joyosree Mohan Talukder
শ্রীচরনেষু বাবা,
কেমন আছো গো বাবা তুমি। কত দিন হলো আমি তোমাকে দেখতে পাই না। আমি তোমার ছেলে দিহান আজ বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করেছি।তুমি কি জান বাবা আমি এখন সরকারি কলেজের প্রভাষক হবো।
মা দিন গুনছে আমার সাথে কবে চলে যাবে আমার কর্মস্থলে।বড়দা, মেজদা, তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে। বড় বৌদি কষ্ট দিয়েছে মাকে অনেক বেশি।বড়দাও তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তাই না বাবা। তুমি তো শুধু বড়দার সাথে থাকতে চেয়েছিলে। একটু আনন্দে থাকার জন্য। নাতিকে কাছে পাবার জন্য। সত্যি না বাবা।
শেষের দিনগুলোতে বড়দা কেন থাকতে চাইল না তোমার সাথে আমি আজও বুঝতে পারি না। অনেক কষ্ট আমার বাবা যখন তোমার দুচোখ আমার সামনে আসে আমি দিশেহারা হয়ে যাই, ইচ্ছে করে বড় বোদি কে প্রশ্ন করি কেন কষ্ট দিয়েছিলে আমার সোনা বাবাকে।
মা আমাকে বলেছে তোমার পেনশনের সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে মেজদা কানাডা গিয়েছে। বৌদি বলেছিলি ওখানে গিয়ে প্রতিমাসে তোমাকে টাকা পাঠাবে। একটা টাকাও তোমাদের দিল না মেজদা ও বৌদি। তারপরও বাবা কেন এরকম নিশ্চুপ থাকলে তুমি?আমি কিছু জানলাম না। অর্থের অভাবে কত কষ্টে দিন পার করেছো তুমি। আজ আমি বড় একা বাবা। কেউ পাশে নেই আমার। তুমি ছিলে পৃথিবী আমার। রাতে ঘুম আসে না আমার। কি করে বাঁচবো আমি তোমাকে ছাড়া।
তোমার শ্রাদ্ধের দিন আয়োজন দেখে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। গরু থেকে শুরু করে আসবাবপত্র সহ কোনকিছু বাদ দেয় নাই বড়দা, মেজদা। অথচ তোমার ইনজেকশানের মাত্র ৬ হাজার টাকা তাঁরা দেয় নাই মাকে। সবকিছু ভেঙে ফেলতে মন চায় আমার।চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে সবাই কে বন্ধ কর এই নাটক, বন্ধ হোক এই কর্তব্যের অভিনয়।
বাবা আর মাত্র দুমাস পরে পূজা। কে দেবে আমায় এবার পুজোর জামা। পছন্দ করে কে বলবে বাবা তুই এই জামাটাই নে। তোকে পড়লে অনেক ভালো লাগবে।
কেউ বলবে না বাবা। মা আর আমি আজ বড় একা।
তুমি দেখো বাবা আমি মাকে ভালো রাখব। বুকের ভেতরে রাখব মাকে।দুঃখ মাকে স্পর্শ করতেই পারবে না।
বাবা মনে পড়ে তোমার সেই দিনের কথা। দুর্গা পুজোতে ঠাকুর দেখতে আমি, বড়দা ও মেজদা বের হয়েছিলাম তোমার হাত ধরে।ভীড়ে আমরা যেন হারিয়ে না যাই তুমি আগলে রেখেছিলে আমাদের তিনজনকে তোমার বুকের ভেতর। মা ছিল সেই পিছনে পড়ে। তোমার লক্ষ্য ছিল আমাদের দিকে।মায়ের দিকে নজর দেবার কোন সময় ই ছিল না বাবা তোমার। জান বাবা সেদিন তোমার লাশ যখন তুলসি তলাতেছিল কেউ তোমার পাশে ছিল না। মা একা বসে। বড়দা, মেজদা ব্যস্ত ছিল তোমাকে কত সুন্দর করে সাজিয়ে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া যায় দাহ করবার জন্য। শহরের লোকজন দেখবে কত টাকা খরচ করছে ছেলেরা।বলবে যোগ্য সন্তান তোমার।মা শুধু বলেছিল গীতা পাঠ করার জন্য। কিন্তু বড়দার উত্তর ছিল এগুলো করার এখন সময় নেই।
