মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
সমাজে কিংবা দেশে চলমান দৃষ্টিকটু আচরণ চলতে থাকলে সেসব কিছুতে সমাধানের ভূমিকা না রেখে এড়িয়ে যাওয়া আমাদের কারো উচিত নয়। এড়িয়ে যাওয়া তো আর সমাধান নয়। সমাজে সংগঠিত পছন্দ কিংবা অপছন্দ প্রত্যেক ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে সমাজের স্বার্থে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। ভালো ঘটনার পজেটিভ প্রতিক্রিয়া চালানো হলে ভালো কাজগুলো প্রমোট হবে অন্যদিকে খারাপ কাজগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া চালানো না হলে খারাপ কাজগুলো বাড়তে থাকবে।
মুশতাক-তিশাকে নিয়ে আমার লিখা পূর্বের আর্টিকেল “মা হওয়া উচিত বান্ধবী অন্যদিকে পিতা হওয়া উচিত বন্ধু”-উক্ত শিরোনামে আমার লেখা আর্টিকেলটিকে বেশির ভাগ পাঠক প্রশংসা করলেও হাতেগোনা কয়েকজন তাদের নিয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনা না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমার আর্টিকেলটি শুধুমাত্র মুশতাক তিশাকে নিয়ে ছিলো না। পুরো সমাজের মা-বাবা ও সন্তানদের উদ্দেশ্যেও ছিলো। শিক্ষক বাতায়ন গ্রুপে সেটা কেনো এপ্রোভ করা হলো-এরকম আপত্তিও আমার এক ভাই করেছেন। আমি কিংবা আপনি আলোচনা কিংবা সমালোচনা না করলেও তাদের নিয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনা থেমে নেই। তারা সারা বাংলাদেশে ভাইরাল। আমার কিংবা আপনার আলোচনার আগেই তারা ভাইরাল হয়ে গেছে।
ভাইরাল বিষয়ের বিষয়বস্তুর কারণে দুই ধরণের প্রভাব সমাজে পড়ে। একটি পজেটিভ অন্যটি নেগেটিভ। তাদের বিষয়টির প্রভাব পজেটিভ হওয়ার কোনো কিছুই নেই। সবই নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে। তারা দুইজন মিডিয়াতে নিজেদের একান্ত আগ্রহে কিংবা মিডিয়ার একাংশের অতি উৎসাহে তাদের কর্মকান্ডের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে যেভাবে মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে-তাতে সমাজের অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের মতো কর্মকান্ড করতে লজ্জা কিংবা সংকোচবোধ করবে না। তাদের কদর্য কর্মকান্ড প্রমোট হবে। মা-বাবাকে এভয়েড তথা এড়িয়ে এরকম বিয়ে হতে থাকলে সেটার কুপ্রভাব অবশ্যই সমাজে পড়বে। আর তাই তিশা-মুশতাকের কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি হয়ে তিশার মা-বাবার মতো অবস্থায় কোনো মা-বাবা যাতে পতিত না হন-তারজন্য সমস্যা চিহ্নিত পূর্বক সেসবের সমাধানের কৌশল ভাইরাল করার দরকার।
আমি কিংবা আপনি তিশা-মুশতাককে যতোই অপছন্দ করি না কেনো-তাদেরকে মিডিয়া লুপে নিয়েছে। তিশা-মুশতাককে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ চিনে ফেলেছে কিন্তু সে জায়গায় বাংলাদেশের অর্ধ শতাধিক মন্ত্রীকেও তিশা-মুশতাকের মতো মানুষে চিনে না। তারা দুইজনই সেলিব্রিটি। আমি আপনি তাদের চেয়ে যতোই ভালো হই না কেনো অপরিচিত কোনো জায়গায় গেলে তিশা-মুশতাক পরিচিতির কারণে যে গুরুত্ব পাবে সেই গুরুত্বের শত ভাগের একভাগও কি আমরা পাবো? ধরুন! আমিও ভালো, আপনিও ভালো, একে অন্যকে চিনি না। সেই আমি আপনার কাছে গেলাম অন্যদিকে মুশতাক-তিশাও গেলো। কিন্তু আপনি মুশতাক-তিশাকে পছন্দ না করলেও আমার চেয়ে আপনি মুশতাক তিশাকেই