তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ।
মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন প্রায় ৫০ গ্রামের হাজার-হাজার বাসিন্ধারা। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতানদীর উপর নির্মিত পরিত্যক্ত ব্রীজটি এখন মানুষের মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এই ব্রীজটি দ্রুত নির্মানের দাবীতে এলাকাবাসী চরম ক্ষুব্দ প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করেছেন।
জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনা হাওরের জামালগঞ্জ-ফেনারবাঁক সড়কের তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতা নদীর উপর প্রায় ২৩ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছির এই ব্রীজটি। এটি একযুগ পূর্বেই পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি এলাকাবাসী।
আর এই পরিত্যক্ত ব্রীজ দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলচচল করছেন ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চল, ভীমখালী ইউনিয়নের কিয়দাংশ ও দিরাই উপজেলার ভাটি অঞ্চলের প্রায় ৫০ টি গ্রামের হাজার-হাজার মানুষজন।
উপজেলার ভীমখালী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দৌলতা নদীর ওপর এই ব্রীজটি প্রায় একযুগ ধরে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। উল্লেখিত গ্রামের বাসিন্দাদের হেমন্তে জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগের বিকল্প কোন পথ না থাকায় হাজার হাজার মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা।স্থানীয়রা জানান, বিগত ২০০০ সালে এই ব্রীজের কাজ শুরু হয়ে ২০০৪ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হয়েছিল। ওই সময় ব্রীজের উভয় পাশে এপ্রোচ এর কাজ সম্পন্ন না করায় ব্রীজ দিয়ে মানুষের চলাচল করতে পারেননি। বিকল্প চলাচলের জন্য তারা বাঁশের সাঁকো ও খেয়া নৌকায় ফেরী পারা পার হয়ে চলাচল করতেন। এতে দুর্দশায় ছিলেন এলাকার মানুষজন। পরে ২০০৫ সালের শেষের দিকে এপ্রোচ নির্মিনের পর ব্রীজ দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল শুরু হলে দুর্দশা কমে আসে। অভিযোগ উঠেছিল, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজের কারণে নির্মানের মাত্র কয়েক বছর যেতে না যেতেই রড ঝুলে যায় ও আস্তর খসে পড়ে। এ অবস্থায় সেতু দিয়ে চলাচল বিপজ্জনক ছিল। ২০১৪-১৫ সালেই ব্রীজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রীজটি দিয়ে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের রাজাপুর, মাতারগাঁও, খোঁজারগাঁও, রাজাবাজ, উজান দৌলতপুর, ভাটি দৌলতপুর, বিনাজুড়া, লালপুর, রসুলপুর, তেঘরিয়া, গঙ্গাধরপুর, ছয়হারা, কামারগাঁও, ইনাতনগর, লক্ষ্মীপুর, কাশীপুর, উদয়পুর, তাজপুর, নাজিমনগর, হঠামারা গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া, নুরনগর, আলী নগর, ইসলামপুর, কুচিরগাঁও ও রফিনগর ইউনিয়নের খাগাউড়া, সেচনি, কিত্তাগাঁও, স্বজনপুর, জগন্নাথপুর, কুড়ি, পুরন্দরপুর গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। এসব গ্রামের মানুষের জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে হেমন্তে শুকনো মৌওসুমে সড়ক যোগাযোগে চলাচলের ক্ষেত্রে তেরানগর গ্রামের পাশের এই ব্রীজটি দিয়ে আসা যাও করতে হয়।
হেমন্তে শুকনো মৌসুমে প্রায় ৭-৮ মাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা এই ব্রীজের উপর দিয়ে জামালগঞ্জে আসতে হয় এলাকাবাসীর।
জানা গেছে ২০১৪ সাল থেকে এই ব্রীজে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, হতাহত হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক লোক। আর চলা চলে শংকিত থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষজন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নজরুল বলেন, সকল তেরানগর ঝুঁকিপুর্ণ ব্রীজে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। গাড়ি ব্রিজ উঠলে ব্রীজ কাঁপে এর পরেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি লইয়াই চলাচল করে। বাচ্চু মিয়া দাবী করে বলেন, তাড়াতাড়ি এই ব্রীজ ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ নির্মান করে দেয়ার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ঝুঁকিপুর্ণ এই ব্রীজটি নির্মাণের আশ্বাস শনে আসছি। নির্বাচন আসলেই ব্রীজ নির্মাণের জন্য নেতারা ওয়াদা করেন। কিন্তু বর্তমান সরকার পরটর তিন মেয়াদে প্রায় ১৪ বছর দেশ পরিচালনা করছেন কিন্তু আমাদের কোন উন্নতি নাই।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, জামালগঞ্জ ফেনারবাঁক সড়কের তেরানগরে দৌলতা নদীতে ব্রীজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য ডিও লেটার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি অনুমোদন হলেই দ্রুত কাজ করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম মুঠো ফোনে জানান, জামালগঞ্জের তেরানগর ব্রীজ নির্মানের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে হয়েছে।
মন্তব্য করুন