স্বর্ণালী অতীতের ফসল পাট। এই পাটকে এক সময় বলা হতো বাংলাদেশের সোনালী আঁশ। কিন্তু অনেক আগেই আমাদের দেশ থেকে এই সোনালী আঁশ পাট তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। কৃষকরা এক সময় প্রধান ফসল হিসাবে এই পাট চাষ করতো। কিন্তু সময়ের আর্বতনে ক্রমান্বয়ে ছোট-বড় পাট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমতে থাকে পাটের চাহিদা। এখন উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বিক্ষিপ্ত আকারে কিছু কিছু জমিতে পাটের আবাদ চোখে পড়ে। কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজন মতো পাট চাষ করছে।
সরকারের পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে বিভিন্ন কারণে দিন দিন কমতে থাকে পাটের মূল্য। এতে করে কৃষকদের পাট চাষ করে লোকসান গুনতে হতো। আরও অনেক কারণেই বাংলাদেশের কৃষকরা বাপ-দাদার এক সময়ের জনপ্রিয় লাভজনক ফসল পাটের চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। আর তাই সারা দেশের ন্যায় নবীগঞ্জ উপজেলায় দিন দিন শূন্যের কোঠায় যাচ্ছে পাট চাষের পরিমাণ। অনেকেই আবার পাটকাঠির জন্য স্বল্প পরিমান চাষ করেন পাট। বাণিজ্যিক ভাবে উপজেলায় আর পাট চাষ করা হয় না বললেই চলে। এর কারণ হলো পাট চাষের প্রতি কৃষকদের অনাগ্রহ। তবে এই সোনালী আঁশকে আবার ফিরিয়ে আনতে গ্রামাঞ্চলের কৃষকদেরকে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি ভাবে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়,এক সময়ের এদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল সোনালী আঁশ হিসাবে খ্যাত পরিবেশ বান্ধব পাটের চাষ। বর্তমানে এই পাট চাষে উপজেলার কৃষক দিন দিন আগ্রাহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে এবার পাটের ভরা মৌসুমেও পাট মিলেনি উপজেলার হাট বাজার গুলোতে। এদিকে পাট চাষে আগ্রহ হারনোর পেছনে প্রতি বছর বাজারে পাটের মূল্য দরপতনকেও এর জন্য দায়ী করছেন চাষিরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের মূল্য দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট পচানো পানির অভাবেই কৃষকরা পাট চাষে আগ্রাহ হারিয়ে ফেলেছে। সেখানে তৈরি করা হতো পাটের দড়ি, বস্তাসহ নানা পন্য। সে সময় সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন শত শত টন পাট ক্রয় করা হতো চাষীদের নিকট থেকে। ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকরাও ঝুঁকে পড়তো ব্যাপকহারে পাটচাষে। নবীগঞ্জ থেকে এ পাটগুলো দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জুটমিলে নৌপথে ও রেলপথে নিয়ে যাওয়া হতো।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এক সময় পাট চাষ হতো শত শত বিঘা জমিতে ।সেই উপজেলায় বর্তমানে পাট চাষ হাতে গোনা কয়েক বিঘা জমিতে। উপজেলায় শতকরা ৮০শতাংশ কমেছে পাটের চাষ। প্রতি বছরই কমছে এই পাট চাষের পরিমান। চলতি মৌসুমে উপজেলায় মাত্র ১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পাটের মূল্য কম হওয়াসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষকেরা পাট চাষে এবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এদিকে পাটের চাষ কম হওয়ায় জ্বালানীকাজে ব্যবহার্য পাটখড়ির মূল্য আকাশচুম্বি হয়েছে। ফলে মধ্যম আয়ের পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তি।
উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপকালে জানান, আগের দিনে দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু পাটের আবাদ চোখে পড়তো। এক সময় আমাদের বাব দাদারা ২০-৩০ বিঘা জমিতে টাপের চাষ করতো। তখন পাটই ছিলো প্রধান ফসল কিন্তু এখন আর আমাদের মাঠে পাটের আবাদ চোখে পড়ে না। বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি, মূল্য কম হওয়ায় আমরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
পাট চাষ করে পাট পচানোর জায়গা ও পানির অভাবে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়েছিলো। আর মোট কথা পাট চাষ করে আমাদের লোকশান গুনতে হয়। শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজনের জন্য কিছু পরিমাণ পাট চাষ করি। ওই জমিগুলোতে এবার ধান সহ অন্যান্য আবাদ করে আমরা অধিক পরিমান লাভবান হয়েছি।
এব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বলেন, বিগত বছর গুলোতে পাটের বাজার মন্দা হওয়াসহ নানা কারণে এই ফসলের প্রতি চাষিদের আগ্রহ কমে গেছে। বর্তমান সরকার খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যে পরিবেশ বান্ধব পাটের মোড়কসহ পাটের বহুবিদ ব্যবহার বৃদ্ধি করায় বর্তমান পাটের উৎপাদন ও বাজার দর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই আগামীদিনে এই আবাদের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন
ReplyForward |
মন্তব্য করুন