মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
নিরাপত্তার শংকা দূরীভূত না হলে নিরাপত্তার স্বার্থে আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় টিকে থাকা ছাড়া অন্য কোনো অপসন নেই। আওয়ামীলীগ সরকারে টিকে থাকলে (আমেরিকা ও ইউরোপ এর কারণে) দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি ধসে পড়বে। কেননা আওয়ামীলীগ ইউরোপ আমেরিকাকে ইতোমধ্যেই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চরম খারাপের দিকে যাওয়া থেকে বাঁচাতে চাইলে অবশ্যই আওয়ামীলীগ সরকার এর পতন ঘটাতে হবে। কিন্তু কীভাবে ?
আওয়ামীলীগ বিরোধী যারা আছেন-তারা যেভাবে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য চেষ্টা করে আসছে-সেভাবে তারা সফল হবে না। নিরাপত্তার শংকা দূরীভূত হওয়ার মতো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিরোধীরা ব্যর্থ হওয়ায় তারা দীর্ঘ বছরগুলোতেও সফল হয়নি। নিরাপত্তার শংকা দূরীভূত হওয়ার মতো কোনো কৌশল অবলম্বন না করে এখন বিরোধীরা আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিবাদী বলে আখ্যায়িত করে আন্দোলন এর মাধ্যমে পতন ঘটানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ বছরে আওয়ামীলীগকে বারবার প্রতিশোধের ধমক দিয়ে আসতে থাকায় আওয়ামীলীগ প্রতিশোধ থেকে বাঁচতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে শতভাগ দলীয়করণ কায়েম করেনি। ফ্যাসিবাদীরা কখনো গণ আন্দোলন ছাড়া নিজ থেকে ক্ষমতা ছাড়ে না-এরকম কথা সরকার বিরোধীরা বারবার বলে আসলেও এখন আমেরিকার কারণে গণ আন্দোলন ছাড়া ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছে -এরকম কথা বললে সরকার বিরোধীদের কথা দুরকম কি হয়ে যায় না? ফ্যাসিবাদ কখনো গণ আন্দোলন ছাড়া ক্ষমতা ছাড়ে না, গণ আন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে হয়৷ এখন বিরোধীদের কথা মতো গণ আন্দোলন ছাড়া আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়লে -তাহলে আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিবাদ তকমা দেওয়াটা কি ঠিক ছিলো? আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদী-এটা ঠিক না বেঠিক সে তর্কে না গিয়ে আমি বলতে চাই যে, ধরে নিলাম আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদী। কিন্তু আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিবাদী হতে দেশের রাজনৈতিক অসুস্থ সংস্কৃতিই বাধ্য করেছে।
দেশের রাজনৈতিক অসুস্থ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার পেছনে দেশের সবগুলো বড় বড় রাজনৈতিক দলই কম-বেশি জড়িত। আর তাই আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদী হয়ে থাকলে তার দায়ও দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলের উপর কম-বেশি বর্তাবে।
১৪ তে নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দিয়েও আওয়ামীলীগকে বিরোধীরা হঠাতে পারেনি, ১৮ তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও পারেনি। বিগত ১০ বছরে গণ আন্দোলনের বারবার ডাক দিয়েও আওয়ামীলীগের পতন ঘটাতে পারেনি। এখন আমেরিকার মাধ্যমসহ গণ আন্দোলনে পতন ঘটানোর যে চিন্তা বিরোধীরা করছে -তাতেও তারা সফল হবে না। আমেরিকা সেনাবাহিনী দিয়ে পারতো কিন্তু এখন সম্ভব নয়। দেশের ৭০% জনগণ একসাথে রাস্তায় নামলেও কয়েকদিনের মধ্যে পাকিস্তান কিংবা মিশরের মতো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবে আওয়ামীলীগ। কেননা সেনাবাহিনীসহ পুরো প্রশাসন আওয়ামীলীগের শতভাগ নিয়ন্ত্রণে।