চেনার কারণে গুরুত্ব বেশী দিবেন। একই কথা হিরো আলমের বেলায়ও প্রযোজ্য। একটা বিয়ের আসরে হিরো আলম গেলে প্রায় ৫শতাধিক বরযাত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিরো আলমকে সরাসরি দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেক যুবক-যুবতী ভাত খাওয়া থামিয়ে দিয়ে তথা ভাতের টেবিল ছেড়ে হিরো আলমের সাথে সেলফি তুলতে চলে আসে। বিয়ের আসরে এরকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ হিরো আলমকে চলে যেতে অনুরোধ করায় তিনি বিয়ের অনুষ্ঠান ত্যাগ করে চলে আসেন। বিয়ের প্যান্ডেল ছেড়ে চলে আসার সময়েও এক নারী দৌড়ে এসে সেলফি তুলে। অথচ সে নারীকে হিরো আলম চিনতো না।
যোগ্যতা কী আছে বা নেই সেটার চেয়ে আমাদের সমাজের বিশাল একটা অংশ পরিচিতিকে প্রাধান্য দেয়। প্রাধান্য দেয় বলেই, ঢাকার গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় গত উপনির্বাচনে হিরো আলম ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটে ২য় হয়েছিলেন। অন্য ৭ জন প্রার্থী পরিচিতি ছাড়া সব ক্ষেত্রে বেটার হলেও হিরো আলম তাদের ৬ জনের চেয়ে বেশী ভোট পায়। শুধুমাত্র পরিচিতির যাদু! সুষ্ঠু ভোট হলে তখন সে অন্য একজনকেও হারিয়ে তথা সবাইকে হারিয়ে এমপিও হয়ে যেতো। অন্যকোনো যোগ্যতা তেমন না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পরিচিতির কারণে দেশের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের কাছে হিরো আলম বরণীয়।
পরিচিতিটা দেশের বিশাল একটা অংশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তিশা-মুশতাক-হিরো আলমরা কোনো একটা বিষয়ে ক্যাম্পিং করলে দেশের সকল মানুষের কাছে কোনো টাকা খরচ করা ছাড়া ক্যাম্পিং এর বিষয়বস্তু সহজে পৌছানো যাবে। অন্যদিকে আমি -আপনি পরিচিতি না পাওয়ায় কোটি টাকা খরচ করেও আমাদের কথা মানুষের কাছে তেমন পৌঁছাতে পারবো না। সেলিব্রিটি হওয়ার কারণে
মুশতাক- তিশারা এই কয়েকদিনে তাদের কর্মকান্ডের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে তা তারা সারা বাংলাদেশের প্রায় সব পেইজবুক ব্যবহারকারীর নিকট ছড়িয়ে দিতে পেরেছে এবং তাদের কর্মকান্ডের পক্ষে একটা অংশকে তারা পজেটিভ ম্যাসেজ দিতেও সক্ষম হয়েছে। যারা খারাপ দৃষ্টান্তকে পজেটিভ হিসেবে নিয়েছে, এভাবে পজেটিভ হিসেবে নেওয়াটা যে ভুল সেটা আমরা যারা সচেতন আমাদের উচিত তা জানান দেওয়া। তখন তিশা-মুশতাকরা পরাজিত হবে অন্যথা তাদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। “তিশার স্বামীর বয়স তার বাবার বয়সের চেয়ে বেশী” এই বিষয়ে এক সাংবাদিক তিশার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিশা বলে “আমার কাছে মুশতাকের বয়স বেশী সেটা মনেই হয় না৷” তিশার চেয়ে ৪৫ বছরের বড় মুশতাককে এভাবে উপস্থাপন করে সমাজকে নিশ্চয়ই ভালো কোনো ম্যাসেজ দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও সে মুশতাককে নিয়ে থাইল্যান্ডে বেড়াতে যাচ্ছে -এসব বলাসহ মুশতাকের মতো বুড়ো পয়সাওয়ালাকে অপেক্ষাকৃত গরীব ঘরের অল্প বয়সী মেয়েরা বিয়ে করলে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলতে পারবে-এরকম ম্যাসেজ দিয়ে তরুণীদের তার মতো বুড়োদেরকে স্বামী হিসেবে বেঁচে নিতে ঘৃণা না করার ম্যাসেজ কি দিচ্ছে না?
