নজরুল ইসলাম ll
আবু হেনা রনি একজন বাংলাদেশী স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, অভিনেতা, উপস্থাপক ও মডেল। তিনি ২০১১ সালে মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স ৬ এ বিজয়ী হন। আমি তার অনেকটা ভক্ত, তিনি যখন মিরাক্কেল আক্কেল বিজয়ী হন সেই সময় আমি তার প্রতিটি পর্ব দেখেছি এবং বাঁধভাঙ্গা হেসেছি। নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভালো কমেডিয়ান।
গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে অদ্য তিনি আহত হয়েছিলেন। তার এমন আকর্ষিক দুর্ঘটনার খবর শুনে ব্যথিত হয়েছি। আগুনের সংস্পর্শেই উন্মাদ হয়ে ওটা প্রাকৃতিক গ্যাসের নিরাপদ পরিমাপ ও ব্যবহারের বিষয়টি বাংলাদেশে এখনো প্রশ্নবিদ্ধ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরে। প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটার পর এনিয়ে আমরা জনসচেতনতা তৈরীর প্রত্যয় ব্যক্ত করি।জন্মদিন বিয়ে অনুষ্ঠান এসব আয়োজনে বাংলাদেশে গ্যাস বেলুনের ব্যবহার যত্রতত্র।এইসব উৎসব উৎযাপনের সাথে শিশুরা সম্পর্কিত। তাই দেশে গ্যাস বেলুনের ব্যবহারকে আরও নজরদারিতে নিয়ে আসার দায় আমরা এড়াতে পারি না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে নিয়ে এসে এর যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি ভেবে দেখার সময় এসেছে।
দেশের বিভিন্ন জাতীয় খবরের কাগজের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গ্যাস বেলুনগুলো ভাসতে থাকে কারণ এগুলো বাতাসের চেয়ে কম ঘন গ্যাসে ভরা থাকে। গ্যাস বেলুনকে হিলিয়াম বেলুন-ও বলা হয়, কেননা এই বেলুনে হিলিয়াম গ্যাস ভরা হয়। হিলিয়াম নিরাপদ একটি গ্যাস হিসেবে পরিচিত, যা দাহ্য নয়। অর্থাৎ হিলিয়াম বেলুন আগুনের সংস্পর্শে এলেও কোনোভাবেই বিস্ফোরণ ঘটাবে না। কিন্তু হিলিয়াম গ্যাস ব্যয়বহুল। তাই গ্যাস বেলুন তৈরিতে অনেক বেলুন বিক্রেতা হিলিয়াম গ্যাসের পরিবর্তে কমমূল্যের হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন। এই গ্যাস হিলিয়াম থেকে অপেক্ষাকৃত হালকা। হাইড্রোজেন গ্যাসের বেলুন বেশি উচ্চতায় যেতে পারে বলেও বেলুনে এটি ব্যবহার করা হয়। অথচ এই গ্যাস খুবই দাহ্য একটি পদার্থ। কোনো ধরনের তাপের সংস্পর্শে এলেই হাইড্রোজেন বিক্রিয়া করে অনেক কিছুই করতে পারে।
অনেক বেলুন বিক্রেতা নিয়মনীতি না মেনে নিজেরাই বাসায় অ্যালুমিনিয়াম,পানি এবং কস্টিক সোডার সমন্বয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে থাকে। এতে বিপদের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। যারা গ্যাস বেলুন কেনেন স্বাভাবিকভাবেই তাদের জানা থাকে না যে, বেলুনটি হিলিয়াম নাকি হাইড্রোজেন গ্যাসে ভরা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব বেলুন খুব উপরের দিকে উঠেনা সেগুলোর ভেতরে হিলিয়াম গ্যাস থাকে। হাইড্রোজেন গ্যাস ভর্তি বেলুন উড়ে যাবার প্রবণতা বেশি থাকে। যদি দেখেন যে, সুতো দিয়ে বেঁধে থাকা বেলুনগুলো বেশি উড়ু-উড়ু করছে, তাহলে মনে করতে হবে এসব বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস রয়েছে। চিত্র ভয়াবহ , অগ্রাধিকার ভিতিত্তে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।
আবু হেনা রনি প্রায় এক মাস ধরে রাজধানীর চানখাঁরপুলে অবস্থিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে তাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রনি বলেন, ‘শুকরিয়া আদায় করছি তাঁদের কাছে, যাঁরা আমাকে সুস্থতা দিয়েছেন, নতুন একটা জীবন দিয়েছেন। বলেছেন আমরা অনেক সময় বলি, মানি ইজ দ্য সেকেন্ড গড। আমি বলব, ডক্টর (চিকিৎসক) ইজ দ্য সেকেন্ড গড।
