কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে খাল—বিল, নদী—নালা, পুকুর—ডোবার পানি দ্রম্নত হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্রামেগঞ্জে মাছ ধরার ধুম পড়েছে। প্রতিটি গ্রামগঞ্জেই এখন মাছ ধরার উৎসব চলছে। ভোর হতে না হতেই শুরু হয় মাছ ধরার পালা। শিশু—কিশোর ও বয়স্ক থেকে শুরু করে সকলেই মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠে। সকলেই উড়াইন্যা জাল, ঠ্যালা জাল, উইন্যা, পলো থালা—বাটি প্রভৃতি নিয়ে এবং শিশু—কিশোররা খালি হাতেই খালে—বিলে নেমে পড়ে। যেখানে হাঁটু পানি সেখানে সেচের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর মৎস্য শিকারীরা খালে—বিলে নামছে। বিকাল পর্যন্ত চলে মাছ ধরার এই প্রক্রিয়া। পরে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ হাটবাজারে বিক্রি করে দেয়।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বালিগাঁও গ্রামের একটা কৃষি জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করা সময় ছোট বড় ১০—১৫ জন মিলে মাছ ধরছে। সেখানে দেশীয়
প্রজাতির বিভিন্ন মাছ দেখা যায়। মাছ শিকারীরা জানান, চলমান শুকনো মৌসুম শুরু থেকেই মাছ ধরার উৎসব চলছে। তারা জানান, একসময় খাল—বিল, পুকুর—ডোবা আর ক্ষেত—খাল শুকিয়ে এলে থালা—বাটি দিয়ে চলে সামান্য পানি সেচার কাজ।
আর পুকুর—ডোবার পানি সেচা হয় পাম্প মেশিন দিয়ে। এরপর চলে মাছ ধরার উৎসব। রীতিমতো আনন্দ উল্লাস করে লোকজন পুকুর—ডোবা, খাল—বিলের শূন্য পানির কাদার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে একের পর এক মাছ। সেচ দেয়া পুকুরে চাষ
করা মাছের পাশাপাশি পাওয়া যায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। আর ডোবায় মেলে শোল, টাকি, পুঁটি, খলসে, কৈ, মাগুর, শিং, ট্যাংরাসহ দেশি প্রজাতির
বিভিন্ন মাছ। তারা আরো জানান, আগে এমন করে নানা জাতের দেশীয় মাছ প্রচুর ধরা গেলেও এখন আর সেদিন নেই। দেশীয় মাছের উৎসগুলো ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার সৌখিন মাছ শিকারী রফিক আহমদ, বুলবুল মিয়া, মানিক মিয়া, ও হোসন মিয়া বলেন, একসময় অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন একেবারেই কমে গেছে। বিভিন্ন বিলের নিচু এলাকায় ঘের তৈরি হওয়ায় মাছের আশ্রয়স্থল নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া আগের মতো পানি না হওয়ায় মাছ কম পাওয়া যায়।ধানী জমিতে বিষ প্রয়োগ, মা মাছ নিধনসহ বিভিন্ন কারণে মাছের প্রজনন কমে গিয়েছে। দেশীয় প্রজাতির এসব মাছ রক্ষায় বিভিন্ন বিলে অভয়াশ্রম তৈরি করা প্রয়োজন।
কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান সিদ্দিক বলেন, মাছ ধরার উৎসব গ্রামগঞ্জের চিরচেনা ঐতিহ্য। শেষ করে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসে মাছ প্রজনন করে থাকে। এ জেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় বেশি। তবে নদীতে বিষ প্রয়োগ, পানি কম হওয়াসহ নানা কারণে মাছের
পরিমাণ কমে গেছে। তিনি আরোও বলেন, কেউ অবৈধভাবে নদীতে বা খালবিলে মাছ শিকার করলে আমরা অভিযান করে জরিমানা করছি।’
মন্তব্য করুন