নিজস্ব প্রতিবেদক
সিরাজগঞ্জের জেল সুপার বারেক রাজশাহী প্রতিনিধি: মহিলা ওয়ার্ডে ঢুকে অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকা নারী পুলিশ সদস্যের গোপনে ছবি তুলে রেখেছিলেন সিরাজগঞ্জের জেল সুপার বারেক। এখন অপরাধী সাজাতে সেই নারী পুলিশ সদস্যের ছবি সাংবাদিকদের বিলি করছেন তিনি। আরও ছবি আছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সুপার। ওই নারী সদস্যদের নাম রওশন আরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি দুই হাত উপরে তুলে কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকার আগেই তার ছবি মোবাইলে ক্যামেরা বন্দি করেন সুপার।
এর আগে সিরাজগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্ণীতিসহ নানা ধরেনের অভিযোগ ওঠেছে। শিরোনামে দৈনিক জাতীয় পত্রিকা সহ একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরে রওশন আরা নামের ওই নারী জেল পুলিশকে সাসপেন্ড করে বদলী করেছেন সিরাজগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মোঃ আব্দুল বারেক। গত বুধবার (২৬ অক্টোবর) ওই নারী পুলিশ সদস্যকে বরখাস্তের পর বদলী করা হয়। এরপর তিনি ওই নারী পুলিশের গোপনে তোলা ছবি রাজশাহীর সাংবাদিকদের দেন সংবাদ প্রকাশ করার জন্য।
এ ব্যপারে নারী পুলিশ সদস্য রওশন আরা’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ বলে জানান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নারী জানান, জেল সুপার বারেক প্রতিদিন মহিলা ওয়ার্ডে ২/৩ বার পরিদর্শণ করেন। তবে তিনি কোন অনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পরিদর্শণ করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, মহিলা ওয়ার্ডে প্রবেশ করার সময় গেইটে থাকা গার্ডকে কোন প্রকার শব্দ না করা জন্য শতর্ক করেন। এরপর তিনি চুপিসারে মহিলা ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। মহিলা ওয়ার্ডের কোন নারী বন্দিগণ এবং নারী পুলিশ সদস্যরা বুঝতে পারেন না জেল সুপার মহিলা ওয়ার্ডে আসছেন। মহিলারা অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকে। দেখা যায় কোন নারী তার বাচ্চাকে স্তন পান করাচ্ছে। আবার কোন কোন নারী বুকে কাপড় ছাড়াই বসে গল্প করছে। এই রকম পরিবেশে প্রবেশ করেন জেল সুপার। জেল সুপারকে দেখে অপ্রস্তুত নারীরা লাফ দিয়ে ওঠেন কেউ কাপড় সামলাতে আবার কেউ বাচ্চার মুখে থাকা স্তন ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে এটা জেল সুপারের চোখের নেশা। রওশন আরা সাসপেন্ড হওয়ার আগে ১৬ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেন। তাকে পুরুস্কার না দিয়ে তাকে তিরস্কার করা হয়েছে বলেও জানান এই নারী।
শাহাদাত পুরের এক বন্দিকে অজ্ঞাত কারনে খুব যতেœ রেখেছেন জেল সুপার। ওই বন্দির পরিবার সাদা একটি প্রাইভেট কারে (ঢাকা মেট্রো-ল-২৮-২৩৮৮) অনেক লুঙ্গি ও খাবার দাবার প্রায় দিয়ে আসেন। তবে অন্য বন্দিদের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। জেলে কোন বন্দির বাইরের কোন প্রকার খাবার ঢুকতে দেন না সুপার।
