তেঁতুলিয়া থেকে, খাদেমুল ইসলাম
পঞ্চগড় তেতুলিয়ায় মহানন্দা নদীতে নির্বিচারে পাথর ও বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে স্থনীয় প্রশাসন। এ নদীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০হাজার মানুষের পাথর উত্তোলনের কারণে নদীটির অস্তিত্ব হারাচ্ছে । নদীর তীর ভাঙ্গনের কারণে ফসলি জমি, আমবাগান, চা -বাগানসহ একর একর কৃষি জমি নদীর গর্ভে বিলিনের পথে। নদীর প্রায় এক কিলোমিটারে মধ্যে শত বছরের ঐতিহ্য ডাক বাংলা, পিকনিক কর্নার ,গৌরস্থান কবর মডেল থানা, বাজার বিশাল এলাকা জুড়ে তীরবর্তী স্থানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বসতবাড়ি গাছ পালা রক্ষায় পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন।
কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধ করায় প্রতিবাদ করছেন শ্রমিকরা। তাদের দাবি এ নদীর পাথরেই চলে তাদের অনেকের জীবিকা। চলে পরিবারের মৌলিক চাহিদা। একদিন নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলে জুটে না মুখে খাবার এনজির কিস্তি, এ কারণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই শুক্রবার( ১১ মার্চ) সকালে পাথর তুলতে নদীতে নেমে যান তারা এতে ইউএনও সহিত বাগবিতাম্বতা হয়।
তেতুলিয়ার পাথর বালি সমিতির সাধারন সম্পাদক তুহিন জানান, ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু হঠাৎ করে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে এসব শ্রমিকরা। এ নিয়ে উপজেলা কাজী মাহমুদার রহমান ডাব্লু সাথে ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণের সাথে কথা বলেছি, উনারা সময় নিয়েছেন। যদি না হয় তাহলে পাথর উত্তোলন শুরু না হওয়া পর্যন্ত বৃহৎ আন্দোলনে নামবো।
জানা যায়, বৃহত্তর নদীগুলোর মতোই এক সময় এ নদী ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর। এ নদী দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম পরিচালনা করতো সওদাগররা। চলতো বিভিন্ন রকমের নৌকা ও জাহাজ। পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে এখন। ঝলধারা নদী এখন মরভূমিতে পরিণত হয়েছে।
দু’দেশের বুক চিরে প্রবাহিত মহানন্দা নদী পর্যটন শিল্পে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া সদরের পুরনো বাজার পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ২০ কিলোমিটার সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে।পরে চলে গেছে ভারতে।মহানন্দা ১৯৯০ সালের দিকে এ নদীর উজানে শিলিগুড়ির ফুলবাড়িতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এ কারণে একদিকে যেমন পানি সংকট অন্যদিকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনে বালু চরে পরিণত হয়েছে। পাথর খেকোরা স্বার্থের জন্য নদীটিকে চিরে চিরে গিলে খাচ্ছে এ নদীর নাব্যতা। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নদী তীরবর্তী স্থানগুলো গ্রামের বসতঘর ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
অন্যদিকে সীমান্তে নদীতে পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। গত ২২ ফেব্রয়ারি দুপুরে সদর ইউনিয়নের ঈদগাহ্’র সীমান্ত পিলার ৪৪৩/১৩ এস হতে ভারতের ১৭৬ বিবেকানন্দ বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধাওয়াসহ সতর্কপূর্বক ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।
এ কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ডাকবাংলো পিকনিক কর্ণার হতে পুরাতন বাজার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ৪টি গ্রামের ২ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও প্রায় ৭শ একর চা বাগান, আম বাগানসহ ফসলি জমি রক্ষার্থে গত ৯ মার্চ পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠি প্রদান করেন নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা।
এব্যাপারে পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, ডাকবাংলো থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর রক্ষার্থে ব্লক নির্মাণ করে প্রতিরোধ করছি। কিন্তু পাথর উত্তোলনের কারণে এসব স্থাপনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়। এ জন্য তড়িৎভাবে সার্ভে টিম পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। এ বিষয়ে ইউএনওর সাথে কথা হয়েছে।
প্রশাসনের এ আদেশ বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বিজিবির কার্যকর ভূমিকা প্রধান বলে এলাকার সচেতনমহল মনে করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড বিজিবির তেঁতুলিয়া কোম্পানি সদরের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তারা প্রশাসনের কোন নির্দেশনা পায়নি বলে জানাযায়।
এ ব্যাপারে সদর বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার মো: মোতালেব হোসেন জানান,চিঠিপত্র পায়নী। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর জানান, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজিবির ক্যাম্পের চিঠি পাঠানো হয়ে বিজিবির সদর কোম্পানীর সুবেদার তা গ্রহণ করেননি। পরে তাকে হোয়াটঅ্যাপসে মেসেজে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন