মাহবুবুল আলম
এক/এগারোর কুশীলবদের গ্রীনরুমের সহযোগী যারা নিজেদের মানবাধিকারের সোলএজেন্ট পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অথচ এমন অনেক মানবাধিকার কর্মী আছে নিজের ঘরেই তারা মানবাধিকার চর্চা করে না, বউ পেটায়, ভাই-বোন
আত্মীয়-স্বজনের হক মেরে খায়। পরকীয়া করে কিন্তু বাইরে তারা সফেদ পাঞ্জাবিওয়ালা, দেশ তাদের সেবা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে থাকে। কিন্তু এদের বেশিরভাগ মানবাধিকারের সাইনবোর্ড লাগিয়ে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে
নিজেদের আখের গুছায়। মানবাধিকারের ব্যবসা এখন অনেক লাভজনক ব্যবসা বলে অনেকেইমনে করে থাকেন। তাদের নাম দেখলেই সবাই চিনতে পারে ওরা কেমন মানুষ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্সির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফোরামে গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটকসহ চরম মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে এক বিবৃতিতে যারা সই করেছেন তারা হলেন :হামিদা হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলী রীয়াজ, আনু মুহাম্মদ, আসিফ নজরুল, স্বপন আদনান, পারভীন হাসান, ফিরদৌস আজিম, আলী ইমাম মজুমদার, শহিদুল আলম, গীতি আরা নাসরিন, সামিনা লুৎফা, শাহনাজ হুদা, তবারক হোসেইন, শিরীন হক, হানা শামস আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, অরূপ রাহী, নূর খান লিটন, রেহনুমা আহমেদ, নাসের বখতিয়ার, সুব্রত চৌধুরী, নোভা আহমেদ ও সালমা আলী।
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে জাতির বিবেকেরা কথা বলবেন, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলেই মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হন, অন্য সময় যদি মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তাহলে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এই চিহ্নিত গোষ্ঠী ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নৃশংস হত্যাকাণ্ড, জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা, পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কী কোনো বিবৃতি দিয়েছেন? দেশের কোনো সংকটকালে কী তাদেরকে কখনো কেউ দেখছে? না দেখেনি, ২১শে আগস্টের ঘটনা ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রীয় মদদে এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে একটি জঘণ্য ও ন্যক্কারজন ঘটনা।
কিন্তু তখন অইসব সুশীলরা উটের মতো বালিতে মুখ ঢুকিয়ে বসেছিলেন কেন, এর উত্তর কী এই সুশীলরা দিতে পারবেন কোনোদিন?
এখন আবার শোনা যাচ্ছে, অই সুশীলরা এবং বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্র এতিম দলগুলো ‘রাজনৈতিক সংকট’ সমাধানে সহায়তা চেয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেবে। তাদের ধারণা শেষ দুই জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ‘ভোটাধিকার হরণ’ করার পাশাপাশি আগামী সংসদের ভোটও ‘একতরফা’ করতে সরকার নানামুখী ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। এসব কথাই হয়তো চিঠি দিয়ে জাতিসংঘকে জানাবে দলটি। অনেকেরই নিশ্চয়ই জানা আছে যে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও জাতিসংঘ, ইইউ ও কমনওয়েলথকে এ ধরনের চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। আর ২০১৪ সালের ভোটের আগেও জাতিসংঘের মধ্যস্থতা চেয়েছিল।
দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদদের লেখা এবং ২০২৩ সাল নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব প্রবৃদ্ধি শ্লথ হচ্ছে, রয়েছে বিপজ্জনকভাবে মন্দার কাছাকাছি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। এর আগে আইএমএফ জানিয়েছিল, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ এ বছর মন্দার কবলে পড়বে। অর্থাৎ সারাবিশ্ব অর্থনৈত সংকটের মধ্যে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বিশ্বের বাঘা-বাঘা অর্থনীতিবিদ ও সংস্থা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে যখন চিন্তিত ঠিক তখনই বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বলছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ‘সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তাঁর অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন। বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।”
