মাহবুবুল আলম
গতকাল ১৭ জুলাই ২০২৩ ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের শেষ মুহুর্তে একতারা মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের সাথে যা হয়েছে তা দুঃখজনক। যা দেশের গণতন্ত্রের ওপর ছুরিকাঘাত করার শামিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, একদল লোক ‘ভুয়া ভুয়া’
বলে চিৎকার করতে থাকে। কিছু লোক তাকে এসে বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও করার জায়গা না,’ ‘এটা ভোটকেন্দ্র,’ ‘এটা গুলশান-বনানী’ এই বলে তাকে মারধর শুরু করেন। হিরো আলম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু লোক তাকে মারতে মারতে সেখান থেকে কিছুদূর পর্যন্ত নিয়ে যান। হিরো আলম এক পর্যায়ে বনানীর ২৩ নম্বর সড়কে একটি স্থানে গিয়ে একটি রিকশায় ওঠেন। পরে তার সেখানে গাড়ি পৌঁছালে গাড়িতে করে চলে যান।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র ৪৫ মিনিট আগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন উঠেছে শেষ মুহুর্তে এমন কি কারণে তারা হিরো আলমের ওপর হামলা করলো। এই হামলা করে তারা কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিলো?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের দেশে রেখে কারা হিরো আলমের ওপর হামলা চালালো, হাসপাতালে ভর্তি হলো আবার বিকালেই নির্বাচনী এলাকায় দেখা গেল ভিডিও ফুটেজ দেখে তা শনাক্ত করা সরকারেরই দায়িত্ব। ফেসবুকে বেশ ক’জনের স্ট্যাটাস দেখলাম ভাইরাল করার জন্য এটা নাকি কিছুসংখ্যক ইউটিউবারের পরিকল্পিত ড্রামা। আবার কেউ কেউ এমনও বলছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বোঝানো যে এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা রাজনীতির এক নষ্ট খেলা।
এই হামলার সাথে যারা জড়িত তারা আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করেছে। যারা এভাবে আওয়ামী লীগকে দিনের পর দিনের বিতর্কিত করছে, আওয়ামী লীগের ইমেজ যারা নষ্ট করছে এরা আসলে কারা? এ নিয়ে হাজারো প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
এই মূূূহুর্তে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের নানা রকম দৌড়ঝাপ চলছে। শুক্রবার ঢাকা সফর করে গেছেন মার্কিন উচ্চ প্রতিনিধি দল। এই সফরে তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকা সফরে রয়েছেন ইইউ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে এখন একাধিক সংস্থা এবং দেশ পর্যবেক্ষণ করছে। কাজেই এমন এক সময়ে হিরো আলমের ওপর নেক্কারজনক হামলা আওয়ামী লীগ সরকারকে যে অস্বস্তিতে ফেলেছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
এ বিষয়ে দেশের প্রথম সারির কয়েকটি পত্রিকার
প্রতিবেদন এখানে তুলে ধরলাম:
“হিরো আলমের ওপর হামলার নেপথ্যে কারা”
এই শিরোনামে ১৮ জুলাই ২০২৩ দৈনিক সমকাল
লিখেছে-
“ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ভোটার উপস্থিতি কম হলেও সকাল থেকে কোনো সংঘাত ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট চলছিল, শেষ বেলায় এসে হামলা কেন হলো। হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন একতারা প্রতীকের এই প্রার্থী। ফলে এ নিয়ে অনেককে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে হামলার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে। গ্রেপ্তার চারজন বাদেও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
১৭ জুলাই ২০২৩”হিরো আলমকে মারধর করলো কারা “ইত্তেফাক অনলাইন রিপোর্টে বলা হয়েছে-
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (১৭ জুলাই) বিকাল ৩টার পর রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হিরো আলমের ওপর হামলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, নৌকা প্রতীকের ব্যাজ পরে হিরো আলমের ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। তবে এ বিষয়ে এখনো সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য জানা যায়নি।
১৭ জুলাই ২০২৩ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা
“হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় আটক ৪”
শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় দুর্বৃত্তের হামলার শিকার ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। এই ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে ৪ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বনানী বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রে তার ওপর এ হামলা হয়। এসময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধাওয়া করে মারধর করে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রামপুরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে, আক্রমণের সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের নির্বিকার থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনভর শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের শেষ পার্যায়ে ঘটনাটি নিয়ে নানামুখী গুঞ্জন থাকলেও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না, কারা হামলা চালিয়েছে।
১৭ জুলাই ২০২৩ দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলেছে “হিরো আলমের ওপর হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা : আরাফাত”
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, ‘একজন প্রার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। আমি শুনেছি ও জেনেছি। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, যারা হামলা করেছেন, তারা নির্বাচনটিকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেছে বলে আমার মনে হয়। এ ঘটনায় আমি নিন্দা জানাই।’ আজ সোমবার বিকালে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ এ আরাফাত আরও বলেন, ‘আমি চাই নির্বাচন কমিশন যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের নির্বাচনে আর না ঘটে।
পরিশেষে এই বলেই শেষ করবো; যে বা যারাই এই নেক্কার কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। এই সরকারের আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করার লোকের
অভাব নাই। এভাবে ১৯৭৫ সালেও দুর্বৃত্তরা ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট, শিল্পকারখানায় আগুন দিয়ে, থানা লুট করে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারকে দোষী বানিয়েছে। এটাও সেই পুরনো
ষড়যন্ত্র কি-না তা ভালভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
হিরো আলমের ওপর হামলার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেসবুক, ইউটিউব ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারা ঘটনাটি ভাইরাল করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ
বিচারের ব্যবস্থা করে সরকারকেই সদিচ্ছার প্রমাণ
করতে হবে। হিরো আলমের ওপর হামলাকারী
যে ই হোকনা কেন তার বিচার চাই।
লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক।
মন্তব্য করুন