অভিযোগ ওঠেছে, সরকারি জমিতে সবজি চাষের পরিবর্তে আসামীদের দিয়ে ঘাস চাষ করান এবং বিক্রি করেন সুপার। কারাগারে হাজতী কয়েদী আসামিদের সাথে খারাপ আচারণ করেন। খাবারে আলু ও পটল দেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রতিদিনই আসামীদের কচু খাওয়াচ্ছেন। কারাগারে জেল কোর্ড অনুযায়ী দড়ি রাখার নিয়ম না থাকলেও মহিলা ওয়ার্ডে মোটা দড়ি টাঙ্গিয়ে নিজ বাড়ির কাপড়-চোপড় শুকাদে দেন তিনি । বন্দীদের দিয়ে আদা, পিয়াজ, মরিচ ও রসুন মসলা করে নিজ বাড়িতে ও ঢাকার বাড়িতে পাঠান। সুপারের এই ধরনের আইনবহিভূত কর্মকান্ড দির্ঘদিনের। সুপারের তত্ত্বাবধানে কারা পিসি ও ক্যান্টিন পরিচালনা হয়। যেখানে একটি রান্না ডিমের দাম নেয়া হয় ৩৫ টাকা। আর দুই পিচ রান্না বয়লার মাংস ও দুই পিচ আলুর দাম নেয়া হয় ৭০টাকা। যা বন্দীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে এবং এক ধরনের জুলুম।
সূত্রে জানা যায়, সুপার কারাগারে পুরুষ ও মহিলা কারারক্ষীদের প্রতিনিয়ত অন্যায় অবিচার করে থাকেন। তাছাড়াও বিভিন্ন মাদক মামলার মহিলা আসামিদের নাম্বার সংগ্রহ করে তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
কারাগারে তিনি একটি গরুর খামার তৈরি করে ৫টি গরু বন্দিদের দিয়ে পালন করছেন। সেই খামার তৈরীর জিনিষপত্র করাগারের অভ্যান্তরের বলে জানা গেছে। রহস্যজনক কারনে কারারক্ষী জনৈক সুইটিকে খুলনা এবং জেসমিনকে নাটোর জেলে বদলি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী জেলের এক কর্মকর্তা জানান, জেল সুপার বারেক একজন ব্যতিক্রম চরিত্রের মানুষ। তিনি নারী পুলিশ সদস্য ও বন্দি নারীদের অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। তবে এটা তার পুরোনো অভ্যাস।
ভুক্তভোগী এক পুলিশ নারী সদস্য বলেন, জেল সুপার স্যারের কথায় রাজি হলে সমস্যা নাই। কিন্তু তার প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করলেই নেমে আসে নির্যাতন। যেমন, কড়া মেজাজে কথা বলা, ধমক দেয়া, সুযোগ বুঝে গায়ে হাত দেয়া এবং বিভাগীয় মামলা দিয়ে বদলি করা। জেল সুপারের ব্যক্তিগত কারারক্ষী রিপন (ব্যাচ নং-৩২১৭৯) ক্যান্টিনের বাজার করে। কারারক্ষী কবির (ব্যাচ নং-৩২২১৯) অর্থ শাখা গুদামের দায়িত্বে নিয়োজিত। সেখানেই রয়েছে দূর্ণীতি। কারারক্ষী মামুন (ব্যাচ নং-৩২৮১৮) অফিসে কাজ করে এবং ওকালত নামায় সহি দেওয়ার জন্য আসামীদের স্বজনদের কাছে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে থাকে। কারারক্ষী রেজিয়াকে (ব্যাচ নং-৩১৬৬৭) দিয়ে অবৈধভাবে নিজ বাড়িতে সাংসারিক কাজ করান সুপার। তিনি আরও বলেন, রিজিয়া দাম্ভিকতা প্রকাশ করে বলে জেল সুপার আমাকে এই জেলে বদলি করে এনেছেন। এতো অনিয়মের পরও সুপারের নিত্যদিনের কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক নারী কারারক্ষী বলেন, জেল সুপার মোঃ আব্দুল বারেক তাকে একাধিকবার অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার সাথে প্রায়ই খারাপ আচারন করেন তিনি। এর আগে ব্যপারে জানতে জেল সুপারের মুঠো ফোন দিলে তিনি জানান, আপনারা এইসব মনগড়া কথা কোথায় পেলেন। আমার বিরুদ্ধে ভালমতো যাছাই করে নিউজ করেন। নইলে আপনাকে ছাড়ছি না বলে হুমকি দেন জেল সুপার মোঃ আব্দুল বারেক। এ ব্যপারে জানতে মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) জেল সুপার মোঃ আব্দুল বারেক এর মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পর্ব-৩
মন্তব্য করুন