আর তাই সমাজে চলমান খারাপ কিংবা ভালো কোনো ঘটনা আমাদের কারো এড়িয়ে চলা উচিত নয়। ভালো হলে প্রমোট করতে হবে এবং খারাপ হলে তা প্রমোটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেটাকে থামিয়ে দিতে হবে।
ঘটনা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, পারিবারিক সম্মতি ইত্যাদির কারণে অসম বিয়ে যুগে যুগে হয়ে আসছে। ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়মে তাতে কোনো বাধা নাই। সেটা নিয়ে তেমন মাতামাতিও হয় না। কিন্তু মুশতাক-তিশার বিয়েটা মাতামাতি হওয়ার প্রথম কারণ হলো তিশার মা-বাবার কাছে প্রস্তাব না পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে গোপনে বিয়েটা সেরে ফেলা। দ্বিতীয়ত দেশের নামকরা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পরিচালক তথা অভিভাবক হয়ে মুশতাক অভিভাবক তথা রক্ষক হয়েও রক্ষকের ভূমিকা পালন না করে কদর্য যে ভূমিকা শুরু থেকে ব্ল্যাকমেইল করে গোপনে বিয়ে পর্যন্ত এবং এখন মিডিয়াতে এসে যা যা খারাপ করছে-সেসব প্রচার করতে থাকাটা তিশা-মুশতাককে নিয়ে মাতামাতির দ্বিতীয় কারণ। তারা তাদের কদর্য কাজ সমাজে প্রমোট করছে আর তাই তাদেরকে থামিয়ে দেওয়ার দরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের ঘৃণ্য কাজের পক্ষে সাফাই গেয়ে ঘৃণ্য কাজকে প্রমোট যাতে করতে না পারে-সেরকম ব্যবস্থা আমাদের নেওয়া জরুরি।
১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ফেস দ্যা পিপলে তিশার বাবা মুশতাকের বিরুদ্ধে যা যা বলেছে সবই দেশের বেশীর ভাগ মানুষ সত্য বলে মেনে নিলেও মুশতাকের মতে মিথ্যা। মেনে নিলাম সবই মিথ্যা কিন্তু একজন ম্যানেজিং কমিটির মেম্বার, সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপরে যার স্থান-সেই তিনি নিজেই বলেছেন যে, কোনো পরিচয় ছাড়া প্রথমেই তিনি তিশাকে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন। তাহলে তিনি এরকম ছাত্রীদের নিকট অযাচিতভাবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েথাকেন।
যেহেতু সে নিজেই স্বীকার করেছে। সেহেতু আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি যে, তিশাসহ অনেককে বন্ধুত্বের আড়ালে নিজের করে নেওয়ার ঘৃণ্য কাজ মুশতাক করেছেন। তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোটা পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের কারণে শতভাগ অনৈতিক প্রমাণিত হয়। তিশার সাথে সম্পর্ক করার পর স্কুলের পিকনিক মুশতাকের বাগান বাড়িতে করা সেটাতেও খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো। বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তিশাকে বিয়ে করেছে বলে তিশার বাবা যে অভিযোগ দিলো, সেটাকে তিশা সাময়িক আবেগের কারণে সমর্থন না করাতে মুশতাক জেলে যাওয়া থেকে বেঁচে যাচ্ছে। খন্দকার মুশতাক জেলে যাওয়ার মতো কাজ করেছেন।
তিশা তার মা-বাবার পক্ষে সমর্থন দেওয়ার মতো সব ধরনের পজেটিভ কথা বললেও তার মা-বাবা তার প্রতি বন্ধুসুলভ ছিলো না। “আমার মা-বাপ আমাকে সব কিছু দিলেও আমার মাইন্ড সেট-আপ তাদের সাথে হয়নি। আমি বিব্রতবোধ করতাম। আমার বান্ধবীরা মায়ের সাথে কতো আন্তরিক কিন্তু আমি কোনোদিন সেই আন্তরিকতা পাইনি, মানসিক যাঁতাকলে পিষ্ট ছিলাম, নির্যাতিত হয়ে আমি এই জায়গায় (মুশতাকের কাছে) এসেছি।”-
