মোতাব্বির হোসেন, লক্ষীবাওর থেকে
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে স্থানীয় লোকজন ও অসচেতন পর্যটকদের নির্বিচার ও অবাধ বিচরণ এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডে লক্ষীবাওর জলাবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সন্মুখীন হয়ে পড়ছে।
১৫ মার্চ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বনটির কয়েক জায়গায় আগুন লাগিয়ে ঘাস ও লতাগুল্ম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।.বিভিন্ন স্থানে গাছের গোড়া খুড়ে চুলা তৈরি করে রান্না করায় গাছের গায়ে রয়েছে আগুনের পোড়া চিহ্ন।
পর্যটকদের ব্যাবহৃত প্লাষ্টিক বর্জ্য যত্রতত্র ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। স্থানে স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বনটির ভিতরে আগতদের ইলেকট্রিক ডিভাইসে উচ্চস্বরে গানবাজনা ও হৈহুল্লোড়ে পাখি ও বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক বসবাস ও চলাচলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আগতদের অবাধ বিচরনের ফলে লতাগুল্ম ও বুনোফুল ধ্বংসের ফলে বনটির স্বাভাবিক সৌন্দর্যহানি ঘটছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলাবন বানিয়াচংয়ের লক্ষীবাওর জলাবন। এর আয়তন দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। প্রাকৃতিকভাবে গঠিত এই জলাবনটি হাওরের মধ্যে অবস্থিত। বর্ষায় জলাবনটি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। শুধূ উচু গাছের আগা পানির উপর ভেসে থাকে।
এই বনটির উত্তরে খড়তি নদী,দক্ষিনে শাখা কুশিয়ারা ও লোহাচূড়া নদী,পশ্চিমে নলাই নদী,পূর্বে গঙ্গাজলের হাওর।
জলাবনটি দেশীয় মাছ ও দেশী পাখির অভয়ারাণ্য।
হিজল,কড়চ,বরুন,কাকুরা,বউল্লা,খাগড়া,চাইল্লা,নলখাগড়া সহ অসংখ্য গাছ ও লতাগুল্ম রয়েছে। এছাড়া জীববৈচিত্র্যর মধ্যে রয়েছে কেউটে,লাড্ডুকা,দারাইশ সহ বিভিন্ন বিষধর সাপ, বেজি গুইসাপ, মেছোবিড়াল, শিয়াল, বনবিড়াল প্রভৃতি। দোয়েল, শালিক, সাদা বক, ঘুঘু, বালিহাস,পানকৌড়ি সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় পাখি রয়েছে।
জলাবনটিতে দিনদিন পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ওখানে একটি বিশ্রামাগার ও ওয়াশরুম নির্মাণ করা হয়েছে। জলাবনটি স্থানীয় সৈদরটুলা ছান্দবাসীর নিজস্ব সম্পত্তি হওয়ায় মহল্লাবাসী রক্ষনাবেক্ষন করে থাকেন। এ জন্য তারা পর্যটকদের সতর্কতার জন্য সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ও প্রহরীর ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। তবুও রক্ষা হচ্ছেনা জলাবনটির প্রাকৃতিক পরিবেশ। আগতদের অসচেতনতাই জলাবনটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলার বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন,এই বনটি আমাদের আওতাভূক্ত না হওয়ায় আমরা কোন পদক্ষেপগ্রহন করতে পারছিনা।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, আমাদের কাছে কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ নিয়ে আসলে আমরা ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারবো।
মন্তব্য করুন