নবীগঞ্জ উপজেলায় এক সময় কালোজিরা ধান বেশ চাষ হতো। উপজেলার কৃষকরা বিভিন্ন ধানের পাশাপাশি এই কালোজিরা ধানের চাষও করত। কিন্তু অতিরিক্ত খরচ হিসেবে লাভের অঙ্কটা কম হওয়ায় কালো জিরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
জানা যায়, সুগন্ধি এ চিকন চাল দিয়ে তৈরি হয় পিঠা-পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ আরও সুস্বাদু মুখরোচক নানা ধরনের খাবার। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরর বিভিন্ন পূজায় বিভিন্ন রকম খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই কালো জিরা ধানের ‘চিকন চাল’। ফলে সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এই চাল। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সুগন্ধি ‘কালোজিরা’ ধান।
সরেজমিনে নবীগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সর্বত্র আমন ধানের চাষ। কালো জিরা ধানের চাষ একেবারেই নেই বললেই চলে। উপজেলার কিছু এলাকা ঘুরে বুঝা গেল বিলুপ্তিতে এই কালো জিরা ধানের চাষ।
পৌর এলাকার মদনপুর গ্রামের খুরশেদ মিয়া নামে এক কৃষক জানান, গুরা ধানের (কালোজিরা ধান) চাল অন্য চালের তুলনায় দামও বেশি। তবে চাষে খরচের তুলনায় লাভ কম। তাই এখন আর কেউ চাষ করতে চায় না।
করগাঁও ইউনিয়নের সাখোয়া গ্রামের কৃষক বশির মিয়া জানান, বাপ-দাদারা আগে বিঘা বিঘা কালোজিরা ধান চাষ করতো। কালের বির্বতনে এখন সেই ধানের জৌলস হারিয়ে বিলুপ্তির পথে। প্রতি বিঘায় ৭/৮ মণ ধান ফলন হয়। তাছাড়া বছরে একবার চাষ হয়। খরচের তুলনায় লাভ কম। আর একই বিঘা জমিতে আমন ফলন বেশী, লাভও বেশী।
তিনি আরো জানান, আমি এখন শখের বসে ৮ শতাংশ জমিতে এ ধান চাষ করি। আশেপাশে তেমন কোন চাষী এ ধান আর চাষ করে না। তবে সরকারিভাবে কৃষকদের ধান আবাদে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রদর্শনী পল্ট প্রকল্প গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথ থেকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে উপজেলায় ৭০/৮০ বিঘা জমিতে প্রতি বছর এ কালোজিরা ধান চাষ হচ্ছে। যা খরিপ-২ এর আওতায়। চাষে খরচের তুলনায় লাভ কম ও উন্নতমানের বীজ না পাওয়ায় এই ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে নবীগঞ্জ পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নের কৃষকরা।
তিনি আরো জানান, এ ধান চাষ করতে কৃষকেরা আগ্রহ বোধ করলে কৃষি অফিস থেকে সকল ধরনের সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়া হবে।
ReplyForward |
মন্তব্য করুন