পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার অভিযোগে তিন জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরে স্যামসাং শো রুমের তৃতীয় তলার বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি নামের কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়।
এ সময় তাদের সংগঠনের আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়। আটক ব্যক্তিরা হলেন, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি মফিজুল ইসলাম (৫২), সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম (৪৭) ও সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম (৪৫)। এদের মধ্যে মফিজুলের বাড়ি জেলার বোদা উপজেলার আমতলা কাজীপাড়া এলাকায়,আমিনুলের বাড়ি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের ঝাকুয়াকালি এলাকায় এবং সাদেকুল ইসলামের বাড়ি জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকায়। তিনজনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন আমিনুল ইসলাম।
ভুক্তভোগীরা জানায়, বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও সম্পাদকসহ কমিটির এই ১০ সদস্য বিভিন্ন স্থানে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও জরিমানা আদায় করে আসছিলেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষের দোকানে অভিযান চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন টাকা।
সোমবার তাদের জরিমানা করা একটি রশিদ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চগড় জেলা শহরের স্যামসাং শো রুম ভবনের তৃতীয় তলায় করেছেন তাদের অফিস। সেখান থেকেই চলতো তাদের কার্যক্রম।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে একই কায়দায় মাইক্রোবাস নিয়ে তারা অভিযানের জন্য প্রস্ততি নেয়ার সময় তাদের ৩ জনকে আটক করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী। পরে তাদের পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার স্বাক্ষরিত পঞ্চগড় জেলা কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহসভাপতি লুপনা আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া পায়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক সোলেমান আলী, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, আইন বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাজিদা আক্তার ও জেসমিন আক্তার। ১০ সদস্যের এই ভুয়া ভ্রাম্যমান আদালত টিম গত সোমবার পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকার ১০ টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা করে টাকা আদায় করে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা বাজারের দোকানদার তরিকুল ইসলাম বলেন, তারা ৪ জন একটি মাইক্রোবাসে করে আমাদের বাজারে আসে। এ সময় নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আমাদের জানায় তাদের ২ লাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রথমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে চায়। পরে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা দিয়ে দ্রুত চলে যায়। পরে আমাদের সন্দেহ হলে আমরা বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হই এরা প্রতারক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে আর কেউ গরিব মানুষের সাথে এমন অন্যায় করার সাহস না পায়।
বাংলাদেশ কনজুমার রাইটস সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও আটক মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। আমরা প্রাকটিস করছিলাম। আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাদেরকে ছোট ছোট জরিমানা করেছি। আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলেছেন যে আমরা ছোট খাটো জরিমানা করতে পারবো। কিন্ ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করছিল। শুধু পঞ্চগড় নয় অন্য জেলাতেও এমনটি করেছে। তাদের সাথে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কোন সম্পর্ক নেই। কখনোই ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরাই মামলা করছে। এখানে তাদের কোন কার্যালয় যেন না থাকে আমরা সেই ব্যবস্থা নেবো।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, এ ঘটনায় থানার মামলার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন