তারুণ্যে দেশের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন আবদুল কাদির। একাত্তরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। এনে দিয়েছেন স্বাধীন পতাকা। কিন্তু সেই স্বাধীন জীবনের স্বাদ নিতে পারছেন না সত্তরোর্ধ্ব এ বৃদ্ধ। ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়, বকছেন আবোলতাবোল। দেড় দশক ধরে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগলেও মেলেনি সুচিকিৎসা। তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সহায়সম্বল শেষ করেছেন তাঁর দুই দিনমজুর ছেলে। বসতভিটা বিক্রি করে তারা ঠাঁই নিয়েছেন সরকারি ঘরে। হবিগঞ্জের মাধবপুরের কমলপুর গ্রামের এ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভবঘুরে জীবন নিয়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী ও দুই পুত্র নিয়ে স্বচ্ছন্দে চলে যাচ্ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদিরের সংসার। ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে তাঁর মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমদিকে বিষয়টি কেউ গুরুত্ব না দেওয়ায় ধীরে ধীরে তা প্রকট হয়। এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই থেকে তাঁর দৈনন্দিন জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হন এবং এলাকার পথে পথে ঘুরে বেড়ান, সারাক্ষণ বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে থাকেন। সন্ধ্যায় তাঁকে খুঁজে ঘরে ফেরাতে হয়। নানাভাবে চিকিৎসা করিয়ে প্রায় ফতুর হয়ে গেছে তাঁর পরিবার। প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে তাঁকে শহরের বড় কোনো ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়নি। স্থানীয় চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁকে সুস্থ করতে হলে বড় কোনো হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা চালাতে হবে। এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন।
আবদুল কাদিরের ছেলে রোকন উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে তাঁর মস্তিষ্কের সমস্যাটি বড়। এ কারণে তাঁকে দেখভাল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি সারাদিন যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ান আর যা-তা বলতে থাকেন। আমরা গরিব মানুষ, মানুষের ক্ষেতে কাজ করে খাই। বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাবদ সরকার যা দেয় তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এতে তাঁকে সুস্থ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ মাধবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক মধু বলেন, ‘আবদুল কাদিরের অবস্থা করুণ। দেশের এই সূর্যসন্তান অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ভবঘুরে জীবনযাপন করছেন। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আবদুল কাদিরের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিলে তিনি হয়তো সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইশতিয়াক আল মামুন বলেন, ‘আবদুল কাদির মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে বিভিন্ন ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে। সব সরকারি হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় সুযোগ-সুবিধা আছে। ভালো চিকিৎসা ও নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার পেলে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
ReplyForward |
মন্তব্য করুন