এই দোষসহ মা-বাবা ঝগড়া করে একে অন্যকে ঘায়েল করতে না পেরে তিশার উপর সব রাগ ঝাড়তো উপরোক্ত দুটি দোষ ছাড়া তার মা-বাবার প্রতি তার আর যা যা অভিযোগ বাকী একটাও ধর্তব্য নয়।
তিশা কর্তৃক তার মা-বাপের বিরুদ্ধে লেখাপড়া সংক্রান্ত কড়াকড়ির বাকী সব অভিযোগই ধর্তব্য নয়। সেসব তিশার কল্যাণের জন্যই তার মা-বাপ করেছেন।তিশা মেয়েটি তার মা-বাবা সম্পর্কে যা যা বলেছে-একটা কথাও আমার কাছে মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে না। সে বলেছে যে, “তার মা-বাপ তার কোনো কিছু অপূর্ণ রাখেনি৷ তাকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছে ছিল তার মা-বাপের। কলেজে প্রথম দিন সাদা ইউনিফর্ম পড়ে তিশার যাওয়া দেখে তার বাপ যে বললো, “তোমাকে ডাক্তারের মতো লাগছে।” তিশার বাবার এরকম কথাটাও তিশা মিডিয়াতে বলতে
কার্পণ্য করছে না। সে বাবার কাছে থাকলে ডাক্তার হতো কিন্তু এখন আর হতে পারবে না-এরকম বললো। আসলে তিশা এই পর্যন্ত তার মা-বাপকে নিয়ে যা বললো একটাও মিথ্যা বলেনি। তিশার মা-বাবা পরীক্ষা শেষে গ্রামার ব্যাকরণ পড়তে তিশাকে বারবার তাগাদা দেওয়াসহ কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেওয়া এসবসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিশাকে যা কড়াকড়ি করতো-সেসবে তিশা কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও সিরিয়াস বিগড়ে যেতো না যদি তিশার মা-বাবা সীমারেখার মধ্যে তিশার সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করতো। তিশা বলেছে তার বান্ধবীরা রিক্সায় করে মায়ের সাথে কোথাও যাওয়ার সময় কতো আন্তরিকভাবে কথা বলে বলে যেতো, সে রকম আন্তরিকতা তার মা তাকে কোনো দিন দেখায়নি। ঘরে মা-বাবা ঝগড়া হলে সেটার রাগও নাকি তার মা-বাপ তিশার উপর ঝাড়তো।
ছোট থেকে বড়ো তথা ৬/৭ বছর পর্যন্ত মা-বাবারা সন্তানদের নিয়ে কতোই না কষ্ট করে। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কতো যে কথা, প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয়/ঘুম পাড়ানি গান/কবিতা/ঘোড়া হয়ে পিঠে চড়ানো আরো কতো কী? সময় ও হৃদ্যতার কোনো অভাব মা-বাবারা দেখান না। বড় হলে তা অবশ্যই কমবে। কিন্তু তা এতোই কম যেনো না হয়-সন্তান মা-বাবাকে যাতে ভুল বুঝে। তিশার মা-বাবার সামান্য এই ভুলের কারণে তিশা আজ মা -বাবার হাজারো ত্যাগকে বলতে গেলে অস্বীকার করছে। আসলে একটুখানি ভুলের তরে অনেক বিপদ ঘটে। সকল মা-বাবাদের প্রতি আমি যেটা বলতে চাই সেটা হলো সীমারেখার মধ্যে আপনারা অবশ্যই সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে মুশতাকের বিষয়টি আকদের আগে কাউকে না বললেও তিশা তার মাকে অবশ্যই বলতো এবং তখন সেটা এড়ানো যেতো। তাছাড়া সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করলে বার্ধক্যে ও রোগ-ব্যাধিতে মাতা-পিতা যখন শিশুর চেয়েও অসহায় হয়ে যায়-তখন তার প্রতিদান তথা পাল্টা বন্ধুসুলভ ব্যবহার সন্তান থেকে পাওয়া যাবে। পৃথিবীটা আসলে গিভ (give) এন্ড টেইক (take)।
তিশার মা-বাবা মানসিকভাবে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। আদালতের সামনে তিশার মা তিশাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে মা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুশতাকের দিকে চলে যাওয়া-সেটা মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দেখেছি। যেই মা তিশাকে দশ মাস দশ দিন পেটে রেখে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম দিয়ে হাজারো কষ্ট সহ্য করে তিশাকে তিলে তিলে এই পর্যায়ে আনলো-সেই তিশা মাকে বাদ দিয়ে মায়ের বাপের বয়সী মুশতাকের কাছে চলে গিয়ে মা-বাবার সামনে মুশতাকের বুকে মাথা ঠেকিয়ে আশ্রয় নেওয়াটা মায়ের অন্তর আত্মা খান খান হয়ে কি যায়নি? খুবই হৃদয়বিদারক। এই তিশা মুশতাক কর্তৃক ব্ল্যাকমেইল এর শিকার হয়ে নিজেকে তো অনেক ক্ষতির মধ্যে ইতোমধ্যেই নিয়ে গেছে।