এটা গেল একটি দিক। আরো কয়েকটি সমীকরণ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তি ও মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৫০ বছরের বেশি কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশই অনেক কিছু অর্জন করেছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে তিনি উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনও। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের গর্ব করার অনেক কারণ রয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত কর্মশক্তি এবং একটি গতিশীল যুব জনসংখ্যার সঙ্গে বাংলাদেশ দ্রুত একটি আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে। ব্লিনকেনের বিশ্বাস, বাংলাদেশ তার বিশাল সম্ভাবনা অর্জন করবে।”
স্বঘোষিত সুশীল সমাজের একটি অংশের বিরোধিতা, গণমাধ্যমের দু’একটা পত্রিকার হলুদ সাংবাদিকতা অপপ্রচার এবং নিজেদের পক্ষের লোকজন ও বেসরকারি সংস্থার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জরিপের ফলাফল এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নানা কর্মসূচি ম্লান হয়ে গেছে ব্লুমবার্গের একটি নিবন্ধে। যেখানে পূর্বাভাস করা হয়েছে যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসছেন শেখ হাসিনা। ব্লুমবার্গের এই পূর্বাভাসের পর বিএনপি ও তাদের সমর্থন করে এমন গোষ্ঠীর চোখের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে।
এসব কারণে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে একটি বিশেষ শ্রেণির। এই দলে দেশের অভ্যন্তরে অকার্যকর কিছু রাজনৈতিক দল যেমন আছে, তেমনি শেখ হাসিনা সরকারের ‘ভালো কিছু দেখতে না পারা লোকের সংখ্যাও অনেক আছে।
এরাই মাঝে মাঝে ইস্যু প্রসব করেন যা আঁতড় ঘরেই মারা যায়। না হয় প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরের কোণেই পড়ে থাকে। কাজের কাজ কিছুই হয় না।
এখন আবার এক/এগারোর জন্মদাতা সেই অদ্ভুত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যারা ডেকে এনে পুলকিত হয়েছিলেন। যারা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন ‘দুই নেত্রীকে সরিয়ে দিয়ে তথাকথিত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অলিখিত উপদেষ্টা হিসেবে দেশ শাসনের শরিক হবেন (দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর দিবাস্বপ্ন দেখেছিলেন) সেইসব লোক এবং তাদের সমর্থিত মিডিয়া হাউজগুলো দেশে আবার এক/এগারোর মত একটি সরকার এনে মওকা পেতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তারাই স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করার মতো সাহস দেখাচ্ছে। কারণ তারা জানে তাদের পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থনের প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। তার সাথে আছে শত শত কোটি টাকায় নিযুক্ত বিএনপি-জামাতের লবিস্টরা।
দেশের ভেতরে রাজনীতি করতে হলে দেশের জনগণের কাছে যেতে হয়, একথাটা হয়তো বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভুলে গেছে। কেননা, বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি বিদেশিদের কাছে গিয়ে নালিশ করে কোনো লাভ হবে না। তারা কী জানে না যে বিদেশিরা এসে বাংলাদেশে সরকার গঠন করে দেবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের ম্যান্ডেট দেবে, তাদের বাইরে কারো সরকার গঠনের এখতিয়ার নেই।
আর বহুধাবিভক্ত বিএনপি এখন নতুন করে ‘গণতন্ত্র গেল’ বলে সুর তুলতে শুরু করেছে। ১০ থেকে ২৭ দফা হয়ে এখন তারা সরকার পতনের এক দফায় এসে কর্মসূচির পর কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না। লন্ডনে পলাতক বিএনপির কো-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের “ইয়েস স্যার” মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চাতক পাখির মতো লন্ডনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সেখান থেকে যে মন্ত্রনা আসে সেই মন্ত্রনা বাস্তবায়ন ছাড়া তার আর তেমন কোনো কাজ নেই।
যা ই হোক বিএনপিকে এখন অনুধাবণ করতে হবে তাদের দলের চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দ্বিতীয়জন পলাতক আর দলের শীর্ষনেতা বেগম খালেদা জিয়া দেশেরসর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে সাজা ভোগ করলেও সরকারের মহানুভবতায় প্যারোলের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে নিজ বাসা ফিরোজায় বন্দী জীবনযাপন করছেন। তারপরও অনেক মানুষের মধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু বিএনপি বাতিল রাজনীতিকদের নিয়ে যদি আবারও ২০১৮ সালের মতো মোর্চা করে ভোটযুদ্ধে নামেন তাদের নিশ্চিত পরাজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না অনন্ত এটা আমি বলে দিতে পারি।
মন্তব্য করুন