হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
কুশিয়ারা নদীঘেঁষা হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত তিনটি গ্রামের প্রায় আড়াইশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতিমধ্যে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ৫৩টি পরিবার। মঙ্গলবার (২৪ মে) বিকেল পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- গত এক সাপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে কুশিয়ারার তীরবর্তী দীঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের মাঝে। দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ,পাহাড়পুর,পারকুল অংশে দেবে যাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি ব্যাগ। রাত জেগে বাঁধ পাহাড়া দিচ্ছেন এলাকাবাসী। নি¤œাঞ্চল হওয়ায় কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা দীঘলবাক ইউনিয়নের মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর ও গালিমপুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে পাকাসড়ক ও মাধবপুর-গালিমপুর বাজার। বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় তিনটি গ্রামের প্রায় আড়াইশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ৫৩টি পরিবার। অনেকেই বাড়িঘরে হাঁটু পানি থাকা সত্ত্বেও গরু,হাঁস, মোরগ ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। এদিকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করা ৫৩টি পরিবারের মধ্যে ৪৭টি পরিবারের মাঝে ৫০০শ কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে। মাধবপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি, কিছু মানুষ স্কুলে আশ্রয় নিলেও আমার মতো অধিকাংশ মানুষ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছে, নিজের ঘর, বাড়ি, গরু, ছাগল, মোরগ, হাঁস রেখে কোথায় যাব। তিনি বলেন, এখনো সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি, ইউএনও মহোদয় আসবেন শুনেছি, হয়তো তিনি এলে সহায়তা পাবো। গালিমপুর গ্রামের রামাকান্ত বিশ্বাস জানান, বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, অনেক মানবেতর অবস্থায় জীবযাপন করছি, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি দ্রুত যেন এই সংকট কেটে যায়। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ইউসুফ মিয়া জানান- বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ঘর, বর্তমানে গালিমপুর স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি, সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল পেয়েছি। ওই গ্রামের ফরিদ মিয়া বলেন-কুশিয়ারার পানি বেড়ে আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে, গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবার নিয়ে বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছি। দীঘলবাক ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আকুল মিয়া জানান, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, গ্রামের প্রায় আড়াইশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এরমধ্যে ৫৩টি পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া বলেন- মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে, আমরা সবসময় এলাকায় যাচ্ছি খোঁজখবর রাখছি, তিনটি গ্রামে আড়াইশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৩টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। সময় যত যাচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানের পানির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন- পানিবন্দি ঘরে যুবতি কন্যা সন্তান, স্ত্রী ও গবাদি পশু ঘরের আসবাবপত্র রয়েছে, এর কারণে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, বর্তমানে বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘন্টা কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন- দীঘলবাক ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা মাধবপুর-গালিমপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে, অনেকেই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন, আশ্রয় নেয়া পরিবারের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫শ কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে, খুব দ্রুত শুকনো খাবারও দেয়া হবে। তিনি বলেন- প্রকৃতপক্ষে মোট কতটি পরিবার পানিবন্দি তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি, আমাদের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কাজ করছেন। ইউএনও বলেন- বর্তমানে পানি কমতেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতে যেসব স্থানে বালুবর্তী ব্যাগ দেয়া প্রয়োজন আমরা দিচ্ছি, সার্বক্ষণিক এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন