নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মধুর ছড়ায় স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কর্মরত হোপ ফিল্ড হসপিটালের দূর্নীতি যেনো রীতিমতো সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড শুরু করে সুনামের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির সুনাম জেলা জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে। মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করায় বিদেশী দাতা সংস্থাগুলো বিপুল অর্থের যোগান দিতে থাকে প্রতিষ্টানটিতে। একে একে আসতে থাকে অসংখ্য দাতা সংস্থা। গড়ে উঠে বিশাল একটি হাসপাতাল।
এমন মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হোপ ফাউন্ডেশনের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শুরু করে লুটপাঠের কর্মযজ্ঞ। চলতে থাকে নিয়োগ বাণিজ্য ও ঔষধ সহ মালামাল চুরি, কমিশন বাণিজ্য থেকে শুরু করে হরেক রকম অপকর্ম। UNFPA প্রদত্ত গাড়ী যথাক্রমে প্রতিটি টমটম থেকে কমিশন বাবদ নেয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা ( মাসিক) হারে, বাস থেকে নেয়া হয়েছে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে, টি আর এক্স তো আছেই। হাসপাতালের এম্বুলেন্সগুলো রোগী আনা নেয়ার চাইতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজেই ব্যবহার হয় বেশি। হাসপাতালের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে ষ্টাফ নিয়োগ প্রক্রিয়াও বাড়তে থাকে। প্রায় ২ শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয় কোন প্রকার সরকারী নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা অমান্য করে। আর অবৈধ পহ্নায় নিয়োগ কৃত এসব কর্মচারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। শুধু নিয়োগেই খান্ত হননি, ৬ মাস অন্তর চাকরিতে পূন:নিয়োগের কথা বলে বেতনের ধরণ অনুসারে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পরিমাণের অর্থ। এসময় যারা এসব অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে তাদের কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই চাকরী ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। দাতা সংস্থার দেয়া কন্সট্রাকশন বাজেটের অধীনে রত্না পালং বার্থ সেন্টারের দেয়াল নির্মাণ বাবদ কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ ধরনের আরো অসংখ্য দূর্ণীতির গ্যাড়াকলে যুক্ত হতে থাকে হোপ ফাউন্ডেশন।
সর্বশেষ প্রতিষ্টানটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের দাতা সংস্থা UNFPA যখন জানতে পারে তাদের এসকল অপকর্মের কথা তখন তাদের কয়েকবার সতর্ক করলেও প্রতিষ্টানটি তা কর্ণপাত করেনি, রোগীদের জন্য UNFPA, WHO, UNICEF থেকে অর্থ ও ঔষধ সরবরাহ থাকলেও রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হতো চিকিৎসার বিনিময়ে ঔষধ পত্রাধি।
এসব বিষয়ে স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সংস্থাটির সিনিয়র ম্যানেজার শওকত আলী ও ফিল্ড কো অর্ডিনেটর শাহনাজ বেগম রীতিমতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, শুরু করে সাংবাদিক ম্যানেজ করা সহ ষ্টাফদের সাথে অসংলগ্ন আচরণ। এমনকি কথায় খোটা দেয়া আর গালিগালাজ করাও বাকী রাখেনা। এক কথায় কর্মচারীদের নিজ দাসের মতো ব্যবহার করা শুরু করে। সবেচেয়ে বড় যে বিষয়, প্রতি ৩ মাস অন্তর দাতা সংস্থার দেয়া অর্থ তাদের সঠিক সময়ে প্রদান করলেও তারা কখনো সময় মতো কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করেনি। উলটো বেতন ভাতা চাইতে গেলেই শুনতে হতো গালিগালাজ নানা অপবাদ। অতচ সিনয়র কর্মকর্তারা ঠিকই মাসে মাসে তাদের বেতন ভাতা নিয়ে নিতো।
সর্বশেষ দাতা সংস্থার তদন্তে এসব অভিযোগ উঠে আসলে তারা (৩১জুলাই ২০২৩) থেকে হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে সকল প্রকার চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে, এবং কোন প্রকার অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমরা হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে আর কোন কাজ করবোনা। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে (১আগষ্ট ২০২৩) হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান ও সিনিয়র ম্যানেজার শওকত আলী UNFPA এর কক্সবাজারস্থ ওয়ারহাউজে গিয়ে ওখানকার ম্যানেজারকে অকথ্য ভাষায় গালগালাজ ও বৈদ্যুতিক তার খুলে ফেলাসহ সামনের রাস্তা কুড়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আসে। এ ব্যপারে স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অরিরিক্ত সচিব ও সরকারে বিভিন্ন দপ্তর বরাবর ওয়ার হাউজের সরবরাহ কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান নিরাপত্তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন যার স্মারক নং আঞ্চ: পণ্যা:/কক্স/২৩/।
এদিকে, দাতা সংস্থার সাথে চুক্তি ও অনুদান বন্ধ হওয়ায়
প্রতিষ্টানটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এবার শুরু হয় দূর্নীতিবাজ ৩ কর্মকর্তার নতুন আয়নাবাজি। কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তারা সকল কর্মচারীদের দুই মাসের বিনা বেতনে ছুটির কথা বলে ছাটাই করলেও বিগত ৩/৪ মাসের কোন বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করেনি বলে জানায় সংস্থাটিতে কর্মরত অধিকাংশ কর্মচারী। আবার ও শুরু করে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য। বর্তমানে ২ শতাধিক কর্মচারীর স্থলে ১০/১৫ জন কর্মচারীকে চাকরী আছে বলে ডেকে নিয়ে চাকরীতে বহাল রেখেছে।
অপরদিকে হোপ ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত বার্থ সেন্টারগুলোরও প্রায় শতাধিক কর্মচারী চাকরী হারিয়ে ২ মাসের বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। চাকরী চলে যাওয়ায় তারা অনেকটা দিশেহারা হয়ে আরেকটি এনজিওতে চাকরীর পরীক্ষা দিতে গেলে সেখানেও হোপ ফাউন্ডেশন বাঁধা প্রদান করে। শুরু করে বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া পন্ড করতে স্থানীয় কয়েকটি নিউজ পোর্টালকে দিয়ে হোপ ফাউন্ডেশন, স্থানীয়দের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সহযোগীতাকারী ডা: সিফাত, ডা: আল আমিন ও ডা: আশিক কে নিয়ে সম্পুর্ন ভুয়া একটি খবর প্রচার করে যার কারনে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় এনজিও সংস্থাটি। এতে করে সম্পুর্ণ অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় শতাধিক চাকরী প্রার্থীর জীবন জীবিকা। হোপ ফাউন্ডেশনের কথা হলো তারা বেতন ও দিবেনা, অন্য কোথাও চাকরীও করতে দিবেনা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানায় তারা এখন দূর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তারা উল্যেখিত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক কক্সবাজার , সিভিল সার্জন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
উল্যেখিত বিষয়ে হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমরা দাতা সংস্থার টাকা পাওয়ার আগে কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারবোনা। তারা টাকা দিলে তবেই আমরা তাদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করবো।
মন্তব্য করুন