অ আ আবীর আকাশ
জুন মাসে মুখ দিতেই হঠাৎ দেশব্যাপী আগুন লাগার হিড়িক শুরু হয়েছে। আগুন কি সত্যি সত্যিই লেগে যাচ্ছে নাকি লাগানো হচ্ছে? তা বোঝা মুশকিল সাধারন চোখে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে লাগা আগুন দেশময় একরকম আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছে। এর রেশ ধরে ক্রমাগত ঢাকার পুরান টাউন, রাজশাহী, সিলেটে ট্রেনে ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ফেরিতে অগ্নিকাণ্ড আমাদের মতো সাধারণ জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে। আগুন লাগা শুধুমাত্র একটা মামুলিক ঘটনাই নয়, এর পিছনে মর্মান্তিকতা যে কত ভয়াবহ তা অনুধাবন করাও কষ্টসাধ্য বিষয়। কতটা নির্মম, নিষ্ঠুর আগুনে পোড়ার ঘটনা হতে পারে তা সত্বেও টনক নড়ছে না সরকারের। যদি এমন হতো যে, বাসাবাড়ি, ভবন, শপিংমল, মিল-কলকারখানায় আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত লোকবল না থাকলে তবে আগুনে হতাহতের সম্পূর্ণ দায়ভার মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। এজন্য আগে কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে জেল খাটিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। তবে কিছুটা ভয়ে থাকতো কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের সময় আন্তরিক হয়ে ভাবতে হতো অগ্নিনির্বাপণের বিষয়। কিন্তু তা না হওয়াতে আগুন লাগানোর পর উল্টো গেট লাগিয়ে দেয়া, দরজা বন্ধ করে তালা লাগানো, সিঁড়ি অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে সোনার বাংলাদেশে!
সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে যে প্রতিটি আগুনলাগা শুধুমাত্র আগুন লাগাই নয়, কতোগুলো তাজা কর্মজীবন পুড়ে যায় আগুনের মাঝে। কতো স্বপ্ন দাহ হয়, কতো সংসার ভেঙে তছনছ হয়। এসব কে ভাববে? বারবার আগুন লাগার কারণে উন্নয়ন-অগ্রগতির যে সুনাম তা খ’সে পড়ছে পদ্মার জলে।
সীতাকুণ্ডের ডিপোতে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছে কেনো জানানো হলো না কেমিকেলের বিষয়টি? ডিপো থেকে কেনো তা গোপন রাখা হয়েছিল? কেমিকেলের বিষয়টি গোপন রাখার কারণেই এত ভয়াবহ ভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস, উদ্ধারকর্মী, সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকরা আগুনে পুড়ে মৃত্যুর লাইন আরো দীর্ঘ হয়েছে।
ঢাকার পুরান টাউনে সংঘটিত আগুন, রাজশাহী, সিলেটে ট্রেনে ও পদ্মায় ফেরিতে কি কারণে একই সাথে বারবার অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তা সরকারকে শক্ত হাতে খতিয়ে দেখে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। নাকি কোনো ধরনের সহিংসতা, ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নিরীহ মানুষের জান নিয়ে হোলিখেলায় মেতে উঠেছে! যদি কোনো অশুভ শক্তি সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির নামের বদলে দুর্নামের তিলক পরাতে চায় তাহলে তাকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
রানা প্লাজা ও সীতাকুন্ডের যে চিত্র তা যেন পুনরায় দেশের ভেতর সৃষ্ট না হতে পারে সেক্ষেত্রে সর্বত্রই কড়া নিরাপত্তা জোর করতে হবে।
তাজরিন গার্মেন্টস, রানা প্লাজা, হাশেম ফুডস কারখানা বেভারেজ ও সীতাকুন্ড বিএম ডিপোসহ যতগুলো অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে একই ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। আর তা হলো আগুন লাগার সাথে সাথে কলাপসিবল গেট, সদর দরজা ও সিঁড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়। যেনো শ্রমিকরা বেরিয়ে যেতে না পারে। এই কাজটা কেন করা হয়? মালিকপক্ষ কি সিকিউরিটিকে আগেই বলে দিয়েছে নাকি অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তা বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়! এতে সাধারণ শ্রমিক পুড়িয়ে মেরে তাদের কি লাভ! শ্রমিকের পোড়া কঙ্কাল লুকিয়ে ফেলে মৃতের হিসেব কম দেখানো?
প্রতিটি কল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সুনির্দিষ্ট তালিকা কি সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় দেয়া হয়? শ্রম মন্ত্রণালয় কি কলকারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকের তালিকা সংরক্ষণ করেন? যদি না করেন তাহলে তা শুরু করুন। আর যদি তালিকা থেকেই থাকে তাহলে তালিকা অনুযায়ী শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আদায় করুন। প্রতিটি মৃত্যুকে হত্যা বলে সরকারবাদী মামলা ঠুকে দিন।
এতে যদি তন্দ্রা ভাঙ্গে কল কারখানার মালিকদের। তথ্য গোপন রেখে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে একবিন্দুও ছাড় নয়। দেশব্যাপী অগ্নিকাণ্ডে সচেতন হোন। সচেতনতা বাড়াতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
অ আ আবীর আকাশ : লেখক কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
সম্পাদকঃ আবীর আকাশ জার্নাল
মন্তব্য করুন