তোমার গোপনে মাকে দেয়া ব্যাংকে১ লক্ষ টাকা বড় বৌদি জানতে পেরে বড়দাকে দিয়ে মাকে জোড় করে সই করিয়ে নিয়েছে।মা তো বাবা একদমই চায় নাই টাকাটা দিতে। মা হাত জোড় করে মিনতি করেছে বড়দা যেন ব্যাংক থেকে টাকাটা না তুলে। কিন্তু জান বাবা বড়দা টাকাটা তুলে এনে বড় বৌদির হাতে দিয়েছে৷ বলেছে দুই ভাগে ভাগ করার জন্য। আমাকে বলেছে আমি যেন কাউকে না বলি। মাঝে মাঝে চিন্তা করি বাবা এরা কি আমার বড়ভাই না অন্য কেউ ? মনের অজান্তেই বার বার ভেসে আসে তোমার ছবি। ভেসে আসে মায়ের কষ্টের কথা। বড় বৌদি স্কুলে যাবে জন্য মা ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে রান্না করত। কারন বড় বৌদি একটু খেয়ে যাবে। আর সেই বৌদি কতটা খারাপ ব্যবহার যে করল আমার মার সাথে তুমি জান না। চলে যাব বাবা মাকে নিয়ে
অনেক দুরে কেউ জানবে না। একটু সময় দাও না বাবা আমাকে।
বাবা তোমার শ্রাদ্ধের দিন বড়দা, মেজদা শহরের গনমান্য ব্যক্তি সহ আত্নীয় স্বজন নিয়ে চারশ জন মানুষ নিমন্ত্রণ করেছিল। দামি দামি পোশাক পড়েছিল তাঁরা। আর আমি ও মা ঘরেরএক
কোনে দাঁড়িয়ে। জান বাবা ওদের দেখে মনেই হয়না যে ওরা শোক দিবস পালন করছে।বড় বৌদির কি হাসি আমাদের মেজ বৌদির সাথে । অনেক কষ্ট বাবা আমার,- অনেক কষ্ট।মা আমাকে বলে প্রায় প্রতিদিন থাকবে না বড়দা ও মেজদার সাথে।চলে যাব মাকে নিয়ে। একটু সময় চেয়েছি আমি মার কাছে কিন্তু তুমি বাবা থাকবে না আমার পাশে। রাতে কে আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে? কার গালে গাল লাগিয়ে আমি সুখের স্পর্শ পাব বল না বাবা। আমি যে ডাকি তোমাকে তুমি বুঝ না বাবা।
সবাই বলে তোমাদের মতো ভাগ্য সবার হয় না। তাই বাবা। সত্যি কি তাই। তোমার মৃত্যুর দিন হাসপাতালে তোমার সাথে ছিল ভোলাদা। বাসার কাজের মানুষ। তোমার সাথে থাকবার কারো সময় নেই। সংসার নিয়ে ব্যস্ত।কিন্তু তুমি ওমাতো আমাদের বড় করেছো সংসার ওচাকুরি করেই। মা দেখেছে ঘর তুমি দেখেছো বাহির। আমাকে তো কেউ জানালো না বাবা যে তুমি১৫ দিন হাসপাতালে ছিলে। আমার তো বাবা আগে। আমি তো পড়াশুনা ছেড়ে তোমার সেবা করার জন্য আসতাম বাবা।
মাকে আমি বলেছি আমি কোনদিন বিয়ে করবো না। সন্তান নেব না। মাকে নিয়ে কাটিয়ে দেব সারাটি জীবন। বাবা আমার সুযোগ আসলেও আমি মাকে ছেড়ে কখনো বিদেশে যাব না।মায়ের মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত আমি মাকে আমার বুকের ভেতর রাখব। আমার জীবন থাকতে মায়ের কোন অসুবিধা হবে না বাবা। ভালো থেকো তুমি। স্বপ্নে দেখা দিও।এই পৃথিবী অনেক কষ্টের বাবা। প্রতিদিন ঈশ্বরের কাছে বলি তোমার যেনো আর জন্ম না হয়। ভালো থেকো আমার সোনা বাবা। ইতি
৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ তোমার দিহান। সমাপ্ত।।।।।।।।।
একজন উদীয়মান লেখক। তার অনেকগুলো লেখা ইতোমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ওপার বাংলাতে ও তিনি সমান জনপ্রিয়।
মন্তব্য করুন