আঃজলিল স্টাফ রিপোর্টারঃ
আজ পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।মে দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবুও কিছু মানুষ রুটিরুজির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন কাজে। কারণ এক বেলা কাজ না করলে তাঁর পরিবারকে কাটাতে হবে অনাহারে। কারও কারও আবার মেলে না ছুটি। ছুটির দিনে কাজ করে তাদের জোটে বাড়তি অর্থ ।আর এই দিয়ে চলে তাদের জীবন সংসার। মে দিবস পালন তো এসব মানুষের কাছে বিরক্তির কারন।
যশোরের শার্শা ঝিকরগাছা উপজেলার সামটা গ্রাম ও শংকরপুর এলাকার কবির হোসেন আল-আমিন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। রোববার মে দিবসের সকালেও তাকে রিতিমত কাজ শুরু করতে হয়েছে ।মে দিবসের কথা শুনতেই তিনি বলেন,মে দিবস বলে আমাদের কাজ বন্ধ করলে হবে। সামনে ঈদ বাচ্চা কাচ্চা মুখের দিকে তাকায় আছে নতুন জামা কাপড় কিনে দেবে বাবা।যদি কাজ না করি তাহলে তাদের কাপড় চোপড় কিনবো কি দিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালে শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলন দমন করতে সেদিন গুলি চালানো হয়। সেদিন ১০ শ্রমিকের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠে বিক্ষোভ। প্রবল জনমতের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের সংগ্রামী ঐক্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ঘোষণা করা হয়।
এরপর ১৮৯০ সাল থেকে সারা বিশ্বে শ্রমিক সংহতির আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে মে মাসের ১ তারিখ পালিত হচ্ছে ‘মে দিবস’ হিসেবে। মে দিবসে সরকারি ছুটির দিনে রোববার সকাল থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু শার্শার আল-আমিনের মত অনেক শ্রমজীবী মানুষের কাছেই এ দিবস ভিন্ন কোনো অর্থ বহন করে না।
কাজে না গেলে টাকা মিলবে না; চুলায় হাঁড়ি চড়বে না, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় হবে না- এই চিন্তায় শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিনটিও তাদের কাটছে অন্যদিনের মত হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে। টেংরা গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন,ও সব দিবস টিবস দিয়ে বাপু আমাদের পেট চলবে না। তুমি বাপু অন্য কথা বলো শুনবানি।কাজ নাকরলে আমাদের খাওয়া হয় না। আমাদের আবার মে দিবস।
রবিবার সকালে শার্শার ঝিকরগাছার সামটার মাঠে কথা হয় জামতলা গ্রামের কৃষক মহিবুল কুলবাড়ীয়া এলাকার কৃষক সেলাইমান ও ওহিদল ইসলামের সঙ্গে। তারা বললেন,মে দিবস দেখতি গিলি আমাদের চলবে না ।কাজ না করলে আমাদের হাঁড়ি চুলোই উঠবে না। জামতলা রিফা ব্রিকসের মহিলা শ্রমিক তাসলিমা বলেন,স্বামী আর একটা বিয়ে করেছে এখন ছেলেপিলে মানুষ করতে গিয়ে বুকে মাটি ঠেকি যাচ্ছে। আমাদের ও সব দিবসটিবস দিয়ে কোন কাজ নেই।কাজ বন্ধ করলে খাব কি?আমাদের তো কেই দেখে না।না খাটলে খাব কি?
মন্তব্য করুন