ভারত আওয়ামীলীগ থেকে যে সুবিধা পাচ্ছে সেই সুবিধা অব্যাহত রাখতে ভারত সব সময় চাইবে। আমেরিকা ভারতকে আওয়ামীলীগের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা বললেও ভারত তার নিজস্ব স্বার্থের জন্য গোপনে অবশ্যই আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহযোগিতা করে যাবে। তাছাড়া চীন তো আওয়ামীলীগকে সহযোগীতা করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
অন্যদিকে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে না পেরে আমেরিকা বৃহত্তর অবরোধ দিলে দেশে দূর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হয়ে যাবে। কানাডার বেগম পাড়াসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে অর্থ পাচারকারীরা যে অর্থ পাচার করেছে-সে অর্থ ফিরিয়ে আনতে না পারলে কিংবা সেসব দেশে যেতে না পারলে দেশে তারা সম পরিমাণ অর্থ আবার অবৈধভাবে কামাই করে ফেলবে। দেশে শোষকদের জুলুম মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে অন্যদিকে শোষিতের আর্তনাদে দেশের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যাবে।
ভারত ও চীনের পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ সমর্থনে আওয়ামীলীগ সরকার আরো ৫/১০ বছর অনায়াসে টিকে যাবে৷ ততদিনে দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ ৫ টি দেশের একটিতে পরিণত হয়ে যাবে। বিরোধীদের অনেকেই আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীনদের পতনের করুণ ঘটনা আওয়ামীলীগের উপর ঘটুক, ঘটবে সে আশায় শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা বদলের কোনো ফর্মূলা গ্রহণ করছেন না। আওয়ামীলীগের সেই রকম পতন ৫/১০ বছর পর ঘটবে, তার আগে দেশ প্রায় ধ্বংস হয়ে যাবে তখন ৩২ টি দাঁত দেখিয়ে তথাকথিত তৃপ্তির ঢেকুর তোলার অপেক্ষায় যারা আছেন-তারা প্রতিশোধ পরায়ণ ও দেশপ্রেমহীন আওয়ামীলীগের সেই রকম পতনের অপেক্ষায় থাকলেও দেশেরও পতন যে হয়ে যাবে-সেটা বুঝেও যারা প্রতিশোধ পরায়ণতা ত্যাগপূর্বক শান্তিপূর্ণ কোনো ফর্মূলা গ্রহণ করবে না তারা প্রকারান্তরে দেশদ্রোহী। আমরা প্রত্যেকে নিজের দিকটাই দেখি৷ আর তাই সমাধান হচ্ছে না৷ সমাধানের জন্য কেবলমাত্র নিজের স্বার্থ/দিকটা দেখলে হবে না, আওয়ামীলীগের দিকটাও দেখতে হবে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় আওয়ামীলীগ বর্তমানে খুবই নিরাপত্তার শংকায় নিজেকে ঠেলে দিয়েছে। নিরাপত্তার শংকার কারণে দেশের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পেরেও আওয়ামীলীগ দেশকে উদ্ধার করতে পারছে না। কিন্তু নিরাপত্তার শংকা দূরীভূত হলে আওয়ামীলীগ অবশ্যই দেশকে উদ্ধারে এগিয়ে আসবে। আর তাই ভীতি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতপূর্বক আমাদেরকে emphathatic হতে হবে৷ বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি নিজের দিকটাকে দেশের স্বার্থে পুরোপুরি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ দেশের আপামর জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে দেশকে উদ্ধারে সব দলের জন্য ভীতি মুক্ত ও সর্বজনীন একটি ফর্মূলা দাঁড় করিয়েছে। সেই ফর্মূলার বাস্তবায়ন ব্যতীত দেশকে আসন্ন মারাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচানো অসম্ভব। আর তাই বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলা বাস্তবায়নে দেশের সৎ রাজনীতিবিদসহ দেশবাসীকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি
মন্তব্য করুন