মারা যান। পরিবারে ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমি দীর্ঘদিন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বসবাস করছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের মৌরসি সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যত্র চার ভাইয়ের নামে ৫২ শতক জমি দলিল করে বাড়ি তৈরি করা হয়। সেই বাড়িতে আমরা চার ভাই একত্রে বসবাস করলেও ২০২১ সালে বড় ভাইয়ের কারণে আমরা চার ভাই আলাদা হয়ে যাই। এরপর আমি আমার অংশে একটি পাকা ও কাচা ঘর তৈরির কাজ শুরু করি। কাঁচা ঘরে আমার পরিবার কিছুদিন থাকলেও পাকা ঘরের কাজ নির্মাণাধীন থাকাবস্থায় আমার বড়ভাই লিয়াকত আলী আমি প্রবাসে থাকাবস্থায় ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী সেলিনা বেগম ও অবুঝ দুটি মেয়ে সন্তানকে আমার বসতঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন। বর্তমানে ওই বাড়ির ভূমি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিচারকদের সিদ্ধান্ত উপস্থিতভাবে মেনে নিলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য আমার ভাই লিয়াকত আলী মোটা অংকের টাকা ছাড়া রাজি হননি।
একই নিয়মে ২০২২ সালে আমি বিচারকদের সিদ্ধান্তমতে দেড় লক্ষ টাকা আমার ভাই লিয়াকতকে দিয়েছি। সেই লোভে আমার ভাই লিয়াকত আমি যতবার প্রবাস থেকে দেশে আসি ততবারই বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে আমাকে টাকার জন্য হয়রানি করে আসছেন। বর্তমানে আমার ভাই লিয়াকত আলীর বাঁধার কারণে আমি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসতবাড়িতে ঢুকতে পারছিনা। যাযাবরের মতো স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে দিনযাপন করছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রবাসী শাহিন মিয়া বলেন, আমরা যৌথ থাকাবস্থায় আমিসহ অন্য ভাইয়েরা প্রবাসে টাকা উপার্জন করে বাড়িতে বড়ভাই লিয়াকত আলীর কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠাই। তিনি সেই টাকা নিজের মতো করে খরচ করেন এবং আমাদের সকল ভাইয়ের নামে দলিল না করে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে প্রায় ১৫০ শতক জমি নিজের নামে দলিল সম্পাদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সময়ে হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা ওয়াদুদ বক্স, ইউপি সদস্য রাজা মিয়ার কাছে একাধিকবার ধরণা দিলেও তারা বিষয়টির স্থায়ী কোন সমাধান করে দেননি। বরং তারা বিষয়টি সমাধান না করার জন্য নানা টালবাহানা করতে থাকেন। চলতি বছরের ৯ অক্টোবর আমি ওমান থেকে দেশে আসলে সকল বিরোধের মীমাংসার উদ্যোগ নিলেও আমার ভাই তাতে কোন সাড়া দেননি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল, মেম্বার রাজা মিয়া ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবগত করলে তারা সালিশি বৈঠক করেন। বৈঠকে আমার ভাই উপস্থিত সকলের সামনে সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও বাড়িতে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত বদলে আমার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। বর্তমানে আমার ভাই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সবসময় বসে থাকেন যাতে আমি বসতবাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢুকতে না পারি।
প্রবাসী শাহিন মিয়া স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি যেন তার বসতবাড়িতে বসবাস করতে পারেন এজন্য তিনি প্রশাসনসহ সমাজের সকল বিবেকবান মানুষের হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্থানীয় মুরব্বি তাজু মিয়া, কনু মিয়া, প্রবাসী শাহিনের স্ত্রী সেলিনা বেগম, বোন সিরাজুন বেগম ও দিলারা বেগম, ভগ্নিপতি জমসেদ খা ও লিয়াকত আলী।
অভিযোগ প্রসঙ্গে লিয়াকত আলী মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাই বাড়ি আসতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমার পাওনা টাকা দিতে হবে বলেই সেই ভয়ে সে বাড়িতে আসছে না। বিভিন্ন সময়ে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছি সত্য কথা কিন্তু বাকি টাকা সে এখনো দিচ্ছে না। বিচারকরা আমাকে কোন সময় না দিয়ে একতরফা আমার ভাইয়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, লিয়াকত আলী টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। টাকার জন্য তার আরো দুই ভাইকে বাড়ি থেকে বিদায় করেছে। এখন চাচ্ছে ছোটভাইকেও বাড়ি থেকে বের করে দিতে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হলেও লিয়াকতের অসহযোগিতার কারণে বসতবাড়িতে ঢুকতে পারেনি প্রবাসী শাহিন। আমি শাহিনকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
মন্তব্য করুন