আব্দুল কুদ্দুস, কুলাউড়া:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার সংলগ্নে দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাটেরা দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসা অবস্থিত। ব্রাহ্মণবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ প্রধান সড়কের পাশে নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় টিনশেডের ঘর নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩১ বছর ধরে সেই পুরনো টিনশেড ঘরেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নে পরিবর্তন আসলেও দীর্ঘ সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে জানা গেছে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রাখা ভাটেরা দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসা ১৯৯৯ সালে অনুমোদন ও ২০০৫ সালে স্বীকৃতি পায়। বাউন্ডারীর ভেতরে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ১১০ শতক ভূমি রয়েছে। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমে হিফজ, পরবর্তীতে এবতেদায়ীসহ দাখিল পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার উন্নতিকল্পে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ফলে প্রতি বছর মাদ্রাসায় ভালেঅ ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভূক্তি হলেও এখন পর্যন্ত কোন ভবন পায়নি। ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছেন। হিফজ শাখাসহ প্রতিষ্ঠানে মোট ১৬ জন শিক্ষক স্টাফ রয়েছেন। হিফজ বিভাগে ছাত্রের সংখ্যা ৪৫ জন।
সরেজমিন ভাটেরা দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ টিনশেডের দুটি ঘরে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে কোন রকম পাঠদান করা হচ্ছে। ঘর দুটির একটিতেও উপরে ছাদ নেই। প্রচন্ড গরমের সময় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শেষ থাকেনা। তাছাড়া পর্যাপ্ত বেঞ্চ, ডেক্স নেই। যেগুলো আছে তাও অনেকটা ভাঙ্গাচোড়া। দরজা-জানালার অবস্থা একেবারেই করুন। টিনের চালায় জং ধরে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে টিন দিয়ে ক্লাসরুমে বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে পাঠদান বিঘিœত হতে পারে। এলাকার সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় নির্মিত একটি পাকা ঘরেই প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। তাছাড়া মাদ্রাসার পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে বাউন্ডারি দেওয়ালের অবস্থাও নাজুক। পূর্বদিকে অন্তত ৩শ’ ফুট বাউন্ডারি দেওয়াল না থাকায় হুমকিতে রয়েছে মাদ্রাসার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আঙ্গিনায় ছোট-বড় গাছপালা। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি একাডেমিক ভবনের অভাবেই মাদ্রাসায় এত সমস্যার জট লেগেছে। একটি ভবন হয়ে গেলেই সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এমনকি পড়া-লেখার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষকরা জানান, শ্রেণীকক্ষের অভাবে ৭টি রুমে আলাদা ভাগ করে সেখানে একসাথে ১২টি ক্লাস চলছে। হিফজ শাখার ছাত্রদের ক্লাস নেওয়া হয় মসজিদের ভেতর। হিফজের জন্য আলাদা কোন ঘর না থাকায় ওই শাখার ছাত্রদের রাত্রীযাপন করতে হয় মাদ্রাসার একটি শ্রেণীকক্ষে। যা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। ফলাফলের দিক দিয়ে মাদ্রাসার অনেক সুনাম রয়েছে। বিগত ৩ বছরের দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০২০ সালে শতকরা ৮৯.১৭ ভাগ ও ২০২১ সালে ৭৯.১১ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। জেডিসি পরীক্ষায় ২০১৯ সালে ৯৪.৬৮ ভাগ এবং ২০২০ ও ২১ সালে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মুজিবুর রহমান চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে কোন একাডেমিক ভবন নেই। এই ভবনের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। শ্রেণীকক্ষের অভাবে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা দেওয়া যাচ্ছেনা। ফলে পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে। তাছাড়া ইনডেক্সধারী শিক্ষক সংকট রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে তিনি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, “প্রতিষ্ঠানটিকে আলিম পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক। সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় সারাদেশে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও প্রতিষ্ঠানসহ পাঠদানে খুবই আন্তরিক। প্রতিযোগিতার এই যুগে ঠিকে থাকতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন বড়ই প্রয়োজন। আমরা একটি একাডেমিক ভবন পেলে আসবাবপত্রসহ সকল সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।”
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল করিম জানান, ভাটেরা দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় একটি একাডেমিক ভবনের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে পুরাতন ঘর দুটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। ঝড়-তুফানের সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব না থাকায় শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। তাছাড়া প্রজেক্টর না থাকায় শিক্ষকরা ভালোভাবে ক্লাস নিতে পারছেন না। তিনি হিফজ শাখায় আবাসিক ব্যবস্থাসহ প্রতিষ্ঠানে একটি একাডেমিক ভবন দাবী করেন।
মন্তব্য করুন