নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে ॥
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌর শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১ হাজার গজ প্রস্থের মরা খোয়াই নদীটি দখলমুক্ত করা যাচ্ছেনা। এরশাদ সরকারের আমল থেকে নদীটি দখলদারদের কবলে রয়েছে। প্রভাবশালী দুজন মন্ত্রী, দুজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিনজন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন কিন্তু কেউই মরা খোয়াই নদী দখল মুক্ত করতে পারেননি। হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে এমপি মাহবুব আলী পর্যটন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে আসার পর মরা খোয়াই নদীকে দখল মুক্ত করে একটি বিনোদন পার্ক নির্মানের দাবী সর্বমহল থেকে উঠে। ১ কোটি টাকা বরাদ্দও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই অর্থ সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান উন্নয়ন খাতে চলে যায়। মরা খোয়াই মরাই থেকে যায়। জীবিত করা যায়নি দখলদারদের চাপের মুখে। ২০১৫-১৬ সালে মরা খোয়াই নদী ভরাট করে পুলিশ একাডেমী করার জন্য তৎক্ষালীন উপেজলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহেরকে সাথে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জের তখনকার পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র। সে কার্যক্রমও থেমে যায় দখলদারদের কারনে। চুনারুঘাট পৌর শহরের গা ঘেঁষে প্রবাহিত হতো খরস্রোতা খোয়াই নদী। এরশাদ সরকারের আমলে এই নদী চুনারুঘাট পৌর শহরের তিনশত গজ পূর্বে পাকুরিয়া নামক স্থানে খনন করে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে নদীর পূর্বের অংশ মরা নদীতে পরিণত হয়। এরপর থেকে মরা নদীটি দখলে নেয় প্রভাবশালীরা। দখলের কাতারে রাজনৈতিক নেতা, আমলাসহ নানা পেশার মানুষ জড়িত। উপজেলার বড়াইল, পশ্চিম পাকুড়িয়া, গুচ্ছগ্রামসহ চুনারুঘাট সদরের মরা খোয়াই নদীর আশপাশের বাসিন্দা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানের প্রভাবশালীরা এসে নদীতে মাটি ভরাট করে অবৈধ ভাবে স্থাপনা ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। দখলদারদের কারনে নদী তীরে অবস্থিত বধ্যভুমিটিও সংরক্ষন করা যাচ্ছে না। নদীর পাড়ে দক্ষিনা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বিদ্যালয়ের মাঠ অবস্থিত। অধুনা নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। নদীর চারপাশ এখন দখলদারদেন পেঠে রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা দখলদাররা এতোটাই ক্ষমতাধর যে তাদেরকের উচ্ছেদ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুমেই বেড়ে যায় নদী দখলের প্রবণতা। প্রথমে ময়লা আবর্জনা ফেলে স্তুপ করে রাখা হয় পরে ওই স্থানটিকে দখলে নেয় কৌশলী দখলদাররা।
পৌরসভার মেয়র সাইফুল আলম রুবেল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পৌরসভা কর্তৃক বর্তমানে এখানে ময়লা ফেলা হয় না। মরা খোয়াই নদীর দুই ব্রিজের পাশে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে পৌরসভার উদ্যোগে সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়েছে; যাতে কেউ ময়লার ভাগাড়ে আগুন না দেয় সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে। তারপরও কারা ময়লা ফেলছে তা পৌর কর্তৃপক্ষের জানা নেই। ইউএনও নীলিমা রায়হানা জানান, জনসমাগম ঘটে এমন এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা পরিবেশসম্মত নয়। তবে দ্রুত ময়ল-আবর্জনা অপসারণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ কাদির লস্কর বলেন, মরা খোয়াই নদীকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলো কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। গত রবিবার থেকে মরা খোয়াই নদীর আবর্জনা স্বেচ্ছা শ্রমে পরিস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন নব নির্বাচিত এমপি সৈয়দ সায়েদুল হক। তবে মরা নদীটি দখলমুক্ত করে সেখানে পর্যটন স্পট করা যাবে কিনা তা কেউই বলতে পারছেন না।
মন্তব্য করুন