ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রঙিন মরিচ বাতি আর কাগজের ফুলে ফুলে সাজ সাজ রব। দেখে মনে হচ্ছে যেন বিয়ে বাড়ি। বাস্তবেই সামজকল্যাণ অধিদপ্তরের এই কেন্দ্রটি আজ বিয়ে বাড়ি। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে বেড়ে উঠা দুই মেয়ে শাকিলা ও নয়ন তারার আজ বিয়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের ওসমানীনগরের বর আল-আমিনের সঙ্গে কনে শাকিলা ইসলাম ও মৌলভীবাজার সদরের কনকপুরের বর মো. সাব্বিরের সঙ্গে কনে নয়ন তারার বিবাহ সম্পূর্ণ হয়।
মা, বাবা ও ঠিকানাহীন এই দুই কন্যার অভিভাবক হয়ে বরের হাতে তুলে দেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বিয়েতে উপহার হিসেবে নব বিবাহিত দুই পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শাকিলা ও নয়ন তারার বিয়ে দেখে উৎফুল্ল এই কেন্দ্রে থাকা আরো ত্রিশ চল্লিশটি মেয়েও। তারাও তাদের দুই সহ নিবাসীর জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছেন।
এতিম মমতা বেগম বলেন, তাদের দুজনের বিয়ে হচ্ছে দেখে আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করছি আমরা এখানে যারা আছি, তারা এভাবে নতুন করে জীবন ফিরে পাবো। আমাদের পরিবার হারিয়েছি কিন্তু নতুন করে আবার বাঁচতে পারবো।
মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্দী মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, যখন বিয়ের প্রস্তাব আসে, তখন পাত্র পক্ষ ও পাত্রী উভয়ের মতামত আমরা নিয়েছি। আমার শাকিলা সেলাই শিখেছে আর নয়ন তারা সেলাই ও ড্রাইভিং জানে। তারা যেমন সুন্দর তেমনি দক্ষও। আমরা আজ সুন্দরভাবে তাদের নব বিবাহিত জীবনের পদার্পন করে দিলাম।
জানা যায়, শাকিলা ও নয়ন তারা বাল্যকালেই হারিয়ে যায়। নেই তাদের পিতা মাতা কিংবা কোন পরিচয়। বড় হয়েছে সরকারি শিশু পরিবারে। সেখানে তারা বড় হয়। যখন ১৮ বছর বয়স হয়, তখন তাদের নিয়ে আসা হয় মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এরপর তাদের বিয়ের আলাপ আসে।
এগিয়ে আসেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বর পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ধার্য করলেন বিয়ের দিন ক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও বিয়েতে উপহার হিসেবে নগদ দুই লাখ টাকা উপহার পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, আমাদের মৌলভীবাজারের জন্যও আনন্দের একটি দিন, কারণ আমাদের শিশু পরিবারের শাকিলা ও নয়ন তারার বিয়ে হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা অফিস এটির আয়োজন করেছে। বুধবার তাদের গায়ে হলুদ হয়েছে বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ে হয়। তাদের আমাগীর জীবন ফুলে ফলে পল্লিবিত হোক, আমরা সেই কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি শুভ কামনা জানিয়ে এক লাখ টাকা করে দুই জনকে দুই লাখ টাকা উপহার দিয়েছেন। এভাবে আমরা আমাদের এই শিশু পরিবারের সদস্যদের ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য যত সম্ভব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
মন্তব্য করুন