মাসুদ আলী পুলক রাজশাহী:
রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ বাবর আলী রোড এলাকায় সাহেব আলী নামের এক ব্যক্তি নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে, আরডিএর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, সরকারী জায়গা দখল করে বিল্ডিং-নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তার এই কর্মকান্ডে প্রায় ১হাজার মানুষ বিপদে পড়তে যাচ্ছেন এমনি অশঙ্কা দেখা দিয়েছে জনমনে।
এ নিয়ে একাধিবার রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকা ও দৈনিক জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইণ নিউজ পোর্টালে স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও অজ্ঞাত কারনে সাহেব আলীর অবৈধ ইমরাত নির্মান অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাহেব আলীর বিল্ডিং সংলগ্ন একটি পাকা রাস্তা উত্তর দিকে গেছে। আর এ রাস্তার প্রবেশ মুখে নির্মাণ হচ্ছে সাহেব আলীর বিল্ডিং। প্রায় ১হাজার মানুষের যাতায়াতের এই পাকা রাস্তাটি দখল করে বিল্ডিং নির্মানের ফলে রাস্তার প্রবেশ মুখ সরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় বিল্ডিং-এর উপরে কার্নিস গুলি বাড়ানো হয়েছে। ফলে বৃষ্টির বা বিল্ডিং-এর পানি রাস্তাতেই পড়বে।
তাছাড়া যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা মোবাবেলায় এই বসতিতে এম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশ করতে পারবেনা।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে মোঃ নাসিরুদ্দিন আলী নামের এক ভুক্তভোগী রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে (১১ নভেম্বর) ইমারত নির্মান আইন ১৯৫২এর ৩ খ ধারা মোতাবেক একটি নির্দেশ প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির পর থেকে পুনরাদেশ না দেয়ওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকবে।
এরপর অফিসার ইনচার্জ বোয়ালিয়া থানাকে নির্মণ কাজ বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে একটি নোটিশ প্রদান করা হয়।
নোটির প্রপ্তির পর গত (১৪ নভেম্বর) বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই মতিউর রহমান অফিসার ইনচার্জ স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ সাহেব আলীর নিকট জারি করেন। সেখানে লিখা রয়েছে আপনি রাজশাহীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অথরাইজড অফিসার দপ্তর কর্তৃক নির্মাণ সংক্লান্তে অনুমদিত কাগজপত্র সংগ্রহ না করা পর্যন্ত উক্ত নির্মান কাজ বন্ধ রাখবেন। উপরোক্ত নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইহা অতিবও জরুরী।
এর আগে দুই দিন কাজ বন্ধের বিষয়ে এসআই মতিউর রহমানকে ফোন দিয়ে অবগত করা হয়। তিনি ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে যান। তবে তিনি স্থানীয়দের সাথে রাগারাগী করেন বলেন, এরপর কাজ শুধু হলে আমাকে ফোন দিবেন না। যা বলার আরডিএ কর্তৃপক্ষকে বলবেন। আবার আরডিএ’ কর্তৃপক্ষকে বল্লে বলেন থানাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। থানায় যোগাযোগ করেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা ফুটবল হয়ে গেছি। আরডিএ বলেন থানায় যান। থানা বলে আরডিএ যান। তবে কি অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে ? এ নিয়ে আমরা শিঘ্রই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবো বলেও জানান ভূক্তভোগীরা।
অবৈধ ভাবে বিল্ডিং নির্মানের বিষয়ে মোঃ আবু কালাম সাহেব আলীর মুঠো ফোনে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান, সাটারিং মিস্ত্রি কাজ করছে বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
জানতে চাইলে, আরডিএ’র ইমারত পরিদর্শক মোঃ মফিদুর রহমান জানান, সাহেব আলীকে কাজ বন্ধের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিল্ডিং নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা রিতিমতো আইনকে উপেক্ষা করার সামিল। তার কপালে দুঃখ আছে। এবার তাকে বাড়ি ভাংগার নোটিশ দেয়া হবে বলেও জানান ইমারত পরিদর্শক।
এ ব্যপারে মুঠোফোনে বোয়ালিয়া বিভাগের এডিসিকে জানানো হলে, তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, একই রাস্তার মাথায় “নার্গীসবন” নামের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। সেই বিল্ডিং-এর মালিকও রাসিকের রাস্তা দখল করে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। গত (১৬ নভেম্বর ২০১২) বিল্ডিংটির সামনের দিকে ২.৮ মিটার এবং পেছনের দিকে ১মিটার, পূর্ব দিকে ১ মিটার এবং পশ্চিমের দিকে ২ মিটার ভাঙ্গার জন্য বলা হলেও তিনি অজ্ঞাত খুঁটির জোরে আরডিএ’র নির্দেশ পালন করেননি।
এরপর নার্গিস বনের মালিক মোসাঃ নার্গিস আরা ইসলাকে রাসিক কর্তৃক একটি নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে আপনাকে উল্লেখিত রাস্তার উপর থেকে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করার জন্য বলা হলো। অন্যথায় মেয়দান্তে আর কোন নোটিশ না দিয়ে রাস্তার উপর অবৈধ ভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করা সহ আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এরপর টানা ১০ বছর অতিবাহিত হলেও বহাল তবিয়্যতে রয়েছে নার্গীসবনের মালিক। ভাংগা পড়েনি তার বিল্ডিংটি। এই বিল্ডিংটি’র বেশ কিছু অংশ সরকারীর জায়গা অর্থাৎ জনগণের রাস্তার উপর থাকলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন।
স্থানীয়রা জানায়, বিল্ডিংটি’র সমাধানের লক্ষ্যে গত (১৭ অক্টোবর ২০২২) রাসিক মেয়র স্বাক্ষরিত ৫সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। তারা হলেন, রাসিকের ২৫, ২৪, ১৩, ১৪ ও ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ। নার্গীসবনের সমাধান না হতেই সাহেব আলী একই কর্মকান্ড। প্রতিকার কবে পাবে জনগণ?
মন্তব্য করুন