ব্ল্যাকমেইল এর কথা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ না করলেও তিশার বিভিন্ন কথাবার্তা ও আচরণে তা ফুটে উঠছে। তাছাড়া তার মা-বাপ বনাম মুশতাকের লড়াই চলমান থাকায় এবং জিদাজিদির কারণে সে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মুশতাকের পক্ষে মুশতাকের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলে বেড়াচ্ছে। মামলা শেষ হয়ে গেলে এবং তার মা-বাবা ও মুশতাকের মুখোমুখি অবস্থান শেষ হয়ে গেলে তখন তিশা হতাশা কাকে বলে, কতো প্রকার ও কী কী? তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারবে।
তাছাড়া গোপন বিয়ের পর জানাজানি হওয়ার পর তিশার মা-বাবা তাকে গ্রামের বাড়িতে বন্দী রাখা অবস্থায় ব্যাপক মারধর না করে ১৪ ফেব্রুয়ারী ঠান্ডা মাথায় ফেইস দ্যা পিপল এর লাইভ প্রোগ্রামে মুশতাকের বিরুদ্ধে ডকুমেন্টসসহ যা কিছু তিশার বাবা শো করেছিলো-সেসব তখন তিশাকে দেখিয়ে বুঝিয়ে বললে তিশা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে চলে হয়তো আসতো না। আসলে তখন তিশার বিয়ের বিষয়টি জানার পর তিশার মা-বাবার মাথা ঠিক মতে কাজ করেনি।যা হয়েছে তো হয়ে গেলো। সেসব লাঘবে কিংবা সমাজে সেসব যাতে না ছড়ায় সেটার চেষ্টা করাটাই উত্তম। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই ভালো ভূমিকা রাখছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু জয় নামের একজন তিশা ও মুশতাককে তাদের স্টুডিওতে ডেকে নিয়ে তিশার পাশে জয় বসে অভিনয়ের ছলে যে কুপ্রস্তাব দিলো সেটা কি জয় ঠিক করেছে? তিশা তা শুনে হেসে কৌশলে এড়িয়ে গেলেও বিব্রত বোধ করেছে। তিশার গায়ে হাত দেওয়া কি উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়ের ঠিক হলো? তার সেই কুপ্রস্তাবে শুনে মুশতাক বিব্রত হয়ে যায়। প্রতিবাদও করে।
ভাইরাল এই দম্পতিকে নিয়ে চরম কুরুচিপূর্ণ ধৃষ্টতার লাইভ দেখিয়ে এবং তা কয়েক কোটি মানুষকে দেখার ব্যবস্থা করে শাহরিয়ার নাজিম জয় সমাজকে কী ম্যাসেজ দিলেন? তিশা-মুশতাক সমাজের যা ক্ষতি করলো তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী শাহরিয়ার নাজিম জয় করলেন। তিনি এরকম কর্মকান্ড বিভিন্ন সময়ে করে আসছেন। তার শাস্তি হওয়া উচিত। তার এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে চিত্র নায়িকা একা বলেছিলেন যে, “শাহরিয়ার নাজিম জয়কে জুতা দিয়ে পেটানোর দরকার।
আসলে সমাজে নানাভাবে বেহায়াপনার চাষবাস চলছে।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নীতি-নৈতিকতাপূর্ণ সমাজ রেখে যেতে না পারলে তারজন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরকে দোষারোপ করবে। আর তাই নৈতিকতাপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে আমাদেরকে এখন থেকে সোচ্চার হতে হবে।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রবক্তা ও সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
মন্তব্য করুন