নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে।।
আগামী বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে থাকা বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গেও তাদের লড়াই হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কোনো কোনো ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি শক্তিশালী। যে কারণে সেই ইউপিগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরডুবির আশঙ্কা করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ নম্বর সদর ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম মোবারুল। তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা স্বাধীন মিয়ার সঙ্গে। তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন সরশ।
এই ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে জনপ্রিয়তায় তেমন তফাৎ নেই। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে যেমন দলীয় নেতা–কর্মীরা রয়েছেন তেমনি গোপনে অনেক নেতা-কর্মী বিদ্রোহী স্বাধীন মিয়ার পক্ষেও রয়েছেন।
দুই নম্বর বদলপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সুসেনজিৎ চৌধুরী। এই ইউনিয়নে সুনেনজিৎ চৌধুরীকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন নীলকমল ও অসিম কুমার চৌধুরী। এখানে সুসেনজিৎ চৌধুরীর বেশ জনপ্রিয়তা থাকলেও দুই বিদ্রোহীর চাপে নৌকা ডোবার আশঙ্কা রয়েছে।
তিন নম্বর জলসুখা ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুকসানা আক্তার শিখা। এখানে নৌকার বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ফয়েজ আহমেদ খেলু। যদিও গত নির্বাচনে বিদ্রোহী হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে গোপনে ইউপি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী তার পক্ষে রয়েছেন। এখানে বিএনপি নেতা এবিএম জামির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
এ ছাড়া এই ইউনিয়নে প্রথম অবস্থা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল শাহজাহান মিয়াকে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় পরবর্তীতে তাকে বাদ দিয়ে রুকসানাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ক্ষোভ ও অভিমানে শাহজাহান মিয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী খেলুর পক্ষে কাজ করছেন। যে কারণে নৌকার প্রার্থী রুকসানার শুধু হারের শঙ্কা রয়েছে। যদিও শাহজাহান মিয়া দাবি করছেন, দল তার মনোনয়ন ফিরিয়ে নিলেও তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।
চার নম্বর কাকাইলছেও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি মিজবাহ উদ্দীন ভুঁইয়া। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রত্যেক বারই পরাজিত হয়েছেন। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেউ তাকে বিদ্রোহ ঘোষণা না করলেও এবার তাকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন। তবে তার সঙ্গে ইউনিয়নের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছে।
পাঁচ নম্বর শিবপাশা ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তফসিল মিয়া। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুজন। আলী আমজাদ এবং জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া শক্তিশালীভাবে মাঠে আছেন বিএনপি নেতা মাবুল মিয়া। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী আলী আমজাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। যে কারণে দুই বিদ্রোহী ও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভিড়ে কূল-কিনারা পাচ্ছে না নৌকা।
বিদ্রোহীদের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দল খুবই কঠোর। এর আগেও যারা বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে যারা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন