মোঃ মোতাব্বির হোসেন।।
“বাইন্নাচুং আমার দুইন্যাই “এই উক্তিটি ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের। তিনি বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী এবং ভ্রমণ বিষয়ক বইয়ের লেখক। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা গোটা চল্লিশেক।
“বাইন্নাচুং আমার দুইন্যাই” উক্তি, এই উক্তির যে ভাষাগত স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তা শুধুমাত্র আমাদের বানিয়াচংয়ের নিজস্ব ভাষাগত বৈশিষ্ট্য। রামনাথ বিশ্বাসের লেখা ভ্রমণ বিষয়ক বইয়ের অনেক শব্দ আমাদের বানিয়াচংয়ের ভাষার সাথে মিল রয়েছে।
তিনি তাঁর অবস্থানগত কারণে জন্মস্থানের ভাষা, ভাব ও সংস্কৃতি আজীবন লালন করেছেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর কাল ইতিহাসের অংশ। তাঁর কর্ম বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ, হিন্দু -মুসলিম দাঙ্গা নিরসনে কাজ করা ও অসাম্প্রদায়িক জাতীয় চেতনায় জীবনভর সচেষ্ট ছিলেন। তিনি যে কালকে ধারণ করে গেছেন, ওই কালে বানিয়াচংয়ের আর কোন ব্যক্তি এত আলো ছড়াতে পারেননি।
বানিয়াচংয়ের মানুষ হিসেবে রামনাথ বিশ্বাসকে নিয়ে তাই আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু তাঁকে তাঁর উত্তর প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। তাঁর নাম ও সুনাম বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে সৌরভ ছড়াচ্ছে। কিন্তু তাঁর জন্মস্থান বানিয়াচংয়ে তাঁর নাম ও সুনাম ভুলতে বসেছে নিজ এলাকার মানুষ। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে তিনি প্রয়াত হয়েছেন প্রায় ৬৭ বছর পূর্বে। ভ্রমণপিপাসু রামনাথ বিশ্বাস বিয়ে করে সংসারী হতে পারেননি। ৪৭ সালে দেশভাগের পরপর নিজ জন্মস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলন।
বানিয়াচংয়ের পৈতৃকভিটা দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। ৬৫ সালের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক সকল ভূসম্পত্তি ভিপি তালিকাভুক্ত হয়। আশির দশকে স্থানীয় ভূমিখেকো ওয়াহেদ মিয়া রাতের আঁধারে দখল করে নেয় ওই বসতভিটা।
এরপর বাড়িটি দখলের জন্য যত ধরনের কলাকৌশল প্রয়োগ করার প্রয়োজন ছিল তা সে করেছে। রাজনৈতিক শেল্টার থেকে শুরু করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত করে একাধিক জাল দলিল তৈরি করেছে।
তর এ সমস্ত কাজের বিরোধিতায় সব সময় সক্রিয় ছিলেন একজন ইউপি চেয়ারম্যান, এবং একটি পরিবারের দুই ভাই।
প্রজন্মের দায় রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন, ধারণ এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার।
এটা বানিয়াচংয়ের বাইরের মানুষের কাজ নয়।তবুও তাঁদেরকেই শুরু করতে হয়েছে। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে “রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কমিটি” নামে জাতীয় কমিটি।
এই কমিটি ইতিমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সামনে আসছে আরও নানান কার্যক্রম।
আমদের সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই আর তা হলো ভূপর্যটক রামনাথের বসতভিটায় একটি ভ্রমণ বিষয়ক বিশেষায়িত লাইব্রেরি স্থাপন ও একটি বাইসাইকেল মিউজিয়াম গড়ে তোলা।
এর জন্য অবশ্যই হবিগঞ্জ ও বানিয়াচংয়ের সর্বস্তরের মানুষের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
পাশাপাশি বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকবৃন্দের প্রতি আহবান জানাচ্ছি রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসার জন্য।
মন্তব্য করুন