রনি সুস্থ হয়ে ডাক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে যে বাক্য চয়ন করেছেন- “ডক্টর ইজ দ্য সেকেন্ড গড, এমন উদ্ভট চিন্তার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। রনিকে বলতে চাই , না- মানুষ ঈশ্বর হতে পারে না, ডাক্তাররা মানুষ। ডাক্তারকে দ্বিতীয় ঈশ্বর বলে ধরে নেওয়া এবং বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাদের ঈশ্বরের সাথে তুলনা করা হলে অপমান করা হবে। তাঁরা রোগীদের রোগ চিহ্নিত করেন, রোগ নিরাময়ে মেডিকেল সাইন্স থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগান৷ মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত রোগী সুষ্ঠ হয়ে উঠেন -ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎস ব্যবস্থাকে ফলোআপ করেন। অনেক রোগী ডাক্তারের নীবিড় পর্যবেক্ষণে মারা যায় সেটা আল্লাহ, ঈশ্বর বা গড যা বলেন তার হুকুমে তাঁর কৃপায় হয়ে থাকে। রোগীদের সেবা পরিচর্চা নিশ্চিত করা ডাক্তারদের একটি মহৎসেবা। তাই বলছিলাম, প্রিয় রনি আসুন আমরা ডাক্তারদের প্রশংসা করি, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ হই।
ডাক্তারদের সুপার ক্ষমতা নেই। তাই আমি খুব দৃঢ়ভাবে আপনার অযৌক্তিক অপ্রাসঙ্গিক বাক্য চয়নে অসম্মতি জানাচ্ছি। ডাক্তাররা অন্য সবার মতোই মানুষ। তাদের দরকার হয় স্বাস্থ্যকর খাবার,পর্যাপ্ত ঘুম। তাদের পরিবার আছে, একজন সাধারণ মানুষের মতোই তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্খা রয়েছে। তাদের অনুভূতি আছে। ডাক্তাররা রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল তাই রোগীদেরও ডাক্তারদের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে।
মিঃ রনি, একজন ডাক্তার রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। যখন কোন রোগী অসুস্থতা থেকে সুস্থতায় ফিরে ডাক্তার ও রোগীর জন্য ইহা অনেক আনন্দের। রোগীরা যখন ডাক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয় সহানুভূতি প্রকাশ করে এটি একজন ডাক্তারের জন্য সেরা অনুভূতি। ডাক্তার যতই গুরুত্বপৃর্ন জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি হোন না কেন, তিনি দিত্বীয় ঈশ্বর নন, হতে পারেন না। আমরা ঈশ্বর আল্লাহ বা গডের উপর আমাদের বিশ্বাস রাখি যাতে তিনি আমাদের সঠিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। আমরা ঈশ্বর আল্লাহ বা গডের কাছে চাই আমাদের ডাক্তারদের এমন জ্ঞান এবং দক্ষতা দাও যা আমাদেরকে সুস্থতা ফিরিয়ে দিতে সহায়ক হয়।
আল্লাহ সম্পর্কে আমার ধারণা প্রচন্ড রকমের পবিত্র ও মহৎ। রনি বলেছেন, আমরা অনেক সময় বলি মানি ইজ দ্য সেকেন্ড গড। আমি টাকাকেও দ্বিতীয় ঈশ্বর বলতে মোটেও রাজি নয়। টাকা অবশ্যই একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান এবং এর অনেক কিছু কেনার ও করার ক্ষমতা।
আবু হেনা রনি ডাক্তারদের প্রতি আপনার প্রাথমিক অনুভূতি প্রকাশ এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আপত্তি পরবর্তী বাক্য চয়নে “ডক্টর ইজ দ্য সেকেন্ড গড, ডাক্তাররা আমাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থতা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আবু হেনা রনি আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাদের আবারও বাঁধভাঙ্গা হাসানোর চেষ্টা করবেন সেই প্রত্যাশা করছি। ডাক্তারদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে পরিশেষে আবারও বলছি, মানুষ ঈশ্বর হতে পারে না, ডাক্তাররা মানুষ।
লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।
মন্তব্য করুন